বাসস
  ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৯

আজ ময়মনসিংহ মুক্ত দিবস

ফাইল ছবি

ময়মনসিংহ, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : আজ ১০ ডিসেম্বর, ঐতিহাসিক ময়মনসিংহ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র প্রতিরোধ, কৌশলগত যুদ্ধ এবং হাজারো মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ময়মনসিংহ জেলা পাক হানাদারদের কবল থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়। কিন্তু জেলার এই মুক্তি অর্জন একদিনে সম্পন্ন হয়নি। ৩ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা বীরত্বগাঁথা যুদ্ধ শেষে এ বিজয় অর্জিত হয়েছিল।

মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ জানায়, মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে থাকা ময়মনসিংহ ছিল শত্রুপক্ষের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। উত্তর সীমান্তরেখা দখলে রাখতে পাকিস্তানি বাহিনী এখানে বড় ধরনের প্রতিরক্ষা বলয় তৈরি করেছিল। কিন্তু ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর আগ্রাসী হামলার পরপরই মুক্তিবাহিনী সিদ্ধান্ত নেয় ময়মনসিংহকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মুক্ত করতে হবে।

৩ ডিসেম্বর রাত থেকেই হালুয়াঘাট সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে মুক্তিবাহিনী ছদ্মবেশে অবস্থান নিয়ে শত্রুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। পরে ৯৫ ব্রিগেডের ৫৭ মাউন্টেন ডিভিশনের সহায়তায় রাতভর আক্রমণ চালানো হয়। ৪ ডিসেম্বর ভোরেই হালুয়াঘাট পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয়, যা ময়মনসিংহ মুক্তির প্রথম দ্বার খুলে দেয়। পরদিন ৫ ডিসেম্বর ধোবাউড়া মুক্ত হয়।

অত:পর পিছু হটা পাকিস্তানি বাহিনী ফুলপুর, তারাকান্দা, নান্দাইল ও ত্রিশালে ঘাঁটি স্থাপন করে বড় আকারের প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও মুক্তিবাহিনী সেই সুযোগ দেয়নি। ৭-৮ ডিসেম্বর রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর ফুলপুর ও তারাকান্দা মুক্ত হয়। একই দিনে মুক্ত হয় নান্দাইল। ত্রিশালে শত্রুর অবস্থান ছিল আরও শক্তিশালী। ৮-৯ ডিসেম্বর দুইদিন টানা লড়াইয়ের পর ত্রিশালও মুক্তিযোদ্ধাদের অধীনে আসে।

এদিকে দক্ষিণ-পশ্চিম ও পূর্ব দিকেও ৯ ডিসেম্বর একযোগে আক্রমণ চালানো হয়। দিনশেষে গফরগাঁও, গৌরীপুর, মুক্তাগাছা, ফুলবাড়ীয়া ও ঈশ্বরগঞ্জ এসব গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল শত্রুমুক্ত হয়, ফলে ময়মনসিংহ শহর পাকবাহিনীর জন্য কার্যত ঘেরাও হয়ে পড়ে। 

অপরদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণে রাখা ছিল পাক সেনাদের শেষ কৌশল। কিন্তু ১০ ডিসেম্বর সকালে ভালুকা শত্রুমুক্ত হলে ময়মনসিংহ শহর তাদের জন্য আর নিরাপদ থাকে না। রাত নামার আগেই তারা শহর ছাড়ার প্রস্তুতি নেয়।

৯ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী শম্ভুগঞ্জ হয়ে পলায়ন শুরু করে। পেছনে ফেলে যায় ধ্বংসস্তূপ, রক্তাক্ত জনপদ ও যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা। আগ্রাসন ঠেকাতে তারা উড়িয়ে দেয় শম্ভুগঞ্জ রেল সেতু, কিন্তু এতে দমে যাননি মুক্তিযোদ্ধারা। স্থানীয় জনগণের সহায়তায় মুক্তিবাহিনী ভোরের আগেই শহরে প্রবেশ করে।

অবশেষে ১০ ডিসেম্বর ভোরেই ময়মনসিংহ পুরোপুরি হানাদারমুক্ত হয়। শহরময় ছড়িয়ে পড়ে এক অনন্য উল্লাস। যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ বিজয়ের মিছিল নিয়ে সার্কিট হাউসে সমবেত হন। সেখানে উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজের পতাকা।