বাসস
  ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫১

বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ চাষে সফল নোবিপ্রবি  

যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে মাছ উৎপাদনের প্রকল্প পরিদর্শন করেন নোবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। ছবি: বাসস

নোয়াখালী, ২৬ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) মাছ চাষে যান্ত্রিকীকরণ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ করে সফল হয়েছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি মৎস্য গবেষকদের নতুন আশার আলো দেখিয়েছে। 

তারা মনে করছেন, এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে একদিকে যেমন একই শ্রম ও ব্যয়ে দ্বিগুণ মাছ উৎপাদন সম্ভব, তেমনি এই মাছ দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। 

নোবিপ্রবির ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে নিবিড় মাছ উৎপাদনের একটি উন্নত মডেল প্রণয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের এ সাফল্য দেখতে গতকাল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল।

পরিদর্শনকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, তেলাপিয়া চাষে সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে এরেটর ব্যবহার করে চাষিরা সাফল্য পাবে। এর ফলে সম্পূর্ণভাবে একটি নবায়নযোগ্য ব্যবস্থা চালু হলো। এই গবেষণার বাস্তব প্রয়োগ সাধারণ মাছ চাষিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে দেশের প্রোটিনের চাহিদার অন্যতম উৎস মাছ আরও সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হবে। একইসাথে পরিবেশবান্ধব মাছ চাষ বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করবে। এই উৎপাদন পদ্ধতি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। 

এ সময় তিনি প্রকল্পের আর্থিক সহযোগী ‘বাংলাদেশ একাডেমি অফ সায়েন্স’ এবং ‘ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার’-এর প্রতিনিধিদের ভবিষ্যতেও এমন গবেষণায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। 

উপাচার্য আরও বলেন, গত সপ্তাহে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ে নোবিপ্রবি ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর মধ্যে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলে উভয় প্রতিষ্ঠান উপকৃত হবে।

গবেষকরা জানান, তিন বছরের গবেষণায় দেখা গেছে সঠিক সময় ও পদ্ধতিতে এরেটর ব্যবহার করলে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় হেক্টরপ্রতি তেলাপিয়া উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণের বেশি পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে হ্যাচারি ও কিছু চিংড়ি ঘের ছাড়া এরেটরের ব্যবহার ছিল সীমিত। চাষিদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, বিদ্যুৎ ব্যয় এবং কোন্ ধরনের এরেটর কোন্ সময় ব্যবহার করতে হবে এ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি থাকায় সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছিল না। এ বাস্তবতা থেকে অধ্যাপক মামুন পুকুরের জলের গুণগত অবস্থা, অক্সিজেন সরবরাহ ও উৎপাদনশীলতা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা করেন। তার গবেষণায় প্রমাণিত হয় পুকুরের তলায় ডিফিউজার ডিস্কের মাধ্যমে বাবল সরবরাহ এবং ওপর থেকে প্যাডেল এরেটর চালালে পানির সব স্তরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন বজায় থাকে।

পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের প্রতিনিধি ও টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তৈয়ব আবু আহমেদ, নোবিপ্রবির ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেহেদী মাহমুদুল হাসান, অধ্যাপক ড. মো.  রাকেব উল ইসলাম, অধ্যাপক ড. দেবাশীষ সাহা এবং গবেষণা সহযোগী মিঠুন রায়সহ শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকবৃন্দ।