শিরোনাম
ঢাকা, ২৭ মে, ২০২৫ (বাসস/এএফপি) - কানস চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা পুরস্কার জিতে দেশে ফিরে নায়কের মতো সংবর্ধনা পেয়েছেন ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতা জাফর পানাহি। সোমবার ভোরে তেহরানে পৌঁছালে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, উৎসাহী সমর্থকেরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করছেন, করছেন করতালি ও স্লোগান।
প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, দীর্ঘ সময় বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কবলে থেকে গোপনে চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং কারাদণ্ড ভোগ করার পর এবার প্রথমবারের মতো ফ্রান্সের উৎসবে সরাসরি অংশ নেন পানাহি। তার সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ এর জন্য তিনি উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার পাম দ'ওর জিতে নেন।
অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছিলেন, দেশে ফেরার পর পানাহি হয়তো সরকারের রোষানলে পড়তে পারেন। তবে তিনি নিরাপদেই তেহরানের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন, যার নামকরণ করা হয়েছে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনির নামে।
ফরাসি প্রযোজক ফিলিপ মার্তিন এএফপিকে জানান, ‘তিনি আজ সকালে তেহরানে পৌঁছেছেন’ এবং ‘নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন।’
মার্তিন আরও জানান, ‘তিনি জানতে পেরেছেন যে সিডনির একটি উৎসবে অংশ নিতে আগামী দশ দিনের মধ্যেই তার ভিসা অনুমোদিত হয়েছে।’
তেহরানের বিমানবন্দরে পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ পার হয়ে লাগেজ সংগ্রহস্থলে পৌঁছলে পানাহিকে অভ্যর্থনা জানান উপস্থিত সমর্থকেরা। সামাজিক মাধ্যমে দাদবান নামের একটি আইনি পর্যবেক্ষণ সংস্থা প্রকাশিত ভিডিওতে এই দৃশ্য দেখা যায়।
একজনকে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’ স্লোগান দিতে শোনা যায়—২০২২-২৩ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের এই মূলমন্ত্রটি তখন তেহরান কাঁপিয়ে দিয়েছিল।
বিমানবন্দর ত্যাগের সময় তিনি প্রায় এক ডজন সমর্থকের কাছ থেকে ফুল ও আলিঙ্গন পান। ইরানি পরিচালক মেহদি নাদেরির ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা ভিডিও ও ইরান ইন্টারন্যাশনাল চ্যানেলে প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, পানাহি হাসিমুখে হাত নেড়ে অভিবাদন জানাচ্ছেন। নাদেরি লেখেন, ‘ইরানের স্বাধীন চলচ্চিত্রে নতুন রক্তসঞ্চার।’
‘প্রতিরোধের প্রকাশ’
বিমানবন্দরের উষ্ণ অভ্যর্থনার বিপরীতে ইরানি রাষ্ট্রীয় মিডিয়া ও সরকারি মহলের প্রতিক্রিয়া ছিল ঠান্ডা। প্রয়াত আব্বাস কিয়ারোস্তামির ‘দ্য টেস্ট অফ চেরি’ ১৯৯৭ সালে পাম দ'ওর জয়ের পর এবারই প্রথম কোনো ইরানি নির্মাতা এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পেলেন, কিন্তু রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ-সহ ইরানি মিডিয়ায় এই সাফল্যের প্রচার ছিল অত্যন্ত সীমিত।
এমনকি এই সাফল্যকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপড়েনও তৈরি হয়েছে। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্টে পানাহির জয়কে ‘ইরানি শাসনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের একটি প্রকাশ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এর প্রতিবাদে তেহরান ফ্রান্সের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে তলব করে তার বক্তব্যকে ‘অপমানজনক’ বলে আখ্যায়িত করে।
ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাকায়ি বলেন, ‘আমি শিল্পবোদ্ধা নই, তবে আমরা বিশ্বাস করি শিল্প ও সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়।’
পানাহির চলচ্চিত্রটি স্পষ্টভাবেই রাজনৈতিক, যেখানে পাঁচজন ইরানি একজন ব্যক্তিকে মুখোমুখি হয়, যাকে তারা বিশ্বাস করে যে তাদের কারাগারে নির্যাতন করেছিল। এই গল্প পানাহির নিজের বন্দিজীবনের অনুপ্রেরণায় নির্মিত।
পুরস্কার গ্রহণের পর পানাহি বলেন, ‘আসুন সব সমস্যা ও মতভেদ পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাই। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—আমাদের দেশ এবং দেশের স্বাধীনতা।’