শিরোনাম

\ মহিউদ্দিন সুমন \
টাঙ্গাইল, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : আবহাওয়া চাষের অনুকূলে থাকা এবং কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শের ফলে টাঙ্গাইলে এ বছর রোপা আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে। অর্জিত হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা। ফলন ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। ভালো দামের প্রত্যাশাও রয়েছে তাদের।
অগ্রহায়ণের শুরু থেকেই জেলার চাষিরা ধান কেটে ঘরে তোলা শুরু করেছেন। পর্যায়ক্রমে এই ধান কেটে ঘরে তুলছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ৬৩ শতাংশ জমির ধান কেটে কৃষকরা ঘরে তুলেছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। জেলায় নতুন ধান ঘরে তোলার নানা কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত কৃষক ও কৃষাণীরা।
সরেজমিন কালিহাতী উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের দিগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠেজুড়ে চলছে ধান কাটার উৎসব। কৃষকরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে আধুনিক যন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন) ব্যবহার করে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে ভালো খড় পেতে প্রায় ৮০-৮৫ ভাগ কৃষক হাতে ধান কেটে মাড়াই করছেন। কৃষকের উঠোনে জমতে শুরু করেছে নতুন ধান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১২টি উপজেলায় রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ২ হাজার হেক্টর। সরকারি প্রণোদনা ও কৃষকদের উচ্চফলনশীল জাতের বীজ দেওয়ায় এ বছর ১ লাখ ৪ হাজার ৫৮৩ হেক্টরে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে।
এর মধ্যে টাঙ্গাইল সদরে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ হাজার ৪ শত হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৪০৫ হেক্টরে; বাসাইলে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৩৯২ হেক্টরে; কালিহাতিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ৩০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৪৬৫ হেক্টরে।
এদিকে ঘাটাইলে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার ৪০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৪৯০ হেক্টরে; নাগরপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫১০ হেক্টরে, আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ২০১ হেক্টরে; মির্জাপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৮৫০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৮৪৮ হেক্টরে।
এছাড়া মধুপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার হেক্টর, আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ২ হেক্টরে; ভুয়াপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৩০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ১০৫ হেক্টরে; গোপালপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৯০০ হেক্টর, চাষ হয়েছে ১৩ হাজার হেক্টরে; সখিপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ২৬০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ২৬৫ হেক্টরে; দেলদুয়ারে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৪৩০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৪৬০ হেক্টরে এবং ধনবাড়ীতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৯৬০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৯৫০ হেক্টরে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে বিঘা প্রতি তারা ১৪-১৬ মণ হারে ধান ঘরে তুলতেন। এ বছর তা বেড়ে ১৮-২০ মণ হারে ধান পাচ্ছেন। উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় তারা খুশি।
তারা আরও জানিয়েছেন, বাজারে ধানের দাম বেশি পেলে তারা এই মৌসুমে লাভের মুখ দেখবেন। আর বাজার যদি কম থাকে তবে ফসল উৎপাদনের ইচ্ছাশক্তি হারিয়ে ফেলবেন। এদিকে মৌসুমে ধান কেটে দৈনিক পারিশ্রমিকে খুশি দিনমজুরাও।
সহদেবপুর ইউনিয়নের দিগর গ্রামের কৃষক আবু বক্কর বলেন, চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ধানে চিটা হওয়ার কারণে ফলন কম হয়েছে। তারপরেও আশা করছি ১৮/২০ মণ ধান পাওয়া যাবে।
আরেক কৃষক আব্দুর জব্বার জানান, এ বছর আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে সে সময়ে ঝড় বৃষ্টি হওয়ায় তাদের ধানে অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে ক্ষেতের ধানগুলো জমিতে নেতিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে অনেক ধানের চিটাও হয়েছে । তবে সার, বীজ, কীটনাশকে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, তাতে নতুন ধান বিক্রি করে আশা করি লাভবান হতে পারবো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আশেক পারভেজ বাসসকে জানান, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ, আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষে প্রশক্ষিণসহ প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা ও বীজ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার ফলে এবার রোপা আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ৬৩ শতাংশ জমির রোপা আমর ধান কেটে ঘরে তুলেছে কৃষক। ৬২ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমির ধান কর্তন শেষ হয়েছে। ধান কাটার পাশাপাশি দ্রুতগতিতে চলছে মাড়াইয়ের কাজও। জেলার এ বছর হাইব্রিড ও উফশী জাতের আমনের চারা রোপণ করা হয়েছিল। স্থানীয় জাতের আমনের চাষও হয়েছে কিছু এলাকায়। রোগবালাই কম থাকায় সব জাতেরই আশানুরূপ ফলন হয়েছে। আশা করছি ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ ধান কাটা শেষ হবে।