বাসস
  ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:১৯

তীব্র শীতে ময়মনসিংহে জনজীবন স্থবির

ছবি : বাসস

আব্দুল কাইয়ুম

ময়মনসিংহ, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): ময়মনসিংহে জেঁকে বসেছে তীব্র ও কনকনে শীত। জেলার ওপর দিয়ে গত দুই থেকে তিন দিন ধরে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। হিমেল হাওয়া, ঘন কুয়াশা ও সূর্যহীন আকাশে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দিন ময়মনসিংহে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ শুক্রবার জেলায় তাপমাত্রা সামান্য বেড়ে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। এ সময় উত্তর দিক থেকে ঘণ্টায় প্রায় ৭ কিলোমিটার বেগে হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে, যা শীতের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এদিকে গত দুই দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় দিনের বেলাতেও শীতের দাপট কমছে না জেলাজুড়ে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকছে, আর রাত নামলেই কুয়াশার ঘনত্ব এতটাই বেড়ে যাচ্ছে যে দূরের কোনো বস্তু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। ফলে সড়ক ও মহাসড়কে দিনের বেলাতেই হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীবাহী বাস ও মালবাহী ট্রাকগুলোকে।

বিশেষ করে জেলার সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় শীতের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি। এসব এলাকায় শিশু, নারী ও বয়োবৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি কাবু হয়ে পড়ছেন। হাড়কাঁপানো ঠান্ডা আর হিমেল বাতাসে সন্ধ্যার পর থেকেই জনপদ কার্যত নিস্তব্ধ হয়ে যায়। রাত পেরিয়ে ভোর গওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের তীব্রতা যেন আরও বেড়ে যায় বলে জানান স্থানীয়রা।

শীতের প্রভাবে নিম্নআয়ের মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। কনকনে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে অনেকেই খড়-কুটা ও আবর্জনা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষরা ঠান্ডার কারণে নিয়মিত কাজ করতে না পেরে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

ময়মনসিংহ নগরীর জয়নুল আবেদীন পার্ক এলাকায় সকালে শীতের পিঠা বিক্রি করা রহিমা খাতুন বলেন, দুই দিন ধরে বাতাস আর কুয়াশা খুব বেশি। আগে যতো মানুষ সকালে হাঁটতে আসতো, এখন তার অর্ধেকও আসে না। তাই পিঠা বিক্রিও কমে গেছে।

শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা জানান, আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি।

এদিকে কুয়াশার কারণে জীবিকার ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়েছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মোফাখখারুল আলম বলেন, রাতে কুয়াশা এত বেশি থাকে যে সন্ধ্যার পর আর গাড়ি চালানো নিরাপদ মনে হয় না। তাই বাধ্য হয়ে আগেভাগেই ঘরে ফিরে যেতে হয়।

সব মিলিয়ে শৈত্যপ্রবাহ ও কনকনে শীতে ময়মনসিংহের জনজীবন এখন স্থবির। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।