শিরোনাম

ঢাকা, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): দেশব্যাপী প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবাসমূহ জোরদার করতে সরকার ‘ক্লাইমেট রেসপন্সিভ রিপ্রোডাকটিভ হেলথ অ্যান্ড পপুলেশন সার্ভিসেস ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড সিস্টেম স্ট্রেনদেনিং প্রজেক্ট ফর রেজাল্ট’ শীর্ষক একটি বড় উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর (ডিজিএফপি) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এর লক্ষ্য হলো দেশব্যাপী জলবায়ুু সহনশীল, ন্যায়সঙ্গত ও উচ্চমানের পরিষেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ কর্তৃক সুপারিশকৃত এ প্রকল্প সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪,০৬২.০৭ কোটি টাকা।
মোট বরাদ্দের মধ্যে ২,৭৬৩.০২ কোটি টাকা আসবে সরকারি তহবিল থেকে, আর ১,২৯৯.০৫ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক। চার বছর মেয়াদি এ প্রকল্প ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত চলবে এবং এতে বাংলাদেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, স্বাস্থ্য খাত দীর্ঘদিনের সেক্টর-প্রোগ্রাম-ভিত্তিক পদ্ধতি থেকে প্রকল্প-ভিত্তিক উন্নয়ন কাঠামোয় রূপান্তরের সময়ে এ প্রকল্পটি নকশা করা হয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে সরকার প্রস্তাবিত ৫ম স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচি (৫ম এইচপিএনএসপি) অনুমোদন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে কিছু জরুরি সেবা ক্ষেত্রকে তাৎক্ষণিক ও কাঠামোবদ্ধ প্রকল্প-ভিত্তিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নতুন উদ্যোগটি সেই কৌশলগত পরিবর্তনের অংশ।
একনেক সভার পর উদ্যোগটি সম্পর্কে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অবশেষে একনেক সভায় স্বাস্থ্য খাতের বেশ কয়েকটি প্রকল্প এসেছে, যেগুলো বড় প্রকল্প এবং বহু-বছর মেয়াদি।
তিনি বলেন, গত দুই-তিন বছর, বস্তুত বহু বছর ধরেই স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ খুবই কম ছিল। আর উপজেলা পর্যায়, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা জেলা হাসপাতালগুলোতে সেবার মান তেমন সন্তোষজনক ছিল না। এজন্যই এ ধরনের প্রকল্প বিবেচনা করা হচ্ছে।
প্রকল্পটি জলবায়ু-সহনশীল ব্যবস্থা ও উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রজনন স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা সেবা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রকল্পের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা শক্তিশালী করা। বিশেষ করে মাতৃস্বাস্থ্য, নবজাতক স্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় যাতে মান, দক্ষতা এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত হয়।
এ প্রকল্পের একটি মূল উপাদান হলো পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের (ডিজিএফপি) আওতাধীন প্রতিষ্ঠানে জলবায়ুু সহনশীল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা (পিএইচসি) সম্প্রসারণ। এর মধ্যে রয়েছে নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য সেবা, নবজাতক পরিচর্যা, পরিবার পরিকল্পনা সমাধান এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্যতা ও ব্যবহার উন্নত করা, যাতে জলবায়ুজনিত বাধা-বিঘ্নের সময়েও কমিউনিটি সুরক্ষিত থাকে।
আরেকটি লক্ষ্য হলো কর্মী উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো প্রশিক্ষিত ধাত্রীদের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করা, যাতে গ্রামীণ ও জলবায়ুুঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দক্ষ সেবা প্রদানকারীর ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ হয়।
এছাড়া, একটি কার্যকর রেফারেল ব্যবস্থা চালু করা হবে, যাতে উচ্চতর সেবার প্রয়োজনীয় রোগীদের সময়মতো স্থানান্তর নিশ্চিত হয়। উদ্যোগটিতে একটি কাঠামোবদ্ধ অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা (জিআরএম) সক্রিয় করবে, যা ডিজিএফপির কার্যক্রমে সাড়াদানের ক্ষমতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা উন্নত করবে।
চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ডিজিএফপি’র জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জলবায়ু-সহনশীল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে অবকাঠামো, সরঞ্জাম, প্রযুক্তি এবং মানবসম্পদ একীভূত থাকবে।
বাসসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি আধুনিক গর্ভনিরোধক, ওষুধ এবং টিকা সংগ্রহে সহায়তা করবে, যাতে পরিবার পরিকল্পনা সেবার নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত হয়।
তিনি বলেন, এটি উন্নত চিকিৎসা ও শল্যচিকিৎসা সরঞ্জাম এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহে সহায়তা করবে। এছাড়া তথ্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে কম্পিউটার সফটওয়্যার ও ডিজিটাল টুলে বিনিয়োগ করা হবে। এর প্রকল্পের আওতায় কারিগরি ও কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যকর্মী, ধাত্রী এবং সেবা প্রদানকারীদের ব্যাপক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটির জাতীয় গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে। এর ভূমিকা তুলে ধরে বলেছে, আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা সেবায় সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
কর্মকর্তারা বলেছেন, জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো, দক্ষ জনবল এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম দুর্বলতা হ্রাস এবং স্বাস্থ্য ফলাফল উন্নত করতে অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য এটি খুবই জরুরি।
২০২৫ সালের ২৯ মে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় কমিশন প্রকল্পটি একনেক অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করে। সভায় উল্লেখ করা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পসমূহ জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সঙ্গে এবং প্রজনন স্বাস্থ্য ও জলবায়ু অভিযোজন বিষয়ে বৈশ্বিক অঙ্গীকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবার স্থিতিশীলতা, সক্ষমতা এবং বিস্তৃতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।