বাসস
  ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:৩১

সুনামগঞ্জের-৩ আসনে বইছে ভোটের হাওয়া

মুহাম্মদ আমিনুল হক

সুনামগঞ্জ, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস): দীর্ঘ ১৭ বছরে ভোট দিতে না পারায় সুনামগঞ্জ জেলার মানুষ ভোটের ইমেজ হারিয়েছিল। নির্বাচন কমিশনারের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের ধারায় উত্তরণে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির মনোনয়নের পর থেকেই সুনামগঞ্জের সকল আসনেই নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়ে গেছে। মনোনয়ন পেয়েই বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মনোনীত প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। রাজনীতির মাঠে শক্ত দল বিএনপির সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করতে কৌশলে কাজ করছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। মনোনয়ন প্রাপ্তদের মধ্যে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী, জামায়াত ও খেলাফত মজলিসের প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। এই আসনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বইছে ভোটের হাওয়া।

সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসন প্রবাসী অধ্যুষিত। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১১ জন।

জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জগন্নাথপুর উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৫১ হাজার ৩ শত ৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৫ হাজার ২৫৮ জন। নারী ভোটার ৭৬ হাজার ১৩১ জন।

শান্তিগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫৪ হাজার ১শ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৮ হাজার ৬১৪ জন, নারী ভোটার ৭৫ হাজার ৪৮৪ জন ও তৃতীয় লিঙ্গ ভোটার ২ জন।

এই আসনের দুইটি উপজেলা হওয়ায় বিএনপির কর্মী-সমর্থক রয়েছে বেশি। পাশাপাশি খেলাফত ও জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের প্রার্থীর কর্মী সমর্থকও রয়েছে। এ আসনটিতে জয় পেতে সব দলের শীর্ষ নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যান। জেলার পাঁচটি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে নির্বাচনী উৎসব সবচেয়ে বেশি সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর—শান্তিগঞ্জ) আসনে।

সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর—শান্তিগঞ্জ) আসন প্রবাসী অধ্যুষিত এই নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে যুক্তরাজ্য বিএনপির সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কয়ছর এম আহমেদকে।

কয়ছর আহমেদ বাসসকে বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হবে আশা করছি। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে। সুনামগঞ্জ-৩ আসনকে নিয়ে আমার স্বপ্ন রয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবায় কাজ করবো। রাস্তাঘাট সংস্কারসহ তারেক রহমানের ঘোষিত ফ্যামিলিকার্ড দেওয়ার মাধ্যমে নারীদের উন্নয়ন করা হবে। বিএনপি সরকার গঠনের মাধ্যমে গণতন্ত্র র্প্ণূতা পাবে। আমি নির্বাচিত হলে কৃষকের স্বার্থে হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ করবো ইনশাআল্লাহ।

নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় থাকা অন্য দুইজোটের প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয় নি। বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে আটদলীয় জোট ও গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের প্রার্থী কে হচ্ছেন, এনিয়ে আলোচনা চলছে নির্বাচনী এলাকাজুড়ে। স্থানীয়রা মনে করছেন জোটের প্রার্থীতার উপরই জমবে নির্বাচনী লড়াই।

এ আসনের বিপুল সংখ্যক ভোটার যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। এ উপজেলার জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে প্রবাসীরা এসে প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠ সরগরম করেন। এবারের জাতীয় নির্বাচনেও এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছাড়াও খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. মাওলানা শাহীনুর পাশা, জামায়াতে ইসলামীর অ্যাড. ইয়াসীন খান, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টির) হয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সৈয়দ তালহা আলম এবং বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন। 

জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী যুক্তরাজ্য প্রবাসী তৌফিক আলী মিনার, যুক্তরাজ্য প্রবাসী এনসিপি নেতা মাসুদুর রহমান মাসুদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাফিজ মুশতাক আহমদ, এনসিপি নেতা ইসহাক আমিনী, গণঅধিকার পরিষদের পারভেজ আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন অ্যাড. খালেদ তুষার ও হোসাইন আহমেদ মিশেল। এদের অনেকেই ইতোমধ্যে মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছেন।

নির্বাচনী এলাকাব্যাপী বিএনপি প্রার্থী কয়ছর এম আহমেদ ছাড়া অন্য কারো জোরালো প্রচারণা নেই। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাড. ইয়াসীন খান, সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন, এবি পার্টির সৈয়দ তালহা আলমকে নিয়ে আলোচনা আছে এলাকায়। তবে জোটের প্রার্থী চূড়ান্তের অপেক্ষায় স্থানীয় ভোটাররা। এ আসন থেকে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদরা সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।

আটদলীয় জোটের প্রার্থী হবার দৌড়ে রয়েছেন, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাড. শাহীনুর পাশা চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শুরার সদস্য, সিলেট মহানগরের পেশাজীবী থানা আমীর অ্যাড. ইয়াসীন খান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের অপরাংশের নেতা হাফিজ মুশতাক আহমদ।

জামায়াতের জেলা আমির মাওলানা তোফায়েল আহমদ খান বলেন, আমাদের দলের প্রার্থী অ্যাড. ইয়াসীন খান এ আসনে গ্রহণযোগ্য রাজনীতিক। তবে আটদলীয় জোটের প্রার্থীতা এখনো চূড়ান্ত হয় নি, প্রার্থীতা চূড়ান্ত হতে আরও কয়েকদিন লাগবে।

খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাড. শাহীনুর পাশা চৌধুরী বলেন, আমি আশাবাদী সার্বিক বিবেচনায় জোটের মনোনয়ন আমি পাবো।

খেলাফত মজলিসের অপরাংশের জেলা কমিটির অফিস সম্পাদক মাওলানা আলী খান বলেন, জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে কমপক্ষে একটি তাদেরকে দেবার দাবি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ-৩ আসনকেই বেশি গুরত্ব দেয়া হচ্ছে।

গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের তিন প্রার্থী রয়েছেন এখানে। এরমধ্যে এনসিপির দুইজন এবং এবি পার্টির একজন। জেলা এনসিপির আহ্বায়ক দেওয়ান সাজাউর রাজা চৌধুরী সুমন বলেন, দলের দুই নেতা মনোনয়ন চেয়েছেন। আবার জোটের শরিক এবি পার্টিতেও সদ্য যোগদান করেছেন জগন্নাথপুরের তরুণ জনপ্রিয় রাজনীতিক সৈয়দ তালহা আলম। দেখা যাক জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা কী সিদ্ধান্ত জানান।