শিরোনাম

/ রুমানা জামান /
ঢাকা, ২৪, ডিসেম্বর, ২০২৫(বাসস) : ‘নেতৃত্ব নিন, নেতৃত্ব দিন’- এমন স্লোগান দিয়ে নির্বাসিত জীবনের দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে দলের সাধারণ কর্মীদের বুকে সাহস জুগিয়েছেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। হাজার মাইলে দূরে থেকেও দৃঢ় কণ্ঠের সুস্পষ্ট বক্তব্যে কর্মীদের দায়িত্ববোধ ও কর্ম-স্পৃহা জাগিয়ে তুলেছেন। অদম্য নেতৃত্বে দলকে করেছেন অনেক সুসংহত। নেতাকর্মীদের রেখেছেন ঐক্যবদ্ধ। এমনকি সরকার পরিচালনার জন্য নিজেকে তৈরি এবং শানিত করেছেন। অবশেষে জোয়ার-ভাটার এক ঘোর অমানিশা পেরিয়ে বর্তমানে তিনি দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের নেতা হয়ে উঠেছেন।
অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পতাকাবাহী এই নেতা দীর্ঘ সময় সুদূর যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্ত, কৌশলগত পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক নির্দেশনায় এখন তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় চালিকাশক্তি। দলটির শীর্ষস্থানীয় থেকে কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলার সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তারেক রহমান। তার রাজনৈতিক চরিত্রের মধ্যে দলের কর্মী-সমর্থকেরা খুঁজে পাচ্ছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে। নেতাকর্মীরা বলছেন, একজন নেতার নেতৃত্বের মূল শক্তি থাকে তার ন্যায়বোধ আর মানসিকতায়। তার আদর্শের মহিমায়। তারেক রহমান তেমনই একজন নেতা; যিনি দূর থেকেও ছিলেন সবচেয়ে কাছে।

এ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দীর্ঘ ১৭ বছরের কলঙ্কময় স্বৈরশাসন থেকে মুক্তির সংগ্রামে তারেক রহমান নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে তার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশনা দলমত নির্বিশেষে সর্বজন স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই আগামীর বাংলাদেশে যোগ্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অনিবার্য হয়ে উঠেছেন তারেক রহমান।
দেশ গড়ার অভিনব নানা পরিকল্পনা আর জনগণের স্বপ্ন পূরণের সারথী হয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশের মাটিতে পা রাখবেন গণতন্ত্রের ‘টর্চ বেয়ারার’ খ্যাত এই নেতা। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। তাদের বিশ্বাস- তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন দীর্ঘ রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পর দলকে নতুন করে সংগঠিত করবে। পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে তৈরি হবে নতুন বাস্তবতা। তার নেতৃত্বে দেশে ফিরবে গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটবে।
তারেক রহমানকে ‘জীবন্ত ইতিহাস’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাসস’কে বলেছেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান বিএনপিকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছেন। বিদেশে থেকেও তিনি অত্যন্ত সফলভাবে দলকে সঠিক পথে পরিচালনা করেছেন। অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতায় তিনি তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কাছে ভার্চুয়ালি খুব দ্রুত পৌঁছে গিয়েছেন। যার ফলে নানা সংকট আর চাপের মুখেও বিএনপি লক্ষ্যচ্যুত হয়নি, ভাঙেনি। বিএনপি ছেড়ে কেউ যাওয়ার কথা ভাবেনি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে বড় একটা গণঅভ্যুত্থান হলো এখানে তারেক রহমানের অসাধারণ ভূমিকা ছিল। সেই সময় তিনি আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন। সময় উপযোগী দিক-নিদের্শনা দিয়েছেন। কিভাবে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনের গতিপথ তুঙ্গে নেয়া যায় এ ব্যাপারে দলের তৃণমূল নেতাদের পথরেখা দিয়েছেন। তিনি যে সফল একজন রাষ্ট্রনায়ক সেটা প্রমাণিত হয়েছে তার এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের সুদৃঢ় বক্তব্য, অদম্য নেতৃত্ব দলকে আরও বেশি সুসংহত করেছে। একজন সর্বোচ্চ সফল নেতা হিসেবে তার যোগ্যতা এবং দক্ষতা বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে এই মুহূর্তে আদর্শ। অত্যন্ত শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে এই আদর্শ বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজেদের ভেতরে ধারণ করেন। আমরা ভীষণ আশাবাদী তারেক রহমান ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরলে আমাদের রাজনীতি আরো পজেটিভ হবে। দেশে অভূতপূর্ব ঐক্য সৃষ্টি হবে।’
যুক্তরাজ্যে নির্বাসনের সময় ব্যক্তিগত জীবনেও তারেক রহমানের ওপর নেমে আসে কঠিন দুঃসময়। ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। একইসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তার মা বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বহুবার কারাবাস, অসুস্থতা ও চিকিৎসা সংকটের মুখোমুখি হন। এমন বাস্তবাতায় দূরবর্তী অবস্থান থেকেও তারেক রহমান সংগঠন ধরে রাখার কাজে স্থির মনোনিবেশ করেন। কারণ, তারেক রহমান জানতেন, ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠী তাকে রাজনৈতিকভাবে নির্মূল করতে চায়। ফলে নিজেকে সামনে এনে ব্যক্তিকেন্দ্রিক আন্দোলনের পরিবর্তে জনগণ কেন্দ্রিক একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তিনি সুস্পষ্ট করে দেন- ‘বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে। যা দলীয় নেতাদের মতে তার ধৈর্য ও স্থিরবুদ্ধিসম্পন্ন নেতৃত্বের প্রমাণ।

তারেক রহমানের নেতৃত্বে কিছু গুণাবলী তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘১৭ বছর আগে তারেক রহমান নির্বাসিত হয়েছেন। নির্বাসনে থেকেই তিনি কাজ করেছেন। নিন্দুকেরা, সমালোচকরা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তার দিকে আঙ্গুল তুলে বলতো, তারেক রহমান কোনদিন সফল হতে পারবেন না। অথচ এসব কিছু পাশ কাটিয়ে তারেক রহমান এমন এক সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যখন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছিল।
এই কঠিন সময়ে তারেক রহমান বিএনপির হাল ধরেছিলেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারেক রহমান যে পথটা অনুসরণ করলেন তা ছিল ঠিক তার পিতার মত। সুদূরপ্রসারী চিন্তা, ভবিষ্যতকে দেখা এবং অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা- এটা তার পিতার কাছ থেকে পেয়েছেন। তার পিতা প্রথম যে ক্যাবিনেট গঠন করেছিলেন তা ছিল ‘গ্যালাক্সি অব ইন্টেলেকচুয়াল’ অর্থাৎ দেশের সবচেয়ে মেধাবীদের নিয়ে তিনি ক্যাবিনেট গঠন করেছিলন। তারেক রহমানও দেশের মেধাবীদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা আমাদের নেতার সাথে আন্দোলন, সংগ্রামে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে গিয়ে যে পরিপক্কতা তার মধ্যে দেখেছি, এই জাতি ইনশাআল্লাহ তার নেতৃত্বে অনেক দূরে এগিয়ে যাবে।’
২০০৭-২০০৮ সালের এক-এগারো থেকে ২০২৪-এর আগস্ট অব্দি- বাংলাদেশের রাজনীতিকে যে কুহেলিকা আচ্ছন্ন করে রেখেছিল; তাকে শরবিদ্ধ করেছিলেন তারেক রহমান। শারীরিক উপস্থিতি ছিল তার সুদূর লন্ডনের সীমাবদ্ধ পরিসরে। তবুও বাংলাদেশের মেঠোপথে, রাজপথে, শহরে, নগরে, মহানগরে, পাড়া-মহল্লায় ও গ্রামের চায়ের দোকানে, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের দেয়াল লিখনে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের টাইমলাইনে এবং বিশ্বের যেখানে বাংলাদেশী আছেন সর্বত্রই তিনি ছিলেন অনুঘটকের মতো সক্রিয়। যেনো- অপ্রতিরোধ্য এক নেতা গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে ছিলেন আগামী সম্ভাবনার বাতিঘর। তাই আজো তাকেই ঘিরে কোটি তারুণ্য স্বপ্ন বুনে নতুন বাংলাদেশের।

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে গণতন্ত্রের ধারক খ্যাত এই নেতার ধাবমান উপস্থিতি শুধু তার ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ছিল না। বরং এটা ছিল এক রাজনৈতিক অনুষঙ্গ, যেখানে নেতৃত্ব শারীরিকভাবে অনুপস্থিত থেকেও উঠে এসেছেন চলমান ঘটনা প্রবাহের ইতিহাসের মূল মঞ্চে। ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য প্রবাসে যাবার পর অনেকেই ভেবেছিলেন তার রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি ঘটলো। কিন্তু তিনি সেই সুদূর প্রবাস থেকে দলের ভিতরে বিকেন্দ্রীকরণ ও আত্মরক্ষামূলক কৌশলের একটি পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো গড়ে তোলেন। দলীয় সিদ্ধান্তকে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে স্থানান্তর করে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেন। সংগঠন পুনর্গঠন, কর্মসূচিতে নতুন কৌশল, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্ত অবস্থান— সবকিছুতেই তার পরিকল্পনার ছাপ স্পষ্ট।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সুদূর যুক্তরাজ্যে বসেই তারেক রহমান মাঠ পর্যায়ে একটি নীরব পরামর্শক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। ছোট ছোট সেল ভিত্তিক কর্ম-পরিকল্পনা এমনভাবে গড়ে তোলেন- যেগুলো ফ্যাসিস্ট আমলের রাষ্ট্রযন্ত্র খুব সহজে নিজেদের নজরদারিতে আনতে পারেনি। তার সাম্প্রতিক ভিডিও বার্তা এবং বক্তব্যও জনমনে সাড়া ফেলেছে, যা বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করেছে।
তারেক রহমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ধারা সৃষ্টি করেছেন উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ২৫ বছর আগে বিএনপি সরকার থাকাকালে আমি লক্ষ্য করেছি- তারেক রহমান কেবল ঘরে বসে রাজনীতি করেননি, তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে জনগণের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তুলেছিলেন। তিনি সুদূর লন্ডনে থেকেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছেন, তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনছেন। গত ১৭ বছর ধরে রাজনৈতিক নানা সংকটের মুখেও তিনি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। বলা প্রয়োজন, বিএনপিকে বারবার ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু এই দল জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার আদর্শে নতুন করে জেগে উঠেছে। সর্বশেষ তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। তিনি আজ থেকে দুই দশক আগে যে পরিবর্তনের রাজনীতি শুরু করেছিলেন, আজকে সেই রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার পর বিএনপির ঝান্ডা হাতে নেন তারেক রহমান। তার সুদীর্ঘ সময়ের নেতৃত্বে দেশ থেকে স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করার জন্য বাংলাদেশের মানুষ সংঘটিত হয়েছে- যার চরম পরিণতিতে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিগত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশকে একটি নতুন যাত্রায় পরিচালিত করেছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্রেই।
মঈন খান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন রাজনীতিকে অনুসরণ করে এবং তারেক জিয়ার দিক-নির্দেশনায় আমরা পুনরায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন আমলে বিএনপির প্রতি নিদারুণ অন্যায়-অত্যাচার হয়েছে। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে দলের নেতাকর্মীদের নামে অজস্র মামলা, জেল, খুন গুমের শিকার হতে হয়েছে। এমনকি একাধিকবার বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্র হয়েছে। তবে তারেক রহমানের সঠিক নেতৃত্বের কারণে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হয়নি। আমাদের নেতা তার কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে তিনি নিজেকে দেশনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি এখন বিএনপির অজস্র নেতাকর্মীদের প্রেরণার উৎস।
তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের ধৈর্য, পরিশ্রম, সহনশীলতা এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বিএনপিকে রাজনৈতিক ময়দানে উচ্চতার শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। নির্মোহভাবে বিচার করলে দেখা যায় যে, সমসাময়িককালের অন্য কোনো রাজনীতিবিদই তার তুল্য জনপ্রিয় নয়। আগামীতে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির কাণ্ডারি হয়ে তিনিই একবিংশ শতাব্দীতে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে আরাধ্য লক্ষ্যস্থলের দিকে এগিয়ে নেবেন বলে বিশ্বাস করি।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের আদর্শ, খালেদা জিয়ার দেখানো পথে সবার মতামতের ভিত্তিতে দল পরিচালনা করেন তারেক রহমান। গত কয়েক বছরে বিএনপিকে ধ্বংস করতে ভিত্তিহীন মামলায় খালেদা জিয়াসহ দলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে সাজা দেওয়া, গুম, খুন করা, নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দেয়া হয়েছিল। তাদের ঘরবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছিল। কিন্তু তারেক রহমানের সঠিক নেতৃত্বের কারণে নানা ষড়যন্ত্রের মাঝেও বিএনপি এখন সাংগঠনিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। শুধু তা-ই নয়; সবশেষ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তার নেপথ্যের ভূমিকা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া ও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখার অন্যতম কারিগর ছিলেন তারেক রহমান। ’৭১-এ জিয়াউর রহমান, ’৯০-এ বেগম খালেদা জিয়ার মতো ২০২৪-এ তারেক রহমানকে জনতা নায়ক হিসেবে তাদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।’

তারেক রহমান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অনিবার্য প্রতীক উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘তারেক রহমান তার মেধা, যোগ্যতা, শ্রম ও নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। দেশের বাইরে থাকলেও রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় রয়েছেন। তার উপর বয়ে যাওয়া চক্রান্তময় ওয়ান-ইলেভেনের পর হত্যার ছক ও দমননীতি এবং দীর্ঘ লন্ডন নির্বাসনের সময়গুলো খুব সুখের ছিল না। তবে সমস্ত কিছু তিনি ধৈর্যের সঙ্গে ওভারকাম করেছেন। এ সময়ের ডিজিটাল নেতৃত্ব, দেশের জন্য ৩১ দফা সংস্কার রূপরেখা এবং সাম্প্রতিক জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে সফল নেতৃত্ব প্রমাণ করে তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের অন্যতম প্রধান স্থপতি। তারেক রহমান শুধু বিএনপির নয়, তিনি দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রতীক। দেশের মানুষ তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল।’
তারেক রহমান বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রাণ উল্লেখ করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে তারেক রহমান যখন অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেলেন; তখন তিনি ছিলেন ভীষণ অসুস্থ। ওই সময়ের শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের নির্মম আঘাতের চিহ্ন ছিল তার শরীরে। কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠার পর থেকেই আমাদের নেতা দলের সকলের সাথে যোগাযোগ রাখতেন; কথা বলতেন। দলের বিষয়ে সবসময় সচেতন থাকতেন এবং দলীয় কর্মসূচি, কর্মকাণ্ড যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা সেটা তত্ত্বাবধান করতেন। যার কারণে আমাদের প্রতিটা কর্মসূচি সাফল্যমণ্ডিত হতো।
আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের নেতাকর্মীরা এতে প্রেরণা পেতো। ফলে অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে বলিয়ান হয়ে তারা সকল ধরনের নিপীড়ন, নির্যাতন, গুম, খুনের ভয় উতরে গিয়ে সাহসের সঙ্গে কর্মসূচিগুলা সফল করত।’
তারেক রহমানের নেতৃত্বের গুণাবলী অপরিসীম উল্লেখ করে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘তার সুদক্ষ নেতৃত্বের প্রতি নেতাকর্মীদের রয়েছে অপরিসীম ভরসা। এই মুহূর্তে দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী মনে করে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পর একজন উপযুক্ত নেতা হচ্ছেন তারেক রহমান। যিনি দেশের সকল সংকটে সুদূর লন্ডন থেকে এখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দূর থেকেও দলের নেতাকর্মীদের সবচেয়ে কাছে থেকেছেন।’
বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘তারেক রহমানের নেতৃত্বের বড় দক্ষতা তখন প্রকাশ পেয়েছে; যখন তিনি দলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামাতে সক্ষম হয়েছিলেন। ওই আন্দোলনের সময় তিনি একেবারেই তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। সময় উপযোগী দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, অপরিসীম নেতৃত্বের গুণাবলীর পরিচয় দিয়ে তারেক রহমান সার্বক্ষণিক নেতাকর্মীদের সুবিধা-অসুবিধা পর্যবেক্ষণ করতেন। বিপদে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। ফলে কর্মীরা মনে করতো, নেতা তাদের পাশেই রয়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অনেক দূরে থাকলেও এক ধরনের নৈকট্যবোধ তৈরি হতো।’
বছরের পর বছর ধরে নিজ দেশ থেকে দূরে থাকলেও তারেক রহমান বিশ্বাস করেছিলেন, নেতৃত্ব কেবল শারীরিক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে নয় বরং আপাত অনুপস্থিতির ভেতর দিয়েও প্রতিষ্ঠিত হয়। যেখানে কর্মীরা দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয় এবং জনগণ নেতা খোঁজে না বরং ঘটনার পরম্পরায় নিজেই নেতা হয়ে ওঠেন এক সময়।
এই বিশ্বাসের বর্ধিত রূপ ছিল সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ। সহিংসতার পরিবর্তে তিনি গণআন্দোলনে গান, কবিতা, থিয়েটার, মিম ও ছোট ভিডিওর মাধ্যমে এক প্রকার ‘সাংস্কৃতিক অভ্যুত্থান’ গড়ে তোলেন। এসব কৌশল দেশের তরুণদের কাছে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়ে ওঠে একটি শান্তিপূর্ণ সুতীব্র প্রতিবাদের অবয়ব। যা চব্বিশের গণআন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থানে গিয়ে শেষ হয়।

তারেক রহমান পুরো বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন উল্লেখ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাসিত জীবন পার করলেও তিনি শক্ত হাতে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। নিজের দক্ষতায় জনগণের কাছে আস্থা এবং বিশ্বাসের জায়গায় পৌঁছেছেন। আমরা খুবই আশাবাদী- আগামী দিনে তার নেতৃত্বে দল আরো এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বিগত ১৭ বছর তিনি দলের প্রান্তিক পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি একাত্ম থেকেছেন। সারাদেশের প্রতিটি ওয়ার্ড, গ্রাম, ইউনিয়ন ভিত্তিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিয় করেছেন। দেশের সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্তে ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সকলের আস্থার জায়গায় তিনি পৌঁছেছেন। বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠের আন্দালেনকে বেগবান করতে গিয়ে সকল রাজনৈতিক দলকে এক ছাতার নিচে এনে দাঁড় করিয়েছেন। এমনকি দেশে এক ব্যক্তির ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুন্ধে রুখে দাঁড়াতে জনগণকে দূর থেকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন।
তারেক রহমানের দেওয়া দেশ গড়ার ৩১ দফা সাধারণ মানুষ আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন উল্লেখ করে এ্যানি বলেন, ‘দেশ গড়ার নতুন নতুন ফর্মুলা, দূরদর্শী পরিকল্পনার কথা আমাদের নেতা জনগণের সামনে সবার আগে তুলে ধরেছেন। এক সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯ দফা দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে গিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি গণমানুষের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। সেখান থেকেই বিএনপিকে গণ-মানুষের দল বলা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় তারেক রহমানও তার বাবা ও মায়ের দেখানো পথেই হাঁটছেন।’
তিনি আরো বলেন, তারেক রহমান শুধু বিএনপিকেই ঐক্যবদ্ধ রাখেননি, পুরো দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এক কথায় তিনি বাংলাদেশের ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। দেশের সাধারণ জনগণ তার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরে তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন। ইনশাআল্লাহ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন।
বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেছেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণেই ২৪-এর গণআন্দোলনে সফলতা দেশবাসী পেয়েছে। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণ এবং সুস্থির মাথায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ কারণে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করে এক কাতারে আনতে সক্ষম হয়েছেন। তার এই দূরদর্শী এবং সাংগঠনিক দক্ষতায় আস্থা রেখে দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদ হটানোর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
টুকু বলেন, বিগত স্বৈরাচারের আমলে বিএনপির ওপর নিদারুণ জুলুম ও নির্যাতন হয়েছে। নেতাকর্মীরা গুম খুনের শিকার হয়েছেন। দেশের গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের আন্দোলনে অসংখ্য কর্মী শহীদ হয়েছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৬ বছর কারাগারে ছিলেন। দলের এই চরম দুঃসময়ে সমস্ত কিছু বিবেচনায় তিনি শক্তহাতে দলের হাল ধরেছেন। কেন্দ্র থেকে তৃণমুল পর্যন্ত সকলকে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত রেখেছেন। দলের সাংগঠনিক কাঠামো একটি শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত করাসহ সকল ক্ষেত্রে তিনি সফলকাম হয়েছেন।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব তারেক রহমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারেক রহমান আগামীতে দল ঘোষিত ৩১ দফা অনুযায়ী দেশ পারিচালনা করবেন; দেশের জনগণ সেটাই প্রত্যাশা করে। আমরা বিশ্বাস করি তিনি দেশ ও জনগণের কল্যাণে সুদক্ষভাবে দেশ পরিচালনা করবেন। তারেক রহমানের নেতৃত্বে অগামীর বাংলাদেশ হবে গণতন্ত্র ও সাম্যের।