বাসস
  ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:৪৯

সাম্প্রতিক সংস্কারগুলো আস্থা ফিরিয়ে এনেছে: ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। ফাইল ছবি

ঢাকা, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী আজ বলেছেন, সাম্প্রতিক সংস্কার-বিনিময় হার স্থিতিশীলতা, কম মুদ্রাস্ফীতি, শক্তিশালী রেমিট্যান্স চ্যানেল এবং উন্নত আর্থিক শৃঙ্খলা-দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তিতে আস্থা ফিরিয়ে এনেছে।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, সংস্কারের কোনো নির্দিষ্ট ক্রম নেই।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ এবং ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস বাংলাদেশ প্রগ্রেস রিপোর্ট ২০২৫’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, নানা বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে স্থিতিশীলতা এনেছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশের আসন্ন এলডিসি থেকে উত্তরণ অবশ্যই জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা, কাঠামোগত সংস্কার এবং দোহা কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেন যে, বিভিন্ন ধাক্কা সত্ত্বেও বাংলাদেশ নেতিবাচক জিডিপি প্রবৃদ্ধি এড়াতে সক্ষম হয়েছে- যা একই ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতার শিকার হওয়া কিছু দেশের অভিজ্ঞতার চেয়ে আলাদা।

বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যদিও ভিত্তি তুলনামূলকভাবে এখনও ছোট। তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো  বড় অংকের এফডিআই আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে, কারণ তারা অনেক আগে থেকেই বাণিজ্য চুক্তি এবং আঞ্চলিক সংহতি গড়ে তুলেছিল। বাংলাদেশকে এখন একই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের ওপর মনোযোগ দিতে হবে।’

ড. আনিসুজ্জামান দীর্ঘদিনের দাতা-নির্ভর উন্নয়ন প্রকল্প এবং সক্ষমতা তৈরির কর্মসূচির সমস্যার ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ‘পঞ্চাশ বছর ধরে, আমাদের সক্ষমতা তৈরির ঋণগুলো প্রয়োজনীয় দক্ষতা পুরোপুরি তৈরি করতে পারেনি। এমনকি প্রকল্প এবং টেন্ডার ডকুমেন্টগুলোও প্রায়শই বাইরের পরামর্শদাতাদের দ্বারা তৈরি করা হয়। টেকসই উন্নয়ন চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া আবশ্যক।’

তিনি দারিদ্র্যের প্রবণতা বিশ্লেষণে অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী জিডিপি কমলে, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেলে এবং বিনিময় হার ভেঙে পড়লে দারিদ্র্য বাড়ে। সম্প্রতি বাংলাদেশে এসব ঘটেনি। তাই ব্যাখ্যা কাঠামোগত হতে হবে, অনুমাননির্ভর নয়।’ প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়কে বড় দুর্বলতা উল্লেখ করে তিনি মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে আরও শক্তিশালী সমন্বয় ও সামঞ্জস্যের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি খাতে মেধাবী মানুষ কাজ করছেন, কিন্তু সমন্বয় ও একীভূতকরণ অনুপস্থিত। কার্যকর নীতি প্রণয়নে পরিকল্পনা, বাজেট, বাণিজ্য ও খাতভিত্তিক কৌশলের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা জরুরি।’

তিনি ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো, ডিজিটাল কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স এবং চট্টগ্রামে নতুন স্ক্যানিং সিস্টেমসহ লজিস্টিক উন্নতির কথা উল্লেখ করেন। তবে তিনি বলেন, ব্যবসার খরচ কমাতে আরও দক্ষতা অর্জন অপরিহার্য।

বিশেষ সহকারী আরও বলেন, ‘সৎ ও প্রমাণভিত্তিক বিতর্ক ঐকমত্য অর্জনের জন্য জরুরি। সংস্কার অব্যাহত রাখতে হবে সমন্বয়, সামঞ্জস্য ও সততার সঙ্গে।’