বাসস
  ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৩৭

রংপুর চিড়িয়াখানায় বাঘের দুই শাবককে দেখতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

রংপুর চিড়িয়াখানায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার রোমিও জুলিয়েট দম্পতির ঘরে জন্ম নেওয়া দুই শাবক, যাদের নাম রাখা হয়েছে রাজা-রানী। ছবি : বাসস

।।রেজাউল করিম মানিক।।

রংপুর, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস): রংপুর চিড়িয়াখানায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার রোমিও জুলিয়েট দম্পতির ঘরে জন্ম নেওয়া দুই শাবককে দেখতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। যাদের নাম রাখা হয়েছে রাজা-রানী। জন্মের তিন মাস পর আনুষ্ঠানিকভাবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। আর এই দুই শাবককে দেখতে প্রতিদিনই বাড়ছে দর্শনার্থীদের ভিড়।

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, দেশের দুটি সরকারি চিড়িয়াখানার মধ্যে রংপুর চিড়িয়াখানাটি অন্যতম। এখানে প্রজননের জন্য আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির প্রাণীর বংশ বৃদ্ধি হয় এ রংপুর চিড়িয়াখানায়। রংপুর চিড়িয়াখানায় বাঘ, ভালুক, সিংহ, হরিণ ও জলহস্তিসহ নানা প্রজাতির পাখির বংশবৃদ্ধি হয়েছে ইতোমধ্যেই।

কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর চিড়িয়াখানা ১৯৯১ সালে উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকটি শাবক জন্ম নিয়েছে। জন্ম নেওয়া শাবকদের ঢাকা চিড়িয়াখানাসহ বেশ কয়েকটি দেশে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার রোমিও জুলিয়েট দম্পতির ঘর আলো করে তিন মাস আগে জন্ম নেওয়া শাবক দুটির নাম রাখা হয়েছে রাজা ও রানী। জন্মের পর থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দুই শাবককে বিশেষ যত্নের সাথে দেখভাল করে আসছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। শাবক দুটি যাতে নিরিবিলিভাবে মায়ের দুগ্ধ পান করতে পারে সে জন্য মা জুলিয়েটের সাথে আলাদা করে রাখা হয়। বাবা রোমিওকে আলাদাভাবে রাখা হয় গত তিন মাস ধরে। তাদের খুবই যত্ন এবং গুরুত্বের সাথে চিকিৎসা সেবাও প্রদান করা হচ্ছে। এভাবেই নিবিড় পরিচর্যার মধ্য দিয়ে ৩ মাস অতিবাহিত হবার পর গত ২১ ডিসেম্বর (রোববার) থেকে শাবক দুটিকে তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে একসাথে থাকতে দেওয়া হয়।

এদিকে, রয়েল বেঙ্গল টাইগার রোমিও জুলিয়েট দম্পতির দুই শাবককে দেখতে রংপুর চিড়িয়াখানায় বিভাগের বিভিন্ন জেলার দর্শনার্থীরা শীত উপেক্ষা করে নিজেদের পরিবারেরসহ শিশু সন্তানদের নিয়ে এসেছে শাবক দু’টিকে একনজর দেখতে। 

শাবক দুটির জন্য আগের থেকে কয়েকগুণ বেড়েছে দর্শনার্থী। বড় খাঁচায় বাবা মাকে একসঙ্গে পেয়ে রাজা-রানীও বেশ আনন্দিত। শাবক দুটির ছোটাছুটি ও মা বাবার সাথে খুনসুটি বেশ উপভোগ করছে দর্শনার্থীরা। বাঘের শাবক দেখতে এসে খুশি শিশুরাও। নাদুস-নুদুস শাবক দুটি বিনোদনের যেন খোরাক হয়ে উঠেছে দর্শনার্থীদের।

লালমনিরহাট থেকে বাঘের শাবক দেখতে আসা শাহিনা সুলতানা জানান, তিনি তার দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে বাঘের শাবক দুটিকে দেখতে এসেছেন। খাঁচার মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দুটি শাবক দেখে খুবই ভালো লাগছে বলে জানান তিনি। ছেলেমেয়েরাও খুশি। তবে শাবক দুটিকে ভালোভাবে লালন পালন, পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করে রংপুরেই রাখবে কর্তৃপক্ষ এমন অনুরোধও করেছেন তিনি। একইভাবে কুড়িগ্রামের চিলমারী থেকে মতিয়ার রহমান এসেছেন শাবক দুটিকে দেখতে একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে। বাঘের শাবক দেখে খুবই আনন্দিত তারা।

রংপুর নগরীর শালবন এলাকা থেকে আসা হুমায়ুন কবীর মানিক পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাঘের শাবক দুটি দেখে ভালোই লাগছে বলে জানান তিনি। শাবক দুটির খুনসুটি তাদের বেশি ভালো লাগছে বলেও জানান। হুমায়ুন কবীর মানিকের মতো শাবক দুটিকে দেখতে এসেছেন ভাতিজা ও ভাতিজিকে নিয়ে কামরুল হাসান টিটু। তিনিও আনন্দিত শাবক দুটিকে দেখে।

সরেজমিনে রংপুর চিড়িয়াখানার ইজারাদার হজরত আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আল্লাহর অশেষ রহমতে বাঘের শাবক দুটি ভালো আছে। তাদের বিশেষ যত্ন নেওয়া হচ্ছে। বাঘের শাবক দুটিকে দেখার জন্য প্রচণ্ড শীতকে উপেক্ষা করে দর্শনার্থীরা আসছেন। দর্শনার্থীদের জন্য পশু পাখি দিয়ে কীভাবে আরো সমৃদ্ধ করা যায়, সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে কিউরেটর। আশা করছি অল্প দিনের মধ্যে জিরাফ আনা হবে এ চিড়িয়াখানায়।

রংপুর চিড়িয়াখানার চিকিৎসক ডা. শাহাদত হোসেন বাসসকে বলেন, রয়েল বেঙ্গল টাইগার দম্পতি এর আগেও দুবার গর্ভবতী হয়েছিল, কিন্তু মিসকারেজ হওয়ায় বাচ্চা নষ্ট হয়েছে। এ জন্য এবারে বিশেষভাবে যত্ন নেওয়া হয়। নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়। যার ফলে দুটি শাবকের জন্ম দিয়েছে এ দম্পতি। আলহামদুলিল্লাহ শাবক দুটি ভালো আছে।

শীতকাল হওয়ায় আলাদা করে যত্ন নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, রংপুর চিড়িয়াখানাটি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও তা ১৯৯১ সালে উন্মুক্ত করা হয়। উন্মুক্তের সময় ২৩ প্রজাতির প্রাণী প্রদর্শন করা হয়েছিল। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ২৭ প্রজাতির প্রায় আড়াইশ প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সুন্দরবনের বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, গন্ডার, জলহস্তী, হরিণ, বানর, চিতাবাঘ, ভালুক, কুমির, অজগর, কচ্ছপ, ময়না, টিয়া, ময়ূর, কাকাতুয়া, কবুতর ও বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।