শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ৭ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী-বোনসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে নিজের মালিকানাধীন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এ মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দুদক-এর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহা. শোয়াইব ইবনে আলম। একই প্রক্রিয়ায় আরও ৪০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এর আগে জাবেদ পরিবারের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা হয়। দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (৫৬), তার স্ত্রী ও ইউসিবিএল-এর সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান (৪৬), বোন রোকসানা জামান চৌধুরী (৫৬) ও আফরোজা জামান চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে। আসামির তালিকায় ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ আরও ২০ জন আছেন।
বাকি আসামিরা হলেন- ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বজল আহমেদ বাবুল, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল এহতেশাম আবদুল মোহাইমিন, সাবেক পরিচালক ইউনুছ আহমদ, এম এ সবুর, আসিফুজ্জামান চৌধুরী, হাজী আবু কালাম, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, রোকসানা জামান চৌধুরী, বশির আহমেদ, সৈয়দ কামরুজ্জামান, মো. শাহ আলম, শরীফ জহির ও ড. সেলিম মাহমুদ।
অন্যান্য আসামিরা হলেন- ব্যাংকটির সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার শ্রাবন্তী মজুমদার, সাবেক এক্সিকিউটিভ অফিসার মুঝায়োনা সিদ্দিকা, সাবেক এভিপি ও ক্রেডিট অফিসার মোহাম্মদ গোলাম রাকিব, সাবেক এফএভিপি ও ম্যানেজার অপারেশন মোসাদ্দেক মো. ইউসুফ, সাবেক এফভিপি ও কারওয়ান বাজার শাখার প্রধান আলমগীর কবির।
নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মালিকের মধ্যে রয়েছেন- প্রগ্রেসিভ ট্রেডিংয়ের মালিক ও আরামিট সিমেন্ট লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক (হিসাব) মোহাম্মদ হোছাইন চৌধুরী, ইম্পেরিয়াল ট্রেডিংয়ের মালিক ও আরামিটের এজিএম মো. আব্দুল আজিজ এবং আরামিট সিমেন্টের পিয়ন মো. ইয়াছিনুর রহমান।
মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পারিবারিক মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার ও কোম্পানি সেক্রেটারি সৈয়দ কামরুজ্জামানের ফুফাত ভাই সৈয়দ নুরুল ইসলামের নামে ‘ক্রিসেন্ট ট্রেডার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলা হয়। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর ইউসিবিএল-এর চট্টগ্রাম নগরীর জুবলি রোড শাখায় একটি চলতি হিসাব খোলা হয়।
নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানটির নামে ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ২৫ কোটি টাকা ‘টাইম লোনের’ আবেদন করা হয়। ব্যাংকের কর্মকর্তারা ঋণ আবেদনকারীর পরিচয়, স্টক, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির মিথ্যা তথ্যে ‘সন্তোষজনক’ প্রতিবেদন দাখিল করে ২৫ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের সুপারিশ করে ৬ ফেব্রুয়ারি তা ব্যাংকের করপোরেট ব্যাংকিং ডিভিশনে পাঠান।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ইউসিবিএলের ‘করপোরেট ব্যাংকিং ডিভিশন ও ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন’র কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটি ওই ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিল।
এর পরও সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মাধ্যমে ‘প্রভাবিত’ হয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ওই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঋণ অনুমোদন করা হয়।
কিন্তু ইউসিবিএল’র করপোরেট ব্যাংকিং ও ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের গঠিত ক্রেডিট কমিটি ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ দেয়। সেই পর্যবেক্ষণ আমলে না নিয়ে ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের ৪৪৭তম বোর্ড সভায় ২৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৩ কোটি টাকা এবং ২০ ফেব্রুয়ারি ১২ কোটি টাকা ঋণ গ্রাহকের হিসেব নম্বরে জমা করা হয়।
আসামিরা অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত করে দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪২০, ৪৬১, ৪৬৮ ও ৪৭১ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪ (২) ও (৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
একই প্রক্রিয়ায় ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবিএল) ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত করে পাচারের অভিযোগে গত ২৪ জুলাই সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রীসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এরপর ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ৩১ জুলাই আরও একটি মামলা হয় জাবেদসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে তার বিরুদ্ধে বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তাকে আর পরবর্তী সরকারে মন্ত্রী হিসেবে দেখা যায়নি।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগমুহূর্তে জাবেদ স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমান বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।