বাসস
  ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:২৩
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:৩৪

একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অপেক্ষায় জাতি 

। মুহাম্মদ নূরুজ্জামান। 

খুলনা, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস): তফশিল ঘোষণার মধ্যদিয়ে অনিশ্চয়তা কেটেছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের। এখন একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে গোটা জাতি। 

ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীরা নাওয়া-খাওয়া ভুলে নিজ নিজ এলাকায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। আর ভোটাররাও উন্মুখ হয়ে আছেন ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য। তফশিল ঘোষণার পর খুলনার সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী ও ভোটারসহ সাধারণ মানুষ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ আশা ব্যক্ত করেছেন। 

আজ বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ছয়টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তফশিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।

তফশিল ঘোষণাকে একটি ইতিবাচক দিক উল্লেখ করে খুলনা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হক বাসসকে বলেন, দেশের মানুষের বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনি তফশিল ঘোষণা করা হয়েছে।  বিগত আওয়ামী শাসনামলে এদেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি।  বিশেষ করে তরুণরা ভোট দিতে পারিনি। সেই অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে। মানুষ এখন অপেক্ষা করছে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য।

নির্বাচন কমিশন ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করায় তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে সাংবাদিক এনামুল হক বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, ভয়হীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায় জাতি। আর এটি বাস্তবায়ন এবং শান্তিপূর্ণ করতে হলে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে।  

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বাসসকে বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষ নির্বাচনের জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছে। নির্বাচনের প্রতি মানুষের যে অনীহা ছিল, তফশিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেটি দূর হয়েছে। 

তফশিল ঘোষণাকে গণতন্ত্রের জন্য মাইল ফলক হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এখন জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে- এটিই সবার আকাঙ্ক্ষা। এছাড়া জনগণ যে দেশের মালিক তা তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করবে। এ জন্য তফশিল ঘোষণা একটি বড় উদ্যোগ। আগামীতে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসলে দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে আসবে বলেও মনে করেন তিনি। 

খুলনা-৫ আসনের সাধারণ ভোটার এসএম আমিনুল ইসলাম বলেন, তফশিল ঘোষণায় আমরা আনন্দিত। এখন আমরা আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবো। যারা সুখে-দু:খে আমাদের পাশে থাকবে এবং মানুষ ও সমাজের প্রতি নিবেদিত থাকবে, এমন প্রার্থীকে আমরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে চাই। 

খুলনা-২ আসনের ভোটার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. আসাদুজ্জামান হেলাল বলেন, ২০০৮ সালের পর থেকে আমরা আর ভোট দিতে পারিনি। কারণ আওয়ামী লীগ দেশ থেকে গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার তুলে দিয়েছিল। তারা ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হতো। কিন্তু ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের পতনের পর দেশে এখন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এখন আমরা ইচ্ছামতো পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবো। 

খুলনা-১ আসনের ভোটার শামীম আহম্মেদ বলেন, নির্বাচনের তফশিল ঘোষণায় আমরা খুশি। কিন্তু খুলনাঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ কিছুদিন ধরে অস্থিতিশীল। সন্ত্রাসীদের হাতে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এখন এসব অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। যাতে করে ভোটাররা শান্তিপূর্ণ এবং ভয়হীনভাবে ভোট দিতে পারি। 

এদিকে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে বিএনপির মনোনীত ধানের শিষ প্রতীকের প্রার্থী এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী।

খুলনা-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বাসসকে বলেন, তফশিল ঘোষণায় আমরা উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত। আমরা নির্বাচন কমিশন ও প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই। এতে জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এখন একটি অর্থবহ নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে সবাই। 

এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতির কারণে মানুষ দীর্ঘদিন ভোট দিতে পারেনি। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের কারণে দীর্ঘ দিন পর ভোটের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন ভোটের পরিবেশ, নিরপেক্ষ প্রশাসন এবং নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

অপরদিকে, জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণাকে ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও খুলনা-৫ আসনের দলের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে অবাধ, গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব দলের সম অধিকার নিশ্চিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। আর এ দায়িত্ব প্রশাসনের। 

তিনি বলেন, তফশিল ঘোষণার পর, সব কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে আসে। সেজন্য কোনো দলের বিশেষ প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা সুযোগ দেবেন এমন প্রত্যাশা নয়। সবাইকে সম অধিকার নিশ্চিত করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

তফশিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে খুলনা-৩ আসনের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বাসসকে বলেন, এখন আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই। সবার অংশ গ্রহণে স্বত:স্ফূর্ত ও উৎসবমূলক নির্বাচন চাই। এটিই জনগণের দাবি। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিয়ে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন সবার কাছে আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি। 

তফশিল অনুযায়ী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‎মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমার শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর। ‎মনোনয়ন যাচাই-বাছাই ৩০ ডিসেম্বর। এছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিলের তারিখ ১১ জানুয়ারি, ‎আপিল শুনানি নিষ্পত্তির তারিখ ১২ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি এবং ‎প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। ‎প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুযারি, ‎ভোটগ্রহণ ও গণভোট হবে ১২ ফ্রেব্রুয়ারি ‎সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।