শিরোনাম
ঢাকা, ২৭ জুন, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাজ্যের এক সংগীত উৎসবে প্রথমবার কেটামিন গ্রহণ করেছিলেন বার্নি ক্যাসারলি। সেই অনুভূতিকে তিনি নিজের ‘নির্বাণ’ বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু পাঁচ বছর পর, মাত্র ২১ বছর বয়সে, প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি, পেছনে রেখে যান শোকসন্তপ্ত পরিবার ও বন্ধুবান্ধব।
‘আমি কখনও কল্পনাও করিনি যে, আমাদের পরিবারের সঙ্গে এমন কিছু ঘটবে,’ বলছিলেন তার মা, ৬৪ বছর বয়সী ডেবোরা ক্যাসারলি। তার ছেলে মারা গিয়েছিল ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে।
কেটামিন এক ধরনের সস্তা মাদক, যা বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার এক ধরনের অনুভূতি দেয়। এটি বর্তমানে যুক্তরাজ্যের তরুণদের মধ্যে ভয়াবহ মাত্রায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা একে ‘মহামারি’ বলেও অভিহিত করেছেন।
লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, চলমান সংকটের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে যুক্তরাজ্য সরকার চলতি বছরের জানুয়ারিতে কেটামিনকে পুনঃশ্রেণিবদ্ধ করার জন্য পরামর্শ চেয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, কেটামিনকে যদি ‘ক্লাস-এ’ মাদকের কাতারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তবে হেরোইন, কোকেন ও একস্টেসির মতোই এর সরবরাহে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
নিয়া ক্যাম্পবেল, লন্ডনের প্রাইরি হাসপাতালের মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বার্নির পরিবারের পাশে রয়েছেন। বার্নির মা বলেন, ‘প্রথমে সে পার্টিতে কেটামিন ব্যবহার করত। পরে সেটা একাকী ব্যবহারে পরিণত হয়- একটি বিষণ্ন, নিঃসঙ্গ অভিজ্ঞতায়।’
পুনর্বাসনে পাঠিয়েও পরিবার তাকে নিরাময় করাতে ব্যর্থ হয়। ব্যথা এতটাই তীব্র ছিল যে, সে দিনে অনেকটা সময় গরম পানিতে গোসল করে কাটাত। ঘুমোতে পারত না, বারবার প্রস্রাবের জন্য জেগে উঠত।
তার মূত্রাশয় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, ডাক্তাররা একে বলেন ‘কেটামিন ব্লাডার’। কেটামিনের রাসায়নিক উপাদান মূত্রাশয়ের কোষ ধ্বংস করে দেয়।
২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল বার্নি বলেছিল: ‘মা, যদি এটাকেই বেঁচে থাকা বলে, তাহলে আমি বাঁচতে চাই না।’ পরদিন সকালে মা তাকে মৃত অবস্থায় খুঁজে পান।
১৯৬২ সালে আবিষ্কৃত কেটামিন মূলত একটি অ্যানেসথেটিক ও পশুরোগ নিরাময়ের ওষুধ। তবে এর ‘বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার’ প্রভাব অনেক তরুণকে আকৃষ্ট করে।
অনেকেই এর চরম পর্যায়ের প্রভাব ‘কে হোল’ বলে উল্লেখ করেন, যেখানে ব্যবহারকারী প্রায় অচেতন হয়ে পড়েন।
২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত, ১৬ থেকে ৫৯ বছর বয়সী প্রায় ২ লাখ ৬৯ হাজার মানুষ কেটামিন ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন। ১৬-২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে গত এক দশকে এর ব্যবহার বেড়েছে ২৩১ শতাংশ। শুধু ২০২৩ সালেই কেটামিন-সংশ্লিষ্ট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫৩ জন।
লন্ডনের এক মাদক বিক্রেতা (ছদ্মনামে লেইডেন) বলেন, ‘এখন এটা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এটা সস্তা এবং বিক্রেতারা তরুণদের বিক্রি করতেও পিছপা হন না।’ কেটামিনের দাম প্রতি গ্রাম ২০ থেকে ৩০ পাউন্ড, যেখানে কোকেনের দাম প্রায় ১০০ পাউন্ড।
তবে অন্যদিকে কিছু চিকিৎসক ও থেরাপিস্ট নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কেটামিন ব্যবহার করে বিষণ্নতা ও মানসিক ট্রমার চিকিৎসা করছেন।
লন্ডনের এক সাইকেডেলিক থেরাপি সেন্টারের দম্পতি থেরাপিস্ট লুসি ও অ্যালেক্স দা সিলভা কেটামিন লজেঞ্জ আকারে চিকিৎসায় ব্যবহার করেন।
লুসি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে এর চিকিৎসাগুণ রয়েছে, এটা মানুষকে সুস্থ করে তুলতে পারে।’ তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘স্ট্রিট কেটামিনের বিপদ ও মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সচেতনতা জরুরি।’