বাসস
  ০৫ আগস্ট ২০২৫, ২৩:২৭

কিছু মানুষ ও চিহ্নিত রাজনৈতিক দল ছাড়া সকলেই জুলাই মুক্তিযোদ্ধা : আব্দুল্লাহ তাহের

ছবি : বাসস

ঢাকা, ৫ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : দেশের কিছু মানুষ ও চিহ্নিত রাজনৈতিক দল ছাড়া সকলেই জুলাই মুক্তিযোদ্ধা, তাই এ বিষয়ে কোনো বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।

আজ মঙ্গলবার মহাখালী কলেরা হাসপাতালের সামনে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে গণমিছিল পূর্ব বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন  এবং পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

বক্তব্যে ডা. তাহের বলেন, বিগত ১৫ বছর আওয়ামী-বাকশালীরা দেশে অপশাসন-দুঃশাসন চালিয়েছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদেরকে লজ্জাজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। 

তারা আবার দৃশ্যপটে ফিরে আসার জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু বীর জনতা তাদের সে ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হতে দেবে না। যারা নতুন করে স্বৈরাচার হওয়ার চেষ্টা করছেন তাদেরকেও জনগণ কোনোভাবেই মেনে নেবে না।

তিনি দেশ ও জাতিকে নিয়ে জামায়াতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, জামায়াত সত্য, ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে জামায়াত কারো সাথে আপস করবে না বরং দেশে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও তা রক্ষার জন্য সবকিছু করকে। তিনি দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য আগামী নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, গতানুগতিক পদ্ধতির নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য কোন সুফল বয়ে আনবে না। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে প্রায় সকল নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনসহ শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনই নির্বাচন ছিল না। এসব নির্বাচনে ব্যাপক ভিত্তিক রিগিং, গণহারে সিল মারা, কেন্দ্র দখল, ডামি নির্বাচন, ব্যালট ছিনতাই, দিনের ভোট রাতে করাসহ ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূলত, এসব ছিল ভুয়া ও নির্বাচনের নামে প্রহসন। তাই দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি তথা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চালু করতে হবে। এ পদ্ধতি চালু হলে নির্বাচনী অপরাধ থাকবে না, ভোট চুরি ও কেন্দ্র দখল হবে না। থাকবে না টাকার খেলা। মূলত, যাদের প্রয়োজনীয় জনসমর্থন নেই তারাই এ পদ্ধতির বিরোধিতা করছেন। তারা মাস্তানি ও অর্থের বিনিময়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে চান। কিন্তু জনগণ তাদেরকে সে সুযোগ দেবে না। পিআর পদ্ধতি ছাড়া অন্যকোনো পদ্ধতি তারা মেনে নেবে না।

তিনি অতীতের অপশাসন- দুঃশাসনের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা বিএনপি-আওয়ামী লীগের শাসনামল দেখেছি। কিন্তু মানুষের মুক্তি মেলেনি। জনগণ তাদের অধিকারের নিশ্চয়তা পায়নি। আপনারা যদি আমাদেরকে এক বার সুযোগ দেন এবং আমাদের ওপর আস্থা রাখেন, তাহলে আমরা ৫৪ বছরের ইতিহাসই বদলে দেবো। দুর্নীতিবাজদের হয় দুর্নীতি ছাড়বে হবে, নয়তো জেলে যেতে হবে। আমাদের মন্ত্রী-এমপিরা শুল্কমুক্ত গাড়ি কিনবেন না বা সরকারি প্লট গ্রহণ করবেন না।

গণমিছিলটি মহাখালী রেলগেট থেকে শুরু হয়ে মগবাজার চৌরাস্তায় এসে মহানগরী আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, জুলাই সনদ শুধু ঘোষণা নয় বরং তা নির্বাচনের আগেই পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাচন হতে হবে জুলাই সনদের ভিত্তিতেই। নির্বাচনের আগেই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। চাই প্রয়োজনীয় সংস্কারও। অন্যথায় অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দীন মানিক ও ইয়াছিন আরাফাত, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য জিয়াউল হাসান, জামাল উদ্দিন, প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মো. আতাউর রহমান সরকার এবং কর্মপরিষদ সদস্য নাসির উদ্দীনসহ অনেকে।