বাসস
  ০৪ জুন ২০২৫, ১৮:১৪

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত নেই : বিএনপি

ছবি : বাসস

ঢাকা, ৪ জুন, ২০২৫ (বাসস): রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। 

আজ বুধবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিএনপি সর্বক্ষেত্রে এই সরকারকে সহযোগিতা করছে। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে ন্যূনতম জাতীয় ঐক্যমত্য স্থাপনের মাধ্যমে বাজেট প্রণয়ন করবে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিতে পারতো, বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী, তরুণ প্রতিনিধিরাও অংশ নিতে পারতো। তাহলে বাজেট একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হতো। দেশের বিভিন্ন কণ্ঠের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে পারতো এই বাজেট।’

‘কিন্তু সেই সুযোগটি কাজে লাগানো হয়নি। বাজেট প্রণয়ন একমুখী, অংশগ্রহণহীন ও গতানুগতিক ধারার হতো না, নতুন চিন্তার প্রতিফলন ঘটতো’, বলেন তিনি।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কেমন বাজেট করা হবে এবং কোন কোন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে সেই কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সোমবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার তাঁর এই বাজেট বক্তৃতা সম্প্রচার করে। 

আমীর খসরু বলেন, ‘বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল- বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথনকশা উপস্থাপন। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে শিল্প কারখানা স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার দরকার ছিল। জরুরি ছিল ক্ষুদ্র, কুটির শিল্প ও মাঝারি বিভিন্ন খাতে সহায়তার মাধ্যমে আরও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির। বিশাল সুদের হারের সাথে অতিরিক্ত কর ও শুল্ক শিল্পে বড় চাপ সৃষ্টি করবে।’

বিশেষ করে উৎপাদনশীল খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কর্মসংস্থানও কমতে পারে। মধ্যম ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির ওপর আর্থিক চাপ বাড়লে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। দারিদ্র্য বিমোচনের অগ্রগতিও থমকে যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও স্কুলগুলোকে করের আওতায় আনা, অনলাইন ব্যবসার ওপর শুল্ক বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো কিছু না করা, অপ্রয়োজনীয়, দুর্নীতিগ্রস্ত ও অদক্ষ উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ না করাসহ বিভিন্ন খাতে বাজেট প্রস্তাবনার সমালোচনা করেন আমীর খসরু।

বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূর্ণাঙ্গ কর মওকুফের আওতায় আনা হবে বলেও তিনি জানান।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ কর ফাঁকি প্রদানকারীদের পুরস্কৃত করছে। নিয়মিত করদাতাদের প্রতি এটি অবিচার।’

তিনি বলেন, ‘কর ফাঁকি ও জালিয়াতি রোধ এবং কর জাল সম্প্রসারণ না করে ভ্যাটবৃদ্ধির মাধ্যমে বরাবরের মতো করের বোঝা সাধারণ জনগণের কাঁধে চাপানো হয়েছে। পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। জীবনযাত্রার মান কমছে।’

আমীর খসরু বলেন, ‘বর্তমানে মূল্যস্ফীতি প্রায় ‘ডাবল ডিজিট’। তা কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করার কথা বলা হচ্ছে, যা বাস্তবসম্মত মনে হয় না। দারিদ্র্য বৃদ্ধির হারে লাগাম টানা যেত। 

বিএনপি এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। সেটা এবারের বাজেটে ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ যা আগের সরকারের মতোই অবান্তর ও কাগুজে প্রবৃদ্ধি।’

তিনি বলেন, খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে। অপর্যাপ্ত, ত্রুটিপূর্ণ, দুর্নীতিগ্রস্ত সামাজিক সুরক্ষা খাতে পেনশন ও কৃষি ভর্তুকি অন্তর্ভুক্ত করে বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টা হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু সামাজিক সুরক্ষার জন্য সরকারি বরাদ্দ অপর্যাপ্ত থেকে যাচ্ছে। আজ অবধি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিগুলো অধিকার ভিত্তিক হলো না।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ ও অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক খালেদ জোসেন মাহবুব শ্যামল উপস্থিত ছিলেন।