শিরোনাম

দিদারুল আলম
ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : দীর্ঘ ১৮ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার জন্মভূমিতে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ওইদিন বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে দেশের মাটিতে অবতরণ করবে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান। দলের কাণ্ডারীর প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে বিএনপির সর্বত্রই এখন বইছে আনন্দের জোয়ার। উজ্জীবিত সকল নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে চলায় তৃণমূল থেকে কেন্দ্র-সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে প্রাণচাঞ্চল্য। তারেক রহমানের আগমনে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী প্রচরণায় নতুন মাত্রা পাবে।
এদিকে দলের শীর্ষ এই নেতার প্রত্যাবর্তন নির্বিঘ্ন করতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থার আশ্বাস দিলেও দলীয় স্বেচ্ছাসেবক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে বিএনপিও অতিরিক্ত প্রস্তুতি নিয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভীকে সদস্য সচিব করে একটি সংবর্ধনা প্রদান কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও পৃথকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
ঢাকার পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় তারেক রহমানকে দেওয়া হবে সংবর্ধনা। এ নিয়ে মহাব্যস্ত বিএনপির নীতিনির্ধারক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মীরা। তারেক রহমানকে বরণ করে নিতে অপেক্ষায় সারাদেশের লাখ লাখ নেতাকর্মী। এরই মধ্যে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন দলটির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও অভ্যর্থনা কমিটির সদস্য সচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ৫০ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। আজ পূর্বাচলে ৩০০ ফিট এলাকায় নির্মিত অভ্যর্থনা মঞ্চ পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান আসবেন। আজকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন জেলা থেকে লোক আসা শুরু হয়েছে। সুতরাং ২৫ ডিসেম্বর এখানে মানুষের মহা মিলনমেলায় পরিণত হবে। এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। সংবর্ধনার পর তারেক রহমান তাঁর মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যাবেন, যিনি দীর্ঘদিন নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করেছেন এবং বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরপর তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় যাবেন।
আজ সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা দলে দলে স্লোগানে মুখরিত করে প্ল্যাকার্ড হাতে বিএনপির মঞ্চ পরিদর্শনে আসছেন।
তারা জানান, নেতাকে বরণ করে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তারেক রহমানের আগমনকে স্বাগত জানিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে আনন্দ মিছিল করছেন নেতাকর্মীরা। রং বেরঙের টি-শার্ট ও ক্যাপ এবং ব্যানার-ফেস্টুনও তৈরি করা হচ্ছে।
রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বাড়ছে। আজ বিকেলে সেখানে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানাতে তারা বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। তারা রাজধানীতে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় উঠেছেন। পরে পরিবহন সংকট দেখা দিতে পারে এ আশঙ্কা থেকেই আগেভাগে চলে এসেছেন। এসব কথা বাসসকে জানান খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা বিএনপির সদস্য সোহাগ মৃধা, বান্দরবান সদর উপজেলা যুবদলের নেতা দৌলতুল কবির খান, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা যুবদলের নেতা মিজানুর রহমান, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি আবু তাহের।
এদিকে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে তাঁর বাসা ও কার্যালয়। তাঁকে বরণ করে নিতে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় বিশাল গণসংবর্ধনার আয়োজনে বিএনপিকে অনুমতি দিয়েছে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার।
শুধু দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেই নয়, ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকগণও দেশে আসতে শুরু করেছেন। ঢাকার পূর্বাচলে যেখানে তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে, সেখানে গ্রিস প্রবাসী আবদুর রাজ্জাক টিটু, বাহরাইন প্রবাসী ফারুক হোসেন, ইতালি প্রবাসী সফিউল আজম রিপনের সঙ্গে কথা হয় বাসসের।
তারা জানান, প্রিয় নেতা তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের মুহূর্তের সাক্ষী হতে তারা সুদূর প্রবাস থেকে দেশে চলে এসেছেন। নির্মাণাধীন মঞ্চ দেখতে আসা রাজধানীর রামপুরা থানা যুবদল নেতা মো, আরমান বলেন, প্রিয় নেতা তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের খবর শোনার পর তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন। এজন্য সংবর্ধনা মঞ্চ দেখতে তার বন্ধুদের নিয়ে রামপুরা থেকে ৩০০ ফিটে এসেছেন। এখানে সার্বিক কার্যক্রম, নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
তারেক রহমানকে এক নজর দেখতে সারাদেশ থেকে আসা মানুষের ঢলে রাজধানী ঢাকা এক জনসমুদ্রে পরিণত হবে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বাংলাদেশে তারেক রহমানের আগমন এবং গণসংবর্ধনার সাক্ষী হতে সারাদেশের সকল ইউনিটের নেতাকর্মী ঢাকার আসতে শুরু করেছেন।
কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী মো. জসিম উদ্দিন বাসসকে বলেন, দলের কাণ্ডারী তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন শুধু একটি আগমন নয়, এটি বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণা ও বাংলাদেশকে নেতৃত্বে দেওয়ার নতুন গতি সঞ্চার করছে। বিএনপি মা, মাটি ও মানুষের দল। এই দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতার শারীরিক উপস্থিতি দলকে তৃণমূল পর্যায়ে আরো শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করবে।
তিনি বলেন, প্রিয় নেতার প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে এক নতুন বসন্তের সূচনা হয়েছে, যার প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জসিম উদ্দিন জানান, দলের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসার বিষয়ে ইতোমধ্যে জেলা বিএনপি সকল ইউনিটকে নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠক সম্পন্ন করেছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, একটি সুখী-সমৃদ্ধ, বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তারেক রহমানের মতো দক্ষ নেতৃত্ব অপরিহার্য। স্বদেশে তাঁর প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্র যোগ করবে। আমরা তাঁকে বরণ করে নিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, দেশে তারেক রহমানের নিরাপদ আগমন নিশ্চিতে ইতোমধ্যে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকেও নিজস্ব নিরাপত্তা স্কোয়াড গঠন করা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে প্রত্যাবর্তন ঘিরে নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি দলীয়ভাবেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান ঢাকায় পা রাখার পর দলের চেয়ারপার্সনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) তাঁর নিরাপত্তার আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেবে। এজন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় নিয়োজিত সিএসএফ পুনর্গঠন করার পাশাপাশি সদস্য সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। চেয়ারপার্সন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঢাকায় যাতায়াতের জন্য বিশেষ ট্রেন ও অতিরিক্ত কোচ বরাদ্দ করেছে রেলওয়ে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপির কর্মী ও সমর্থকদের যাতায়াতের জন্য ১০টি রুটে স্পেশাল (বিশেষ) ট্রেন পরিচালনা করা হবে এবং নিয়মিত চলাচলকারী একাধিক ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে। এ কারণে স্বল্প দূরত্বের রাজবাড়ী কমিউটার (রাজবাড়ী-পোড়াদহ), ঢালারচর এক্সপ্রেস (পাবনা-রাজশাহী) এবং রোহনপুর কমিউটার (রোহনপুর-রাজশাহী) ট্রেনের আগামী ২৫ ডিসেম্বরের যাত্রা স্থগিত রাখা হবে। ট্রেনগুলো এক দিনের জন্য যাত্রা স্থগিত করায় ওই রুটের যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধার কারণে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
বিএনপির চাহিদার ভিত্তিতে কক্সবাজার-ঢাকা-কক্সবাজার, জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা-জামালপুর, টাঙ্গাইল-ঢাকা-টাঙ্গাইল, ভৈরববাজার-নরসিংদী-ঢাকা-নরসিংদী-ভৈরববাজার, জয়দেবপুর-ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-জয়দেবপুর (গাজীপুর), পঞ্চগড়-ঢাকা-পঞ্চগড়, খুলনা-ঢাকা-খুলনা, চাটমোহর-ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-চাটমোহর, রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী এবং যশোর-ঢাকা-যশোর রুটে বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। এছাড়া নিয়মিত চলাচলকারী একাধিক ট্রেনে চাহিদার ভিত্তিতে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে।