শিরোনাম

আল-আমিন শাহরিয়ার
ভোলা, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পর গণতন্ত্রের কাঙ্ক্ষিত ধারা উত্তরণে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ভোলার রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সচেতন নাগরিকসহ ভোলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সরব হয়ে উঠেছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। ভোলা জেলার ৪টি সংসদীয় আসনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা অনেক আগেভাগেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
বিএনপি ভোলা সদর-১ আসনে এককভাবে মনোনয়ন দিয়েছে-দলের জেলা কমিটির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীরকে। কেন্দ্রীয় বিএনপির মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ফলে এখানে বিএনপিতে প্রার্থীতা নিয়ে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা নেই।
গোলাম নবী আলমগীর এ আসনের বিএনপির সাবেক সাংসদ ও প্রতিমন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাজাহানের ছোট ভাই। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর জেলা বিএনপির নেতৃত্ব তার হাতেই সমৃদ্ধ হয়। তাই প্রার্থী হিসেবে দলের হাই কমান্ডের ঘোষণার পর থেকেই তিনি ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন। দলের নেতাকর্মীরাও সরব হয়ে উঠেছেন নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে। এখানকার বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দল মত নির্বিশেষে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিতে সভা, সেমিনার এবং উঠান বৈঠক করে বেড়াচ্ছেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হয় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী গোলাম নবী আলমগীরের সাথে।
তিনি বাসসকে বলেন, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় ভোলাকে একটি তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আমি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
দলের জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামূল হক বলেন, ভোলা-১ আসন বরাবরই বিএনপির ঘাঁটি। তাই আগামী নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটের মাধ্যমে তাদের সেই ঘাঁটির পিলার আরো শক্তিশালী করবেন।
ভোলা জেলা সদস্য সচিব রাইসূল আলম বলেন-ধানের শীষের প্রার্থী বিজয়ী করতে আমরা শহীদ জিয়া ও আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আদর্শ আর দেশনায়ক তারেক রহমানের দেশ গড়ার ৩১ দফা নিয়ে মাঠঘাট চষে বেড়াচ্ছি।
এদিকে ভোলা-১ আসনে বিএনপির দুর্গে এবার হানা দিতে মাঠে নেমেছেন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। তিনি এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। আগামী নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষ্যে তার দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও ঘরে বসে নেই। তারা জনসংযোগ, উঠান বৈঠক ও সভা সমাবেশ করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিজেপি ভোলার আনাচে কানাচে তাদের দলীয় প্রতীক গরুর গাড়ি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে ফেলেছে জেলা সদরের অলি-গলি, পাড়া-মহল্লাসহ গ্রাম পর্যায়ের প্রতিটি প্রান্তর।
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কথা হয় দলের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের সাথে। তিনি বাসসকে বলেন, ভোলা সদর আসন আমার জম্মভূমি। আমার বাবা মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জুর এ আসনের এমপি ছিলেন। এছাড়া তিনি এরশাদ সরকারের মন্ত্রিসভার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র ছিলেন। আমিও একই আসনের সংসদ সদস্য ছিলাম। তাই এখানকার মানুষের সাথে আমার নারীর টান রয়েছে, আর সে কারণেই আমি এবারও ভোলা সদর-১ আসন থেকে নিজ দলীয় গরুর গাড়ি প্রতীকে নির্বাচন করবো।
তিনি বলেন, এখানকার জনগণের মূল্যবান ভোটে নির্বাচিত হলে ভোলার মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ।
বিজেপির ভোলা জেলার সাধারণ সম্পাদক মোতাছিম বিল্লাহ বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের নিয়ে একেক দিন একেক স্থানে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছি। তাই বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
এ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একক প্রার্থী দিয়েছে। দলটির জেলা নায়েবে আমির অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম এখানে দলের প্রার্থী হয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। জামায়াতের মনোনীত এ প্রার্থী গণমাধ্যমকে বলেন, বিজয়ী হলে এবং জামায়াত সরকার গঠন করতে পারলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অবহেলিত ভোলার সামগ্রিক উন্নয়ন সাধিত করা হবে।
অপরদিকে ভোলার এ আসনটিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে-দলটির অঙ্গসংঠন শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা ওবায়েদ বিন মোস্তফাকে। দলীয় প্রার্থীতা ঘোষণার আগ থেকেই তার প্রচার-প্রচারণা ছিলো চোখে পড়ার মতো।
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কথা হয় এ নেতার সাথে। তিনি বাসসকে বলেন, ইসলামী দলগুলোর জোটবদ্ধ প্রার্থীতা চূড়ান্ত হলে আশা করি এখানে আমি জোটের প্রার্থী হবো। সেক্ষেত্রে জামায়াতের সমর্থন পেলে আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ আসনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে অ্যাড. জিয়াউর রহমান এবং বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) থেকে মো. বশির আহমেদকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
ভোলা জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী এই আসনের ১টি পৌরসভা ও ১৩ টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬৪ জন। এরমধ্যে-পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ২৪০, নারী ভোটার-১ লাখ ৮৪ হাজার ৬২০ এবং তৃতীয় লিঙ্গ ভোটার ৪ জন। তথ্য অনুযায়ী এবার নতুন ভোটার সংখ্যা-১ লাখ ৭ হাজার ৯৯৭ জন।
ভোলা সদরের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে আবেগ আর অনুভূতির কথা জানা গেছে। তারা ভোট নিয়ে তাদের অনেক তীক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানান। বিশেষ করে নতুন ভোটারর এই প্রথমবারের মতো ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন। তবে প্রার্থী পছন্দের বিষয়টি এখনো তারা সিক্রেট রেখেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই আসনে আগামী নির্বাচনে কমপক্ষে ১ লাখ ভোটার রয়েছেন, যারা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এরা নিজেদের পছন্দের প্রার্থী বেঁছে নিতে যেদিকে অগ্রসর হবেন, সেই প্রার্থী-ই বিজয় লাভ করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না এখানকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। তাছাড়া তারুণ্যের নতুন ভোট এখানে বিরাট একটি ফ্যাক্টর বলেও মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।
সব মিলিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ আসনটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের জন্য একটি জটিল সমীকরণ তৈরি করেছে বলে ভোলার প্রবীণ রাজনীতিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মনে করছেন।