শিরোনাম
ঢাকা, ৬ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : জাতির উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ভাষণে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণাকে ‘ঐতিহাসিক’ অভিহিত করে একে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
আজ বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এ মন্তব্য করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি মনে করে, এই ঐতিহাসিক ঘোষণায় দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠবে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে বিএনপি। একইসঙ্গে একটি কার্যকর জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য বিএনপি সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।’
এই নির্বাচন অতি জরুরি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন এই নির্বাচনটা দেশের জনগণই চায়। জনগণ আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সবচেয়ে বড় প্রহরী হয়ে দাঁড়াবে।’
গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার পরে রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পরে আজ সকালে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপির মহাসচিব। তার সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ।
জুলাই ঘোষণাপত্র বিষয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি এই ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানায়। আমরা বিশ্বাস করি, এতে যেসব রাজনৈতিক অঙ্গীকার করা হয়েছে, তা পালনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি নতুন গণতান্ত্রিক পথে যাত্রা শুরু করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি সত্যিকারের প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকসহ সকল স্তরের জনগণ এই সংগ্রামে অংশ নিয়েছে, শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন ও পঙ্গু হয়েছেন বিএনপি তাদের জানাচ্ছে কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।’
অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘প্রফেসর ইউনূস নিশ্চয়ই এখন পর্যন্ত যতগুলো সকল কাজ করে এসেছেন তাতে করে উনি প্রমাণ করেছেন যে, ভবিষ্যতেও তিনি নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ করার জন্য এমন কিছু করবেন না যা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।'
তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসবেন। আমরা ওয়েটিং এ আছি।’
জুলাই ঘোষণাপত্রের পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ রয়ে গেছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ঘোষণাপত্রে প্রধান উপদেষ্টা পরিষ্কারভাবে বলেছেন, আগামী নির্বাচনের পর গঠিত সংসদই সংবিধান সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যকর করবে। এটি আইন ও সংবিধান অনুযায়ী বৈধ প্রক্রিয়া।’
তিনি বলেন, ‘এর বাইরে অন্য কোনো প্রক্রিয়ার কথা আমাদের জানা নেই। সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনার দ্বিতীয় পর্যায়ে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা ‘জাতীয় সনদ জুলাই-২০২৫’ নামে সংকলিত হবে এবং স্বাক্ষরের জন্য তা সব পক্ষকে দেওয়া হবে। আমরা সেই স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত।’
নির্বাচনের ঘোষণায় কেউ কেউ হতাশ উল্লেখ করে সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া হয়ত তারা এখনো তারা দেয়নি, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হতাশার কথা তারা বলেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে আমরা আশা করব তারা একটি পজেটিভ (ইতিবাচক) দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এই গণতান্ত্রিক পথটাকে পরিষ্কার করবে।’