শিরোনাম

চট্টগ্রাম, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস) : ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ভাই-বোনদের বিরুদ্ধে আটটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গ্রামের প্রান্তিক লোকজনকে ব্যবসায়ী সাজিয়ে নিজ মালিকানাধীন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে মামলাগুলো করা হয়েছে।
মামলায় জাবেদের দুই ভাই, এক বোন এবং পরিবারের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মচারী এবং ইউসিবিএল ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তাসহ মোট ১১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আজ সোমবার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ এসব মামলা করা হয়েছে বলে সংস্থাটির উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ জানিয়েছেন।
আট মামলার প্রতিটিতে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ছোট ভাই ও ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালক আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনিকে আসামি করা হয়েছে। সাতটি মামলায় ব্যাংকটির আরেক পরিচালক জাবেদের আরেক ভাই আসিফুজ্জামান চৌধুরী আসামি হিসেবে আছেন। তিনটি মামলায় জাবেদের বোন ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক রোকসানা জামান চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া ইউসিবিএল-এর বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা, পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্য এবং জাবেদ পরিবারের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আরও কয়েকজন কর্মচারীকে প্রতিটি মামলায় আসামি করা হয়েছে।
দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, ব্যাংকটির চট্টগ্রামের চকবাজার, পোর্ট, পাহাড়তলী ও বহদ্দারহাট শাখায় এশিয়া এন্টারপ্রাইজ, মুন এন্টারপ্রাইজ, ইসলাম এন্টারপ্রাইজ, সান-সাইন এন্টারপ্রাইজ, আলম এন্টারপ্রাইজ, জুপিটার এন্টারপ্রাইজ, নাজিম অ্যান্ড সন্স ও আল-রাজি এন্টারপ্রাইজ নামে আটটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাব খোলা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী হিসেবে যাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, তারা প্রকৃতপক্ষে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নন।
যাদের ব্যবসায়ী সাজিয়ে ঋণ নেওয়া হয়েছে তারা হলেন- সেলুন কর্মচারী রাজধন সুশীল, দিনমজুর মো. মাঈন উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন, জসিম উদ্দিন ও নুরুল ইসলাম, প্রবাসী সাইফু উদ্দিন, ফুটবল খেলোয়াড় দিদারুল আলম এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক আমির হামজা। আটটি মামলায় মোট ৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।
তদন্তে জানা গেছে, ২০০২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দিনমজুর নুরুল ইসলামের নামে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, স্থানীয় খেলোয়াড় দিদারুল আলমের নামে ৪ কোটি টাকা, দিনমজুর মইন উদ্দিনের নামে ৭ কোটি টাকা, অটোরিকশা চালক আমির হামজার নামে ৮ কোটি টাকা, সেলুন কর্মী রাজধন কর্মকারের নামে ৩ কোটি টাকা, দিনমজুর নাজিমের নামে ৯ কোটি টাকা এবং জসিম উদ্দিনের নামে ৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রামের সহজ-সরল লোকজনের কাছ থেকে কৌশলে বিভিন্ন তথ্য ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়ে তাদের নামে ইউসিবিএল-এ হিসেব খোলা হয়। এরপর তাদের নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়। আর জাবেদ পরিবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নামে খোলা একই ব্যাংকের হিসেব নম্বরে সেই টাকা স্থানান্তর করে পরবর্তীতে তা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালে এ অনিয়ম ও জালিয়াতি সংঘটিত হওয়ার সময় ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তখন ব্যাংকে জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের একচ্ছত্র প্রভাব ছিল। জাবেদের ভাই-বোন ও পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সদস্য প্রভাব সৃষ্টি করে ঋণ অনুমোদন করেন এবং সেগুলো মিলেমিশে আত্মসাৎ করেন।
দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ১৯৪৭ এর ৫(২) এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ও (৩) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
একই প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গত নভেম্বরে আরও চারটি মামলা করেছে দুদক।
এর আগে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে ১৪০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মানিলন্ডারিং আইনে ছয়টি মামলা করেছে দুদক। এসব মামলায় জাবেদের স্ত্রী রুকমিলা জামানসহ পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য আসামি হিসেবে আছেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেই সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে লন্ডনে তার অবস্থানের তথ্য প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে।