বাসস
  ১০ মে ২০২৫, ২১:৪৭
আপডেট : ১০ মে ২০২৫, ২১:৫২

সোমবার থেকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি চায় ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্ররা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের জরুরি সাক্ষাৎ। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ১০ মে, ২০২৫ (বাসস) : ইউরোপের চার দেশের শীর্ষ নেতারা রাশিয়াকে সোমবার থেকে ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাতে সম্মত হয়েছেন।

শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ওই চার নেতার বৈঠক শেষে কিয়েভ এ তথ্য জানিয়েছে।

কিয়েভ থেকে এএফপি জানায়, ‘দ্যা কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’ নামে পরিচিত জোটে অন্তর্ভুক্ত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী   কেয়ার স্টারমার শনিবার কিয়েভে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে চার নেতা জেলেনস্কিকে আলিঙ্গন করতে দেখা যায় এবং মধ্য কিয়েভে নিহত সৈন্যদের স্মৃতিস্তম্ভে আলোক প্রজ্জ্বলনে তার সঙ্গে যোগ দেন।

পরে পাঁচ নেতা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিগা।

এক্স-এ এক পোস্টে তিনি বলেন, ইউক্রেন ও এর মিত্ররা সোমবার থেকে অন্তত ৩০ দিনের জন্য স্থল, আকাশ ও সমুদ্রে সম্পূর্ণ নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত।

রাশিয়া ইউক্রেনে তিন বছর ধরা চলমান যুদ্ধ বন্ধ করতে সম্মত হচ্ছে না। মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও কিয়েভের উত্থাপিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। মস্কো বলছে, পশ্চিমারা কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ না করলে কোনও যুদ্ধবিরতি হবে না।

কিয়েভে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস শুক্রবার সতর্ক করে দিয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে যেকোনো সময়ে ইউক্রেনে ‘বড় ধরনের বিমান হামলা’ হতে পারে।

সরাসরি আলোচনা

কিয়েভ সফরে যাওয়ার পথে মাখোঁ বলেছেন, একবার ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে ‘ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি আলোচনা’ হতে পারে।

মস্কো ও কিয়েভ উভয়ই ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা একে অপরের সঙ্গে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেই এটি সম্ভব হবে।

স্থায়ী শান্তি

ইউরোপীয় চার নেতা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলে তারা রাশিয়ার ওপর চাপ বৃদ্ধি করবেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটা স্পষ্ট, রক্তপাত বন্ধ করতে হবে। রাশিয়াকে অবশ্যই তার অবৈধ আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি আমরা রাশিয়াকে ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি নিয়ে  আলোচনার জন্য সর্বত্র ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানাই।’

তারা রাশিয়াকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকব এবং ইউক্রেনের প্রতি আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে থাকব।’

ইউরোপীয় এই চার নেতা আরও বলেছেন, তারা একটি ইউরোপীয় বাহিনী তৈরির বিষয়ে আলোচনা করবেন,  যাতে যুদ্ধের পরে তারা ইউক্রেনকে নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে।

রাশিয়া বলেছে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে তারা ইউক্রেনে কোনও পশ্চিমা সামরিক উপস্থিতি মেনে নেবে না। দেশটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, প্রস্তাবটি মস্কো ও ন্যাটোর মধ্যে যুদ্ধের সূত্রপাত করতে পারে।

ইউক্রেনের জন্য সুবিধা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির পুতিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মস্কোতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুদ্ধবিরতির তীব্র বিরোধিতা করার একদিন পরই ইউরোপীয় নেতারা কিয়েভ সফরে যান।

শনিবার মার্কিন সংবাদ চ্যানেল এবিসি’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আগে ইউক্রেনের মিত্রদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় যুদ্ধবিরতিতে ‘ইউক্রেন সুবিধা পাবে’।

তিনি জানান, বর্তমানে রাশিয়ার সৈন্যরা বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

পুতিন গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিনের একতরফা যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দেন। কিন্তু পূর্বাঞ্চলে কর্মরত একটি ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী ব্রিগেড বলেছে,  যুদ্ধের তীব্রতা ‘আগের মতোই’ রয়ে গেছে।

ইউরোপ ও  ইউক্রেন যুক্তি দিয়েছে, যুদ্ধবিরতিতে সাড়া দিতে রাশিয়ার ওপর আরও চাপ প্রয়োজন।