বাসস
  ২০ জুন ২০২৫, ১০:১৮

আর্কটিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাড়ছে পিটল্যান্ড, কার্বন শোষণে সাময়িক আশা

ঢাকা, ২০ জুন, ২০২৫ (বাসস) : উত্তর মেরু অঞ্চলের পিটল্যান্ড বা জলাভূমি ক্রমে সম্প্রসারিত হচ্ছে জলবায়ু উষ্ণায়নের কারণে—বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটাই দেখা গেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এটি আপাতত বৈশ্বিক উষ্ণতা কিছুটা কমাতে সাহায্য করলেও ভবিষ্যতে উল্টো প্রভাব ফেলতে পারে।

পিটল্যান্ড বা জৈব জলাভূমি হলো ভূমির সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক কার্বন আধার বা ভাণ্ডার, যা বিশ্বের সব বন একত্রে যত কার্বন ধরে রাখতে পারে, তার দ্বিগুণ কার্বন ধারণ করে। এগুলো মূলত আংশিকভাবে পচে যাওয়া উদ্ভিজ্জ উপাদান দিয়ে গঠিত এবং মাটির নিচে পানিযুক্ত অবস্থায় কার্বন আটকে রাখে।

পৃথিবীর মাত্র তিন শতাংশ ভূখণ্ডে এ ধরনের জলাভূমি থাকলেও এদের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এখন পর্যন্ত ধরা হতো, উত্তরমেরু অঞ্চলে উদ্ভিদের কম উপস্থিতির কারণে এই পিটল্যান্ড গঠন কঠিন।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর্কটিকে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে উদ্ভিদ বৃদ্ধির পরিবেশ উন্নত হয়েছে, যা অঞ্চলটিকে 'সবুজতর' করে তুলছে বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে।

প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, ড্রোন, স্যাটেলাইট ও মাঠপর্যায়ের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এক আন্তর্জাতিক গবেষকদল ইউরোপীয় ও কানাডিয়ান আর্কটিক অঞ্চলের পিটল্যান্ড পর্যবেক্ষণ করে জানতে পেরেছেন, গত ৪০ বছরে এসব পিটল্যান্ডের পার্শ্বিক সম্প্রসারণ ঘটেছে।

কানাডার মন্ট্রিয়ালের কুইবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষণার সহ-লেখক মিশেল গারনো বলেন, 'পারমাফ্রস্ট (চিরতুষার) কিছুটা গলে পানি সরবরাহ করে, এতে উদ্ভিদ বৃদ্ধি পায় এবং পৃষ্ঠভূমিতে সবুজায়ন ঘটে। আমরা স্পষ্টভাবে পাশের জমিতে পিটল্যান্ড ছড়িয়ে পড়তে দেখেছি।'

সবচেয়ে বড় পরিবর্তন দেখা গেছে নরওয়ের স্বালবার্ড দ্বীপপুঞ্জে, যেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।

গারনো বলেন, 'তিন দশক আগে যেখানে গাছপালা ছিল না, এখন সেসব জায়গা সক্রিয়ভাবে কার্বন শোষণ করছে।'

তবে কমিউনিকেশনস আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্ট  জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটি সতর্ক করে বলেছে, ভবিষ্যতে এই পিটল্যান্ডগুলো উল্টো কার্বনের উৎসে পরিণত হতে পারে, কারণ তাপমাত্রা বাড়ার ফলে মাটি শুকিয়ে যাবে এবং পারমাফ্রস্ট পুরোপুরি গলে যাবে।

এ ছাড়া বনে দাবানলের ঝুঁকিও রয়েছে, যা একবারেই বিপুল পরিমাণে কার্বন বাতাসে ছড়িয়ে দিতে পারে।

গবেষণার আরেক সহ-লেখক এবং এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কারেন অ্যান্ডারসন বলেন, 'স্বল্পমেয়াদে পিটল্যান্ডের সম্প্রসারণ আর্কটিকে বড় ধরনের কার্বন শোষণকারী অঞ্চলে রূপান্তর করছে।'

তিনি বলেন, 'কিন্তু বিশেষত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এবং দাবানলের মতো ঘটনার ফলে ভবিষ্যতে তা আবার পাল্টে যেতে পারে।'

পিটল্যান্ড সম্প্রসারিত হওয়ার ফলে মিথেন গ্যাসও নিঃসৃত হয়, যা কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়ে অনেক বেশি উত্তাপ ধরে রাখে। যদিও সময়ের সঙ্গে মিথেন নিঃসরণ কমে আসে।

অ্যান্ডারসন বলেন, 'আমাদের গবেষণাটি কিছু আশার সংবাদ দিলেও এটি কোনোভাবেই বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দেয় না।'