বাসস
  ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৯:৩৪

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সমাজ অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি

ছবি: সংগৃহীত

শুভব্রত দত্ত

বরিশাল, ২৮ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ২৪’র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা, মামলা, গ্রেফতার ও হত্যার হুমকির মুখে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সমাজ ২৮ জুলাই অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি। কথাগুলো বলছিলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শাখার অন্যতম ছাত্র সমন্বয়ক সুজয় শুভ। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথেও যুক্ত ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) শাখার শিক্ষার্থী, কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল-এর সাংগঠনিক সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম ছাত্র সমন্বয়ক সুজয় শুভ বাসসকে বলেন, ২৪’র গণঅভ্যুত্থান বরিশাল থেকেই শুরু হয়েছিল বিজয়ের সূচনা। কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে বরিশালে প্রথম ১৮ জুলাই ২০২৪ (ববি)-এর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে বের হতে বাধা প্রদান করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনের মহাসড়কে উঠতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টিয়ার সেল, রাবার বুলেট, ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়তে থাকে। শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন বাহিনীর সদস্যরা।

তিনি বলেন, এরপর ২৭ জুলাই রাতে সেলফোনে ডিজিএফআই-এর হুমকির মুখে নিজেদের লোকেশন না বলে নগরীর সাগরদী ধান গবেষণা কার্যালয়ের সামনে আমি, ভূমিকা সরকার ও মাহমুদুর রহমার সজিবসহ মোট ৩ জন দেখা করি। ডিজিএফআই-এর পক্ষ থেকে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়। কথা বলার এক পর্যায়ে আমরা ২৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বসার প্রস্তাব করি।

২৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক সভাকক্ষে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়া, সাংবাদিক সম্মেলন করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ডিজিএফআই, পুলিশ, এনএসআই ও সিটিএসবি-এর একাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ আলোচনার শুরু থেকেই আন্দোলন প্রত্যাহার না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। 

এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও গ্রেফতারের হুমকি প্রদান করেন। 

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের (শেষ বর্ষ) শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অপর অন্যতম ছাত্র সমন্বয়ক ভূমিকা সরকার বাসসকে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোন আন্দোলন বা সংগ্রামে আমরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সমাজ ছাড় দেই নি। যে কারণে আমাদেরকে বার বার গ্রেফতার হতে হয়েছে।


তিনি আরো বলেন, বৃষ্টিতে ভিজে আর রোদে পুড়ে তারুণ্যের এক অস্থির সংগ্রামী সময়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন ও রাজপথে রক্ত দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে সম্মুখ সাড়িতে দাঁড়িয়ে সহযোগিতাকারী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ’র (প্রধান) সহকারী অধ্যাপক উম্মেস রায় (বামপন্থি রাজনীতিবিদ) বাসসকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে যখন বরিশালে নিরীহ ছাত্ররা শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ সমাবেশ করছিল। ঠিক তখন অকারণে কোন প্রকার উসকানি ছাড়াই হামলা, মামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন ও গ্রেফতার করা হচ্ছিল, তখন আর নিজেকে নিজেই আটকে রাখতে পারছিলাম না। তাই সাধ্য মতো চেষ্টা চালাই শিক্ষার্থীদেরকে সহযোগিতার।

তিনি আরো বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শুধু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নয়, কলেজ ছাত্র ও সাধারণ জনতার পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।