শিরোনাম

—মো. আয়নাল হক—
রাজশাহী, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : রাজশাহীতে প্রাণিজ প্রোটিন উৎপাদন, বিশেষ করে দুধ, ডিম ও মাংস উৎপাদন উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এ অঞ্চলের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণে ব্যাপক অবদান রাখছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী বাসসকে বলেন, তারা সবার জন্য নিরাপদ, পর্যাপ্ত এবং মানসম্মত প্রাণিজ-প্রোটিন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, আট জেলার সমন্বয়ে গঠিত এ বিভাগে রয়েছে ১৪৬টি দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র, ৮৯০টি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, ১৪টি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্ট, ৩৯টি ফিড মিল কারখানা, ৫০টি ফিড প্রিমিক্স এবং দুটি মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা।
ডিএলএস-এর তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলে রয়েছে ৭৭ লাখ ৯০ হাজার গরু, ১ লাখ ২১ হাজার মহিষ, ৮০ লাখ ৫৫ হাজার ছাগল, ১২ লাখ ২০ হাজার ভেড়া, ৭ কোটি ২৫ লাখ মুরগি, ৯৪ লাখ ২২ হাজার হাঁস, ২৭ লাখ ৬২ হাজার কবুতর, ৪ লাখ ৩ হাজার কোয়েল এবং ১ লাখ ২৯ হাজার টার্কি।
প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৩৩ হাজার প্রান্তিক কৃষককে প্রায় ১৫১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৬২ হাজার ৮৬২ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে, ১৮ হাজার ৬৬০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে এবং ৪২ হাজার ৮৯৬টি কৃমিনাশক ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে।
গত ১৫ বছরে এ অঞ্চলে, বিশেষ করে বিস্তীর্ণ বরেন্দ্র এলাকায় ভেড়া পালন করে অনেক প্রান্তিক পরিবার তাদের জীবনযাত্রা ও জীবিকা উন্নত করেছে।
প্রাণিজ-প্রোটিন উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং প্রাণিজ-প্রোটিনে মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে বিদ্যমান চাহিদা পূরণ করাই তাদের লক্ষ্য।
ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী বলেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, সদর, উল্লাপাড়া ও বেলকুচি, পাবনার সাঁথিয়া, বেড়া, ফরিদপুর ও ভাঙ্গুড়া, বগুড়ার গাবতলী ও শেরপুর, রাজশাহীর পবা ও বোয়ালিয়া, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এবং নাটোরের সদর ও গুরুদাসপুরসহ অনেক উপজেলা দুধ উৎপাদনকারী এলাকায় পরিণত হয়েছে।
এছাড়া, পাবনার সাঁথিয়া, বেড়া ও ঈশ্বরদী, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া, বগুড়ার শেরপুর, গাবতলী ও ধুনট, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর ও ক্ষেতলাল এবং রাজশাহীর গোদাগাড়ী এখন মাংস উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।
বাগমারা উপজেলার বুজরুকুলা গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম হাঁস পালন করে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন। তার খামারে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৫০০ হাঁস রয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ডিমপাড়া হাঁস রয়েছে। তিনি বছরে গড়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আয় করছেন।
তিনি জানান, বর্তমানে হাঁসের ডিমের চাহিদা অনেক বেড়েছে। তার খামারের প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে আকারভেদে প্রতিটি ডিম ১১ থেকে ১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী হাবিবা খাতুন ভেড়া পালন করে সফল হয়েছেন। তিনি এখন পরিবার নিয়ে সুখী জীবনযাপন করছেন এবং অন্য নারীদেরও ভেড়া পালনে উৎসাহিত করছেন।
এ অঞ্চলে গরু মোটাতাজাকরণের পাশাপাশি ছাগল মোটাতাজাকরণের উদ্যোগও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলের বহু প্রান্তিক পরিবার এভাবে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের ৫৩ বছর বয়সি আব্দুল মান্নান ভেড়া পালন করে দারিদ্র্য দূর করেছেন। তিনি নিয়মিত অর্থ, মাংস ও দুধ পাচ্ছেন এবং সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাণিজ্যিক খামারের বাইরে অনেক গ্রামবাসী ব্ল্যাক বেঙ্গলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল বাড়িতে বা আঙিনায় পালন করছেন।
বাগমারা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের স্নাতক দম্পতি সোহেল রানা ও রিমা খাতুন সরকারি চাকরি না পেয়ে পাঁচ বছর আগে বাড়িতে ছাগল পালন শুরু করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক জালাল উদ্দিন সরদার বলেন, প্রাণিসম্পদ উৎপাদন, প্রাথমিক চিকিৎসা, কৃমিনাশক, টিকাদান ও খামার ব্যবস্থাপনা সেবা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য হ্রাসে প্রাণিসম্পদ খাতকে এগিয়ে নেওয়া জরুরি।