শিরোনাম

তিনা খানম
ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সাল ২০০৩। কোনো এক শুক্রবারের তপ্ত দুপুর। রাজধানী ঢাকার বনানীর ১৩ নম্বর রোডে এক যুবক হঠাৎ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। তার সঙ্গে ছিল না কোনো দেহরক্ষী বা অস্ত্রসজ্জিত নিরাপত্তা বাহিনী। অথচ পথচারি নন তিনি। পথের ধারে এক বৃদ্ধাকে অনবরত রক্ত বমি করতে দেখে বেশ মর্মাহত হলেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই বৃদ্ধার যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিলেন এক ছোট ভাইকে ডেকে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃদ্ধার চিকিৎসা হলো, পথ্যের ব্যবস্থাও করে দিলেন। ভিক্ষাবৃত্তি করা দিনাজপুরের ওই বয়স্ক নারীর পুনর্বাসনে সেখানে তাকে একটি মুদির দোকান করে দিলেন। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন সবসময় তার খোঁজ খবর রেখেছেন সেই যুবক। শুধু ওই বৃদ্ধা নন, এমন হাজারো বৃদ্ধ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হন আব্দুল্লাহ বিন জাহিদ। এর কিছুদিন পর তার একমাত্র ছোট ভাই জিসান (১৪) কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এর কয়েকদিন পরই তাদের বাবাও চলে যান না ফেরার দেশে। এক ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় মা ফাতেমা-তুজ-জোহরার জীবনে নেমে আসে অনিশ্চয়তার অন্ধকার। একদিকে স্বামী আর বড় সন্তান হারানোর শোক, অন্যদিকে ছোট ছেলের চিকিৎসা। জীবনের এই কঠিন সময়ে তার পাশে দাঁড়ান তারেক রহমান। জিসানের পুরো চিকিৎসার দায়িত্ব নেন তিনি।
অর্থ সহায়তায় ছেলের জীবন ফিরে পেয়ে তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জিসানের মা ফাতেমা-তুজ-জোহরা। তিনি বাসসকে বলেন, আল্লাহর রহমত আর আমরা বিএনপি পরিবারের পক্ষ থেকে যে সহযোগিতা পেয়েছি তা কোনো দিন শোধ করার মতো নয়। সংগঠনটি আমার জিসানের চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ বহন করেছে। স্বয়ং তারেক রহমান আমার ভাই হিসেবে আমার পরিবারের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন। আল্লাহ তার অনেক ভালো করুন। তার এ মানবতা আজীবন মনে রাখবো।
বিএনপি সংশিষ্টরা জানান, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজ তারেক রহমান করে যাচ্ছেন মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। অনেকটা নীরবে, নিভৃতে। দরিদ্র, অসহায়, বিপদগ্রস্ত, গুম-খুনের শিকার মানুষ ও তাদের পরিবারের দিকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাহায্যের হাত। কারও চিকিৎসার দায়িত্ব নিচ্ছেন, কারও শিক্ষার।
গৃহহীনদের নির্মাণ করে দিচ্ছেন বাড়ি। ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ ও ‘জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন’-এর মতো সংগঠনগুলোর মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সারা দেশে আর্তমানবতার সেবা করে যাচ্ছেন।
ঝিনাইদহের যুবদল নেতা মিরাজুল ইসলাম ওরফে মির্জার (২৬) কথা নিশ্চয় সবার মনে আছে। ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার খাড়াগোদা গ্রামের মাঠ থেকে মিরাজুলের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মিরাজুল ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর মহল্লার জোনাব আলীর ছেলে এবং পৌর যুবদলের সহসভাপতি। পরিবারের দাবি, সাত দিন আগে মিরাজুলকে সাদা পোশাকের পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন লোক তুলে নিয়ে যায়। পুলিশের ধারণা, মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে মিরাজুলকে হত্যা করা হয়েছে। নিহত মিরাজুলের ভাই ইয়াদ আলীর অভিযোগ, সরকারবিরোধী রাজনীতি করার কারণেই তাঁর ভাইকে পরিকল্পিতভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়।
মিরাজুলের মা বুলবুলি খাতুনের অভিযোগ, মিরাজুল বিএনপির রাজনীতি করে বলে তার নামে কয়েকটি মামলা দেওয়া হয়েছে। দল করার অপরাধে তাকে মেরে ফেলা হলো। সেই মিরাজুলের চলে যাওয়ার পর তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ শুরু করেন। নিদারুন কষ্টে দিন পার করা অসহায় বাবা-মায়ের দায়িত্ব নেন তারেক রহমান।
শুধু দল নয়, দলের বাইরেও অসংখ্য অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারেক রহমান।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ভাগায় দুই বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ে নিয়ে হতদরিদ্র দীপালী রানী শীল একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করতেন। বৃষ্টির সময় ঝুপড়ি ঘরের চালার ফুটো দিয়ে পানি পড়ে সব একাকার হয়ে যেত। এমন অবস্থায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে হতদরিদ্র এ পরিবারকে একটি নতুন টিনশেড ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়।
ঘরটি পেয়ে খুশি দীপালী রানী শীল জানান, তার ঝুপড়ি ঘরটি মেরামতের টাকা তার ছিল না। এ অবস্থায় তার পরিবারকে নতুন একটি টিনশেড ঘর করে দেওয়ায় তিনি নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারছেন।
জাতীয় নারী ফুটবল দলের তারকা খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা। ঋতুপর্ণার বাবা বরজ বাঁশি চাকমা ২০১৫ সালে ক্যান্সারে মারা যান। বাবার অনুপ্রেরণায় ঋতু খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে ওঠেন। এ ফুটবল তারকা খেলোয়াড় যখন দেশের হয়ে একের পর এক সাফল্য এনে দিচ্ছেন, ঠিক তখনই তার মা ভূজোপতি চাকমা জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে আক্রান্ত হন ব্রেস্ট ক্যান্সারে। চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ নেই পরিবারের।
‘গোল্ডেন গার্ল’ খ্যাত ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমার ক্যান্সার আক্রান্ত মা ভূজোপতি চাকমার পাশে দাঁড়ান তারেক রহমান। তার নির্দেশনায় রাঙামাটির কাউখালীর প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রাম মগাছড়িতে ঋতুপর্ণার বাড়িতে যায় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ প্রতিনিধিদল। ঋতুপর্ণা চাকমার মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ২০ জুলাই বিকেলে ঢাকার সাভারে গুলিতে নিহত হন বগুড়ার শিবগঞ্জের পঞ্চদাশ গ্রামের রিকশাচালক রনি প্রামাণিক। এ সময় তিনি অসুস্থ ছেলের ওষুধ কিনতে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
মরদেহ বগুড়ার শিবগঞ্জের বাড়িতে আনার মতো সামর্থ্য ছিল না। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে স্ত্রী, দুই সন্তানসহ মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। ২১ জুলাই দাফন করা হয়। অভাবের সংসারে উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে কষ্টে দিন পার করছিলেন রনির মা। তার কষ্ট লাঘবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তারেক রহমান। জুলাই যোদ্ধা শহীদ রনির মা সাহেনা বেওয়াকে নতুন বাড়ি উপহার দেন।
চোখ ভরা অশ্রু আর কৃতজ্ঞতার কণ্ঠে রনির মা বলেন, আমার ছেলেকে হারিয়েছি; কিন্তু আজ মনে হচ্ছে আবার একটা পরিবার পেয়েছি।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, সারাদেশের অসহায়, নির্যাতিত, নিপীড়িত, অভাবী, মেধাবীদের তারেক রহমান ব্যক্তিগত অনুসন্ধানের মাধ্যমে খুঁজে বের করেন। এরপর গোপনে তাদের নিয়মিত সহযোগিতা করেন।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি পাগলাটারি গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাকিন আলী (৬৫)। সংসার খরচ, প্রতিবন্ধী সন্তানদের দেখভাল আর মেয়েদের বিয়ে দিতে গিয়ে রোজগারের সব টাকা খরচ করতে হয়েছে তাকে। তাই গরু কেনার সামর্থ কখনোই হয়ে ওঠেনি। বয়সের ভারে ন্যুব্জ শরীর নিয়ে টেনেছেন তেলের ঘানি। তিন যুগ ধরে নিজেই তেলের ঘানি টেনেছেন তিনি।
মোস্তাকিন আলীর দিন শুরু হয় সরিষা সংগ্রহ দিয়ে। আশপাশের গ্রাম ঘুরে সংগ্রহ করেন সরিষা। দুপুর নাগাদ বাড়ি ফিরে শুরু হয় ঘানি টানা। কাঠের গুঁড়ি আর ভারী পাথরের সঙ্গে শরীরের জোরে চলে এই সংগ্রাম। পাশে থেকে সহযোগিতা করেন স্ত্রী ছকিনা বেগম।
দিনে পাঁচ কেজি সরিষা ভেঙে ১ লিটার ২৫০ গ্রাম তেল আর ৩ কেজির মতো খৈল পাওয়া যায়। বিকেলে বাজারে গিয়ে তেল বিক্রি করেন। খরচ বাদে হাতে থাকে দুই থেকে আড়াই শ’ টাকা। এই টাকা দিয়েই চলে সংসার।
গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হলে তাতে দৃষ্টি পড়ে তারেক রহমানের। বয়োবৃদ্ধ মোস্তাকিন আলী দম্পতির পাশে দাঁড়াতে নির্দেশনা দেন আমরা বিএনপি পরিবারকে।
গরু কেনার জন্য তাদের অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়।
বরগুনায় স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছিলেন বাবা। তার এক সপ্তাহের মাথায় বাড়ির পেছনেই মেলে বাদীর লাশ। সারাদেশে এই ঘটনা আলোচিত হয়। পরে তিনটি সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েন নিহতের স্ত্রী। ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা আর নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন তারা। কারণ পরিবারের একমাত্র উপার্জনের মানুষকেই যে হত্যা করা হয়েছে। এ অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ান তারেক রহমান।
তারেক রহমান মোবাইলে ওই নারীর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা সব ধরনের আইনি ও অন্য সব সহযোগিতা করব আপনাকে।
আমাদের সিনিয়র নেতাকর্মীদের বলে দিয়েছি, তারা আপনার সঙ্গে দেখা করবে। আপনার যা প্রয়োজন হয়, তাদের জানাবেন। সামর্থ্য অনুযায়ী বিএনপি আপনার পাশে থাকবে।’
বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান, বিএনপি নেতাকর্মীরা যখন স্বৈরাচার সরকারের ক্রসফায়ারে প্রাণ হারিয়েছেন, তখন তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারেক রহমান। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম, খুনের শিকার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার পুরো দয়িত্ব নিয়েছেন।
তবে এসব মানবিক কাজকর্মের প্রতি তার ঝোঁক দীর্ঘদিনের। আজ থেকে ২৫ বছর আগে ২০০০ সালে তার মানবিক কাজের সঙ্গী ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন।
আতিকুর রহমান রুমন বাসসকে বলেন, তারেক রহমান অনেক বছর আগে থেকে জনহিতকর কাজ করে যাচ্ছেন, বলা চলে তার তরুণ বয়স থেকে। কিন্তু তিনি কখনো সেগুলো কাউকে জানতে দেননি। অনেকটা নিভৃতে সেগুলো করে গেছেন, যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ২০০০ সালের ঘটনা হবে। বগুড়ায় যুবদলের এক কর্মী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। তিনি বিদ্যুৎ অফিসেই কাজ করতেন। এ ঘটনা শোনার পর তারেক রহমান তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ছুটে যান ওই কর্মীর বাড়িতে। সেখানে নিহতের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি দেখান। অর্থ সহযোগিতা করেন।
আতিকুর রহমান রুমন বাসসকে জানান, ২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। সে সময় তারেক রহমান ওয়াশরুমে পড়ে গেছেন এমন একটি খবরে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। বিক্ষোভের মধ্যে পুরান ঢাকার এক সিএনজিচালক সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মারা যান। এ খবর শুনে খুবই মর্মাহত হন তারেক রহমান। বন্দীদশায় থেকেও তাৎক্ষণিক ওই চালকের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো নির্দেশনা দেন। এমনকি তিনি জেলখানার ভেতরে শীতার্ত কয়েদিদের মধ্যে নিজের ব্যবহৃত, মূল্যবান সব পোশাক দান করে দেন। পরে জেল থেকে বের হয়েও সেখানে পাঠিয়েছেন শীতবস্ত্র। তার তত্ত্বাবধানে বহু অসহায় বিপদে পড়া পরিবার নতুন জীবন পেয়েছে।

তিনি জানান, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার লাঠিগঞ্জের তিন মাথার মোড়ে এতিমদের জন্য একটি মাদ্রাসা পরিচালিত হয়। এই মাদ্রাসায় পড়া প্রায় সব শিক্ষার্থীর দৃষ্টিশক্তি নেই বা আংশিক আছে। এই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকও অন্ধ। ২০১১ সালের দিকে এই মাদ্রাসার তথ্য জানতে পারেন তারেক রহমান। তিনি খোঁজখবর নিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব নেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ওই মাদ্রাসা চালাচ্ছেন।
২০১৭ সালের দিকে মাদ্রাসার একটি চক্ষু ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে। তখন পরীক্ষায় দেখা যায়, কিছু শিক্ষার্থী চিকিৎসা পেলে সুস্থ হয়ে উঠবেন। পরে তাদের চিকিৎসা শুরুর নির্দেশনা দেন তারেক রহমান। চিকিৎসা পেয়ে তাদের সাতজন শিক্ষার্থী এখন চোখে দেখতে পান।
সিনিয়র সাংবাদিক রুমন বাসসকে বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নানা সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন তারেক রহমান। দেশের মানুষের জন্য মানবিক কাজ করার তাগিদ থেকেই ২০২৪ সালের ২২ মার্চ গড়ে তোলেন আমরা বিএনপির পরিবার সংগঠনটি।
এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান। প্রধান উপদেষ্টা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যরা হলেন- শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, আলমগীর কবির, আবুল কাশেম, ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা-ই-জামান সেলিম। আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন ও সদস্য সচিব কৃষিবিদ মো. মোকছেদুল মোমিন মিথুন। তারেক রহমানের নির্দেশনায় ২০১০ সাল থেকে আন-অফিশিয়ালি গোপনে দলের নির্যাতিত ও অসহায় মানুষের পাশে রয়েছেন আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্যরা।
মানবিক সংগঠন আমরা বিএনপি পরিবারের সেবামূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন বলেন, সংগঠনটি গঠনের পর এখন পর্যন্ত চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৪০টি জেলার শহীদ ও আহত মিলে প্রায় ৫৬০ জনকে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।
এছাড়া বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে গুম, খুন ও নির্যাতিত পরিবারের মধ্যে ঈদ উপহার বিতরণ করা হয়। ২০২৫ সালের রমজান মাসে গুম, খুন, পঙ্গু, নির্যাতিত ও চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত ১ হাজার ৭৪৫টি পরিবারের মধ্যে ঈদ উপহার পৌঁছে দেয়া হয়। পাশাপাশি ২০০ পরিবারের মধ্যে মাসিক ভাতা ও মাসিক শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করা হয়।
তিনি বলেন, সংগঠনের নাম ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ হলেও সংগঠনটি দলমত নির্বিশেষে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। যেমন রাজধানীর পান্থপথের একটি হাসপাতালে ক্যান্সার আক্রান্ত মা ও তার পঙ্গু ছেলের পাশে দাঁড়ানো, নেত্রকোনার রিকশাচালক, যার শিশু সন্তান হার্টের সমস্যায় চিকিৎসা সহায়তা করা। শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো, ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পাশে দাঁড়ানো, ফেনী, নীলফামারী ও সাতক্ষীরায় অসহায় পরিবারকে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া।
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার জুলহাস মোল্লা। নিজের তৈরি বিমান আকাশে উড়িয়ে সারা দেশে আলোচনায় আসেন। মানুষ জুলহাসের বিমান দেখতে ভিড় জমায়।
তাকে উৎসাহ জোগানোর জন্য তার পাশে দাঁড়ান তারেক রহমান।
উপজেলার জাফরগঞ্জ বাজার এলাকায় গিয়ে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে জুলহাস মোল্লার হাতে অর্থ সহায়তা তুলে দেওয়া হয়। জুলহাস উপজেলার ষাইটঘর তেওতা এলাকার জলিল মোল্লার ছেলে।
এ বিষয়ে আতিকুর রহমান রুমন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জুলহাসের নিজের বিমান তৈরি করে আকাশে উড্ডয়নের বিষয় শুনেই আমাকে দ্রুত সরেজমিন তার খোঁজ-খবর নেয়ার নির্দেশনা দেন। এরই অংশ হিসেবে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে জুলহাসের সার্বিক খোঁজ-খবর নেই।
শুধু মানুষের প্রতি মমত্ববোধেই থেমে থেকে থাকেননি এ নেতা, প্রাণীকূলের প্রতিও তার রয়েছে তীব্র দরদ। মেয়ে জায়মা রহমানের বিড়ালকে ভালোবেসে টেনে নিয়েছেন কোলে। বিড়াল ‘জেবু’র প্রতি তার অগাধ মায়ার দৃশ্য অনেকবার ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোষা বিড়ালের সঙ্গে নিজের ছবির প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বলেন, ‘বিড়ালটি আমার মেয়ের বিড়াল। ও এখন অবশ্য সবারই হয়ে গিয়েছে। আমরা সবাই ওকে আদর করি।’
এছাড়া তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশনায় বিড়াল, কুকুর, সাপসহ নানা পথ প্রাণী ও বণ্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (বাওয়া)। প্রাণীর নিরাপত্তায় গড়ে ওঠা এ সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষকও তারেক রহমান। সংগঠনটি প্রাণীদের রক্ষা ও সংরক্ষণে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। অভুক্ত প্রাণীদের মুখে খাবার তুলে দিতে দেশের নানা প্রান্তে ছুটছেন সংগঠনের সদস্যরা। অসুস্থ প্রাণীদের দ্রুত চিকিৎসায় দিচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা, প্রাণী হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে পাইপলাইনে।
এছাড়া বিড়াল, কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণী হত্যার বিরুদ্ধে সংগঠনের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে আইনি ব্যবস্থা। সম্প্রতি সংগঠনটি রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে ৩২ হাজার ৮০০ টাকা খরচ করে বেজি ও কুকুর-বিড়ালকে খাওয়ানো প্রাণীপ্রেমী রুহুল ভাইয়ের পাশে দাঁড়ায়। এসবই তারেক রহমানের মানবতার জন্য সম্ভব হচ্ছে।
তারেক রহমানের পশু ও প্রাণীর প্রতি উদারতা নিয়ে বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আদনান আজাদ বাসসকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শুধু দেশের নেতাই নন, তিনি অত্যন্ত উদার মনের মানুষ। ছোটবেলা থেকেই পশুপাখির প্রতি তার অবাধ ভালোবাসা।
তার নির্দেশেই বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বিড়াল, কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণী রক্ষায় নানা ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার বেওয়ারিশ কুকুরগুলোর জলাতঙ্কেও টিকার ব্যবস্থা, আহত কুকুরের চিকিৎসা, অভুক্ত কুকুরদের রান্না করা সুষম খাদ্য খাওয়ানো, কক্সবাজারে আলাদা মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে শতাধিক ঘোড়ার চিকিৎসা দেওয়া, সারাদেশে প্রাণীদের রক্ষায় সচেতনমূলক প্রচারণা ইত্যাদি।
তিনি বলেন, বিগত চারমাসে সংগঠনটির উল্লেখ্যযোগ্য অর্জন হলো শুধু ঢাকা জেলা থেকেই উদ্ধার করেছে ৩৫৫টি সাপ। এর মধ্যে ৩৫১টিই ছিল বিষধর। এতে শুধু সাপেরই জীবন বেঁচেছে এমন না, বিষাক্ত সাপের ছোবল থেকে অনেক মানুষ রক্ষা পেয়েছে।
এছাড়া প্রাণী নিয়ে কাজ করছে এমন ব্যক্তির তথ্য তারেক রহমান আমাদের দিয়ে তাদের সহায়তা করতে নির্দেশনা দেন। আমরা তাদের সঙ্গে যোগযোগ করে সেই ব্যক্তিকে অর্থনৈতিকসহ সব ধরনের সহযোগিতা করি। ব্যক্তি তারেক রহমান প্রাণীদের নিয়ে নিয়মিত স্টাডি করেন। একটি দলের প্রধান ব্যক্তি প্রাণী ভালোবাসেন, এটি বণ্যপ্রাণী, পোষাপ্রাণী ও পথপ্রাণীদের জন্য বিরাট প্রাপ্তি।
বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভিন্ন মত, ভিন্ন দলের ঊর্ধ্বে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারেক রহমানের অর্থ সহায়তায় গোপালগঞ্জের এক দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দান করেন। তিনি শেখ মুজিবের আদর্শে বিশ্বাসী, এখন মেজর র্যাঙ্কে রয়েছেন। তিনি যখন লেফটেন্যান্ট হন তখন জানতে পারেন যে তাকে তারেক রহমান অর্থ সহায়তা দিয়েছেন লেখাপড়ার জন্য।
এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে তারেক রহমানের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো আমলজুড়ে গুমের শিকার, খুন হওয়া ও আহতদের পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়ার সম্পূর্ণ খরচ দেওয়া হচ্ছে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। একইসঙ্গে জুলাই আহতসহ অন্য আহতদের কৃত্রিম হাত-পা সংযোজনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন তারেক রহমান।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ইউট্যাব) এ মহাপরিচালক বলেন, তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান যখন ভিনদেশে কার্ডিওলজি নিয়ে লেখাপড়া করছিলেন তখন বাসার সব কাজ কর্ম করতেন তারেক রহমান। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হয়েও তিনি বাসা পরিষ্কার, ডিশ ওয়াশসহ বাসার সব কাজ নিজ হাতে সামলিয়েছেন।
অত্যন্ত সাদামাটা জীবন যাপন করেন এ নেতা।
মানবিক তারেক রহমান সম্পর্কে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাসস’কে বলেন, তারেক রহমান এখন মানবতার দূত হিসেবে কাজ করছেন। অসহায়, দুঃস্থ, জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহত মানুষের সহায়তায় তারেক রহমান এগিয়ে আসছেন, তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন ও সাহায্য সহযোগিতা করছেন।
অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এখন যেন তার নিত্যদিনের কাজ বা দায়িত্ব হয়ে গেছে।
ব্যক্তি তারেক রহমান রাজনীতি, অর্থনীতি বা কূটনীতির ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন জীব প্রেমকে। ১৮ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে তিনি আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন। তাকে অভিনন্দন জানাতে অপেক্ষা করছেন দলের নেতা-কর্মীরা, অপেক্ষা করছেন আপামর জনগণ।