শিরোনাম

লালমনিরহাট, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : উত্তরাঞ্চলের প্রাণরেখা তিস্তা নদী বর্তমানে সংকটময় অবস্থার মুখোমুখি। এজন্য তিস্তা নদী রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার। নদীর ধারাবাহিক ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে আবাদি জমি ও জনবসতি। বিপন্ন হচ্ছে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর) এবং তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বাসস-এর সঙ্গে তিস্তা নদী নিয়ে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে সারাদেশ জাগ্রত হয়েছে। এটি শুধু আমাদের দাবি নয়, দেশের সব শ্রেণির মানুষ এ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
তিস্তার অতীতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এক সময় তিস্তা ছিল তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবনের উৎস— ঘরে ধান, পুকুরে মাছ, গোয়ালে গরু। এখন সেখানে শুধু হাহাকার।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ২ কোটিরও বেশি মানুষ বহু বছর ধরে তিস্তা মহাপরিকল্পনার দাবি জানিয়ে আসছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় দেখা দিয়েছে পানির সংকট, ফসলের ক্ষতি এবং জীবিকার অনিশ্চয়তা।
এক প্রশ্নের জবাবে দুলু বলেন, তিস্তা সংকট সমাধানে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। মাঠপর্যায়ে মানুষকে সচেতন করছি। পাশাপাশি অনেক সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনও আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। আমাদের লক্ষ্য একটাই— তিস্তা নদীকে রক্ষা করা এবং দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করা।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে দলটির পরিকল্পনা কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিস্তা নদী সংক্রান্ত বিষয়গুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। উত্তরাঞ্চলের মানুষের দাবি তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে, তিস্তা নদীকে বাঁচানো দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তিস্তা পরিকল্পনা কেন বাস্তবায়ন হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০০১-২০০৬ মেয়াদে তিস্তার অবস্থা এতো ভয়াবহ ছিল না। তখন পানি ছিল, ভাঙনও ছিল সীমিত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভয়াবহ। মাইলের পর মাইল নদীভাঙনে ঘরবাড়ি, আবাদি জমি বিলীন হচ্ছে; হাজারো মানুষ গৃহহীন। তাই এখনই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপযুক্ত সময়।
তিনি বলেন, পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে নদী ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আসবে, নদীর প্রস্থ স্থিতিশীল হবে, এবং কৃষিজমি, ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সুরক্ষিত হবে। ২ কোটিরও বেশি মানুষের জীবন ও জীবিকা উন্নত হবে। কৃষি, মৎস্য এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে।
দুলুর মতে, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নদীর জলজ জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার হবে, পরিবেশের ভারসাম্য ফিরবে, কৃষিভিত্তিক শিল্প, মৎস্যচাষ, ক্ষুদ্র উদ্যোগ, এমনকি পর্যটনেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে, দারিদ্র্য কমবে এবং জীবনমান উন্নত হবে। তিস্তা নদীকে কেন্দ্র করে উত্তরাঞ্চলে একটি নতুন অর্থনৈতিক জাগরণ সৃষ্টি হতে পারে।
ভারত বা অন্য কোনো রাষ্ট্র কি বাধা সৃষ্টি করতে পারে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আশা করি আন্তর্জাতিক ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো আমাদের সার্বভৌম অধিকারকে সম্মান করবে। ভারত কর্তৃক তিস্তাপ্রবাহের নিয়ন্ত্রণ ও একতরফা পানি ব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশ ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। তবে, তিস্তা সম্পূর্ণ আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সরকারের সক্ষমতা ও সদিচ্ছা থাকলে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব। বৈদেশিক জটিলতা মোকাবিলায় সরকারকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। মূল লক্ষ্য হলো— তিস্তা নদীকে রক্ষা করা। উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকা নিরাপদ রাখা।