শিরোনাম
বেলাল রিজভী
মাদারীপুর, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : জেলার রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩ বছর ধরে অকেজো পড়ে আছে জেনারেটর। প্রায়ই বিকল থাকে এক্সরে, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনের মত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি। নেই পর্যাপ্ত জনবল। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১০০ রোগী ভর্তি থাকে। পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় হাসপাতালের বারান্দা বা মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয় রোগীরা। বহির্বিভাগেও প্রতিদিন প্রায় ৫০০ জন রোগী সেবা নিতে আসেন। সীমিত জনবল নিয়ে উপযুক্ত সেবা দিতে পারেন না চিকিৎসকরা।
সরেজমিন রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ভবনের নিচে থাকা হাসপাতালের একমাত্র জেনারেটরটি ১৩ বছর ধরে অকেজো পড়ে আছে। একমাত্র অ্যানালগ এক্স-রে মেশিনটি প্রায়ই বিকল থাকে।
আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনও নিয়মিত চালু হয় না। বিদ্যুৎ না থাকলে হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে রোগীরা বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে পরীক্ষা করাতে বাধ্য হন। এতে রোগীদের ভোগান্তি ও খরচ দুটোই বাড়ছে।
দীর্ঘদিন মেরামত না করায় খসে গেছে দেয়ালের পলেস্তারা। স্যাঁতস্যাঁতে কোয়ার্টারগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। উপরন্তু নৈশপ্রহরীর পদ শূন্য থাকায় নিরাপত্তাজনিত সমস্যাও দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, ১৯৬৮ সালে মাত্র ১০ শয্যা নিয়ে শুরু হয় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাধীনতার পর ৩১ শয্যা এবং ২০১০ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় হাসপাতালটিকে। বর্তমানে রাজৈরসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলা মিলিয়ে ২ লাখের বেশি মানুষ এখান থেকে সেবা নিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যমান অবকাঠামো এখন অপ্রতুল হয়ে পড়েছে।
রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, এই হাসপাতালে ১৯টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৮ জন। ১১টি জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদের মধ্যে কর্মরত ২ জন, সহকারী সার্জন ৭ জনের স্থলে ৫ জন, আর ডেন্টাল সার্জন রয়েছেন একজন। এ হাসপাতালে কোনো গাইনি বিশেষজ্ঞ নেই। অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ থাকলেও নিয়মিত অফিসে আসেন না। ফলে অপারেশন থিয়েটার থাকলেও সার্জারি কার্যক্রম প্রায়ই বন্ধ থাকে। কার্ডিওলজি, ইএনটি, চক্ষু ও চর্ম বিভাগের বেশিরভাগ পদই শূন্য।
এই হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার বিভা রানী বাড়ৈ জানান, এই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা এত বেশি যে বাধ্য হয়ে মেঝেতেই রোগীর চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। জনবল না বাড়ালে এই হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব নয়।
স্থানীয় বাসিন্দা টুটুল বিশ্বাস বলেন, দ্রুত এ হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা দরকার। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করলে উপজেলার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে ভোগান্তি কমবে।
রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার পীযূষ মণ্ডল বাসসকে বলেন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাধারণত কাটাছেঁড়া রোগী, জ্বর, ঠান্ডা, গ্যাসট্রিক ও ডায়রিয়ার রোগী বেশি আসে। তবে অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীও আসে। অনেক সময় রোগী ভর্তির চাপ হলে শয্যা সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়। হাসপাতালের সক্ষমতার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
আজ সকালে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী তানিয়া বেগম(৪০) বলেন, দুই দিন ধরে আমার মাথা ব্যথা এবং ঠান্ডা-জ্বর। এই কারণে ডাক্তারের কাছে এসেছি। অনেক ভিড়। টিকিট কাটতেও অনেক সময় লেগেছে।
সালাম শেখ নামে আরেক রোগী জানান, গাছ থেকে পড়ে ব্যাথা পেয়েছিলেন। এর আগেও ডাক্তার দেখিয়েছেন। আজ আবার এসেছেন ফলোআপে। তিনি জানান, কিছু ওষুধ হাসপাতাল থেকেই দিয়েছিল। আর কিছু কিনতে হয়েছে।
কবিরাজপুর কলেজের প্রভাষক কাউসার আলম মিঠু বলেন, রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সে সময় জনসংখ্যা ছিল খুবই কম। এখন জনসংখ্যা বেড়েছে সাথে সাথে রোগীর চাপও বেড়েছে। অনেক সময় রোগীদের ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে হয়। বর্তমানে উপজেলার জনসংখ্যার কথা বিবেচনা করে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শামিম আক্তার বাসসকে বলেন, ‘৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়। অথচ জনবল রয়েছে মাত্র ৩১ শয্যার অনুপাতে। পুরাতন ভবনের বিদ্যুৎ ও পানির লাইন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। জেনারেটর নষ্ট। এক্স-রে মেশিন প্রায়ই বিকল থাকে। ফলে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। তবুও আমরা সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের দুরবস্থা সম্পর্কে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুতই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’