বাসস
  ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৮:৪৬
আমার শহরে জুলাই অভ্যুত্থান

উত্তাল খুলনা, কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার

ছবি: বাসস

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান

খুলনা, ২৮ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে  চব্বিশের ২৮ জুলাই প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল ছিল শহর। একদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে কর্মসূচি, অন্যদিকে আন্দোলনের বিপক্ষে আওয়ামী আইনজীবীদের কর্মসূচি ঘিরে শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায়  খুলনা জেলা কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। নজরদারি বাড়ানো হয় কারাগার ও এর আশেপাশের এলাকায়। কারারক্ষীসহ কারাগারের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়। কারাবন্দিদের সাথে স্বজনদের সাক্ষাত বন্ধ রাখা হয়।

পুলিশের ধরপাকড়ে আন্দোলনকারী ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেপ্তার করা হয় ছাত্রদল নেতাসহ আরো কয়েকজনকে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে বিভিন্ন মামলার আসামি করা হয়। তবে, এসব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই ছাত্ররা আন্দোলন কর্মসূচিতে রাজপথে ছিল সেদিন।

আগের দিন ২৭ জুলাই গভীর রাতে নগরীর ডাকবাংলা ও মুসলমানপাড়া এলাকা থেকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে খুলনার আযম খান কমার্স কলেজ শাখার আহ্বায়ক ছাত্রদল নেতা নাজিম উদ্দিন ভূইয়া, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মো. রিপন শেখ ও  মো. সিরাজ শেখকে গ্রেফতার করা হয়।

পরদিন ২৮ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হরিণটানা থানার এসআই সুব্রত হালদার আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে প্রেরণ করেন।

কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৭ জুলাই জিরোপয়েন্ট অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। সেখান থেকে খানজাহান আলী (রূপসা) সেতু ভাংচুরসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর কাজের ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনার অভিযোগ এনে ওইদিনই হরিণটানা থানায় অজ্ঞাত পরিচয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন এসআই গোপীনাথ সরকার। ওই মামলায় তাদের তিনজনকে  গ্রেফতার দেখানো হয়।

ছাত্রদল নেতা নাজিম উদ্দিন ভূইয়া সেদিনের স্মৃতি স্মরণ করে বাসসকে বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে আমার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু। তখন থেকেই স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছি। ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিধাবোধ করি নাই। রাজপথ ছিল আমাদের ঠিকানা। হাসিনা সরকারকে বিদায় করার জন্য আন্দোলনে ১৭টি বছর পার করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের শুরু থেকেই কমার্স কলেজসহ খুলনা মহানগরের রাজপথে বিভিন্নরকম কর্মসূচি পালন করে আসছিলাম। তখন থেকেই আমি প্রশাসনের টার্গেটে ছিলাম। ২০২৪ সালের ২৭ জুলাই দিবাগত রাত একটার সময় খুলনা সদর থানার ওসি গোপীনাথ এবং সদর থানার এসআই সুকান্তের নেতৃত্বে মোট ১৭ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমার বাসায় আসে। তারা আমার বাসায় ঢোকার সময় বাসার তিনটি গেট ভেঙে ফেলে এবং আমার মামাসহ আমাদের ওই ফ্ল্যাটের লোকজনকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করে। তারা আমার বাসা থেকে নগদ অর্থ নিয়ে যায়।’

কারাগারের স্মৃতিচারণ করে নাজিমউদ্দিন বলেন, ‘কারাগারের জীবনটা সত্যি খুব কঠিন। কারাগারের প্রত্যেকটা দিন মনে হতো যেন একেকটা বছর। কারাগারে বসে আন্দোলনের খবর দেখতাম। মনে হতো, আমি যদি এখন ওখানে থাকতে পারতাম। হঠাৎ করে ৫ তারিখে সরকার পতন হয়। টিভির পর্দায় খবর দেখে আমরা জেলে বসেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাই। আমরা সবাই জেলের ভিতরে মিছিল করি। ঐদিনই সন্ধ্যায় জেল সুপার এসে জানান, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মামলায় যারা যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা পরদিন দুপুরের আগেই মুক্তি পাবে।’

আন্দোলনকারীদের দেশদ্রোহী উল্লেখ করে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ২৮ জুলাই বেলা সাড়ে ১২ টায়  জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের বঙ্গবন্ধু হল রুমে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে। ওই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন অ্যাডভোকেট কাজী বাদশা মিয়া। সঞ্চালনা করেন অ্যাডভোকেট  এস এম তারিক মাহমুদ তারা। প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে নাশকতার অভিযোগে খুলনা মহানগরীর চারটি থানায় পৃথক পৃথক অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। এ চারটি মামলায় সহস্রাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার উপদেষ্টা ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) এর শিক্ষার্থী মিনহাজুল আবেদীন বাসসকে বলেন, ‘খুলনা  বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে সকল শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দিলেও আমরা শহীদ মীর মুগ্ধর স্মরণে খুবি ক্যাম্পাসে গায়েবানা জানাজা আদায়ের উদ্যোগ নেই। প্রশাসন এখানে বাধ সাধলেও ছাত্রদের তোপের মুখে তারা হার মানতে বাধ্য হয়। সব বাধা উপেক্ষা করে মীর মুগ্ধ ভাইয়ের প্রিয় ক্যাম্পাসে তার গায়েবানা জানাজা আদায় করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘২৮ জুলাই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল রোডের বাসাগুলোতে ব্যাপক ধরপাকড় হয়। শহরের নানা জায়গায় অটোরিকশা থামিয়ে ফোন চেক করা হয়। আন্দোলনে যাচ্ছে মনে হলেই তাকে আটক করতো পুলিশ।  সেসময় স্থানীয় সাংবাদিকরা সার্বিক তথ্য দিয়ে আমাদের সহায়তা করেছেন।