বাসস
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:১৮
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৩২

রাজধানীতে বিরল অ্যামাজন ওয়াটার লিলির অপরূপ সৌন্দর্য

অ্যামাজন ওয়াটার লিলি। ছবি : বাসস

মাহামুদুর রহমান নাযীদ

ঢাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়ারী এলাকার ঐতিহাসিক বলধা গার্ডেনে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিস্ময়কর জলজ উদ্ভিদ ‘অ্যামাজন ওয়াটার লিলি’। বৈজ্ঞানিক নাম ভিক্টোরিয়া অ্যামাজোনিকা।

রানি ভিক্টোরিয়ার নামে নামকরণ করা এই বিরল উদ্ভিদটি দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীর অববাহিকার প্রতীক হিসেবে পরিচিত। গাছটির বিশাল আকৃতির পাতা ও অনন্য ফুল প্রকৃতিপ্রেমীদের নজর কেড়েছে।

গাজীপুরের ভাওয়াল জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ১৯০৯ সালে বলধা গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে সেখানে প্রায় ৮০০ প্রজাতির ১৮ হাজারেরও বেশি দেশি-বিদেশি উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফাইকাস, চিকরাশিয়া, এরিকা পাম্প, রংগন, নাগেশ্বর, রস কাউ, গার্ডেনিয়া, ভূজ্জপত্র, বকুল, ক্যামেলিয়া, আশোক, উইপিং দেবদারুসহ নানা দেশি-বিদেশি গাছ। তবে প্রকৃতিপ্রেমীদের নজর কেড়েছে সৌন্দর্যবর্ধনকারী লতানো গাছ—আমাজন ওয়াটার লিলি।
গাছটির রাইজোম মোটা, পত্রবৃত্ত ঘন ও কাঁটাযুক্ত। পাতা অড়াখাড়িআবে ১২০-১৫০ সেমি গেলাকার এবং অখণ্ড। পাতার উপরের পৃষ্ঠ সবুজ ও মসৃণ। পাতার আকার বড় থালার মতো, যা এক নজরে দর্শককে মুগ্ধ করে। লিলির ফুল সাদা রঙের এবং সাধারণত রাত্রের বেলায় ফুটে; এর ফলের বীজ থেকে চারা উত্তোলন করা সম্ভব।

গাছটি সাধারণত মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর গুয়েতেমালা ও দক্ষিণ ব্রাজিল অঞ্চলে জন্মায়। বিশাল পাতার কারণে এটি আমাজন অঞ্চলের একটি প্রতীক হিসেবে পরিচিত। পাতার নিচে ধারালো কাঁটা থাকে যা জলজ প্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এছাড়া পাতার মজবুত কাঠামোর কারণে ছোট শিশু পর্যন্ত এর ওপর দাঁড়াতে পারে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার আহম্মেদ বলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম বিস্ময়কর জলজ উদ্ভিদ হল ভিক্টোরিয়া অ্যামাজোনিকা। এর বিশাল পাতা, মজবুত কাঠামো এবং ফুলের রঙ পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য শুধু উদ্ভিদবিদদের নয়, প্রকৃতিপ্রেমীদেরও আকৃষ্ট করে। পাতাগুলো জলজ প্রাণীদের আশ্রয়স্থল এবং প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এই জলজ উদ্ভিদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর বিশাল আকারের পাতা। গোলাকার পত্রের ব্যাস প্রায় ৩ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে, যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভাসমান পাতা হিসেবে পরিচিত। মজবুত কাঠামো এবং নিচের দিকে পশুপেশী সদৃশ গঠন পাতাকে সহজে ভাসিয়ে রাখে, এমনকি একটি শিশু দাঁড়ালেও তা ডুবে যায় না। পাতার নিচের ধারালো কাঁটা মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।’

অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার বলেন, এই জলজ উদ্ভিদ শুধু নান্দনিক নয়, পরিবেশগত গুরুত্বেও অনন্য। এর বিশাল পাতা জলজ প্রাণীদের জন্য আশ্রয়স্থল ও প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করে। ফুলগুলো রাতের বেলা সাদা ও সুগন্ধযুক্ত। তবে পরের রাতেই বেগুনি-লাল রঙে রূপান্তরিত হয়ে গন্ধ হারায়। সাংস্কৃতিক দিক থেকেও এর মূল্য অসাধারণ। 

যেমন গায়ানার জাতীয় প্রতীকে এই ফুলের চিত্র স্থান পেয়েছে। প্রকৃতি ও সংস্কৃতির এক অপূর্ব সমন্বয় হিসেবে এই ‘আমাজন ওয়াটার লিলি’ পৃথিবীর উদ্ভিদরাজ্যের অনন্য নিদর্শন।