শিরোনাম
ঢাকা, ৪ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণুবিজ্ঞানী ও প্রফেসর ইমেরিটাস ড. এম শমসের আলীর মৃত্যুতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি) আয়োজিত স্মরণসভা ও দোয়া রোববার রাতে জুম প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতিত্ব করেন বিআইআইটি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিআইআইটি’র মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবদুল আজিজ।
অধ্যাপক আজিজ বলেন, ড. শমসের আলী ছিলেন বিজ্ঞান ও ইসলামের সংযোগ স্থাপনের অগ্রদূত। প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও দূরশিক্ষণ বিস্তার, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন এবং ইসলামিক বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা প্রসারে তিনি অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর লেকচার ও প্রেজেন্টেশন স্টাইল অতুলনীয় ছিল, যা অসংখ্য মানুষকে বিজ্ঞান, শিক্ষা ও মানবিক জ্ঞানের পথে অনুপ্রাণিত করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আমিনুল ইসলাম তালুকদার বলেন, পদার্থবিজ্ঞান ও পরমাণুবিজ্ঞানে তাঁর অবদান অসামান্য। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান-সংস্কৃতি সমন্বয়ে তাঁর লেখালেখি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মসুদ মান্নান, আইইউটি’র প্রফেসর ড. শামসুদ্দীন আহমেদ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন রেজিস্ট্রার ড. আবুল বাশার খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আব্দুল আউয়াল সরকার, তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল, যুক্তরাষ্ট্রের এমএফএনএন’র সিনিয়র অ্যাডভাইজার সাইয়েদ মুক্তাদির, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন, বাউবি’র ড. মো. ইয়াহিয়া এবং গবেষক মীর লুৎফুল কবীর সাদী।
আলোচকরা বলেন, রেডিও ও টেলিভিশনে তিনি বিজ্ঞান ও ধর্মের সম্পর্ক ব্যাখ্যায় অনন্য ছিলেন। কুরআনকে বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা এবং বিজ্ঞানের সাথে কুরআনের সম্পর্ক তুলে ধরা তাঁর বিশেষ দক্ষতা ছিল। জ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজভাবে পৌঁছে দিতে তিনি পথিকৃৎ ছিলেন। আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও বৈশ্বিক শান্তির জন্য কাজ করেছেন এবং অসংখ্য শিক্ষার্থীর মেন্টর হিসেবে আজীবন প্রেরণা জুগিয়েছেন। বক্তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দেশ তাঁর যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারেনি।
অনুষ্ঠানে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ড. আবুল কালাম আজাদ এবং কুরআন তেলাওয়াত করেন আইআইইউএম-এর পিএইচডি গবেষক বেলায়েত হোসেন।
১৯৩৭ সালের ২১ নভেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জন্মগ্রহণকারী ড. শমসের আলী ২০২৫ সালের ২ আগস্ট ঢাকায় ইন্তেকাল করেন (৮৭ বছর বয়সে)। তিনি পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে কর্মজীবন শুরু করে পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য, বিআইআইটি’র প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
‘পবিত্র কোরআনে বৈজ্ঞানিক ইঙ্গিত’, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলিম অবদান’সহ বহু গ্রন্থের রচয়িতা ড. শমসের আলী মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক, জগদীশচন্দ্র বসু স্বর্ণপদক, খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ স্বর্ণপদক, হরিপ্রসন্ন রায় স্বর্ণপদকসহ নানা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন।