শিরোনাম
ঢাকা, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : যৌন কেলেংকারিতে দোষী জেফ্রি এপস্টাইনের প্রধান অভিযোগকারী ভার্জিনিয়া গিফ্রের লেখা ‘নোবডি’স গার্ল’ বিক্রি শুরু হওয়ার একদিন পর গতকাল বুধবার অ্যামাজনের সর্বাধিক বিক্রির তালিকার শীর্ষে স্থান পেয়েছে।
লন্ডন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প গিফ্রেকে শিশু পরিচর্যার চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া থেকে শুরু করে ব্রিটেনের প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গিফ্রের জীবন সম্পর্কে জানার মতো পাঁচটি বিষয় এখানে রয়েছে:
প্রিন্স অ্যান্ড্রু
গিফ্রেকে অ্যান্ড্রুর সাথে যৌন সম্পর্কের জন্য তিনবার পাচার করা হয়েছিল। তার মধ্যে মাত্র ১৭ বছর বয়সে দু’বার। এই কেলেংকারির জন্য স্মৃতিকথায় গত সপ্তাহে রাজপুত্রকে তার পদবি ত্যাগ করতে হয়েছিল।
প্রথমবারের ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০১ সারের ১০ মার্চ। গিফ্রে স্মরণ করেন যে, যখন রাজপুত্র তার বয়স সঠিকভাবে অনুমান করেছিলেন, তার বয়স ১৭ বছর। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মেয়েরা তোমার থেকে একটু ছোট।’
তিনি আরও স্মরণ করেন, সেই রাতে তার পোশাক, একটি গোলাপী ক্রপ-টপ টি-শার্ট এবং তার ‘প্রতিমা’ ব্রিটনি স্পিয়ার্স এবং ক্রিস্টিনা আগুইলেরা দ্বারা অনুপ্রাণিত বহু রঙের জিন্স পেন্ট বেছে নিয়েছিলেন।
এপস্টাইন যখন গিফ্রের কোমরে হাত দিয়ে অ্যান্ড্রুর অশ্লীল ছবি তুলেছিলেন, তখন তিনি এই পোশাকটি পরেছিলেন। যা পরে রাজপুত্রের পতনে ভূমিকা পালন করেছিল। গিফ্রে স্মরণ করেন, তার বাবা রিয়েল এস্টেট মোগল বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি ২০০০ সালের গ্রীষ্মে ফ্লোরিডার ট্রাম্পের মার-এ-লাগো রিসোর্টে লকার-রুম পরিচারকের চাকরি দিয়েছিলেন। তখন তিনি ১৬ বছর বয়সী।
তিনি বলেছেন, স্মৃতিকথায় উল্লেখিত তাদের একমাত্র সাক্ষাতে ট্রাম্প ‘এর চেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ হতে পারতেন না’ এবং তিনি তাকে তার বন্ধুদের জন্য বেবিসিটার হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
গিফ্রে লিখেছেন, অভিজাত শ্রেণির সন্তানদের কথা মাথায় রেখে, ‘শীঘ্রই আমি সপ্তাহে কয়েক রাত অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করেছিলাম’।
রহস্যময় রাজনীতিবিদ
রাজনীতিবিদের পরিচয় নিয়ে অসঙ্গতি রয়েছে এমন এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে গিফ্রে বলেছেন, ওই ব্যক্তি তাকে রাতে ‘নির্বিচারে ধর্ষণ’ করেছে, কিন্ত প্রতিশোধের ভয়ে তিনি তার নাম প্রকাশ করেননি।
স্মৃতিকথার যুক্তরাজ্যের সংস্করণে তিনি তার জীবনের ভয় এবং ‘সাবেক মন্ত্রী’র ধর্ষণের ফলে জ্ঞান হারানো পর্যন্ত শ্বাসরোধের বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু বইয়ের মার্কিন সংস্করণে, পূর্ববর্তী আদালতের ফাইলগুলোর প্রতিফলন ঘটে।
তিনি তার নির্যাতনকারীকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। মার্কিন প্রকাশক নফের কাছে এএফপি’র অনুরোধ সত্ত্বেও এই অসঙ্গতির কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
গর্ভপাত
২০০১ সালের গ্রীষ্মে এপস্টাইন, অ্যান্ড্রু এবং আরও আটজন মেয়ের সাথে একটি যৌনমিলনে অংশগ্রহণের কিছুদিন পরেই গিফ্রেকে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল। তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর। কিন্তু এপস্টাইন তার বয়স সম্পর্কে কর্মীদের কাছে মিথ্যা বলেছিলেন। যখন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন তিনি তাকে জানান, তার গর্ভপাত হয়েছে।
একটি অনুচ্ছেদে গিফ্রে লিখেছেন, এপস্টাইন ‘কখনো কনডম ব্যবহার করেননি।’ তিনি এবং ম্যাক্সওয়েল যারা ‘আমাকে পাচার করেছিলেন’ তারাও কনডম ব্যবহার করেননি। ‘আমি গর্ভবতী হয়ে পড়েছিলাম এবং এমনকি এটা না জেনেও আমার ভ্রূণ হারিয়েছিলাম। এই বিষয়টি আমাকে মেনে নিতে হয়েছিল’।
গিফ্রে ২০০২ সালে রবার্ট গিফ্রের সাথে তার বিয়েকে তার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যার সাথে থাইল্যান্ডে তার দেখা হয়েছিল। যখন তিনি ম্যাসেজ পার্লারে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এটি একটি ‘নতুন অস্তিত্ব’ ছিল যার সাথে মানিয়ে নিতে তিনি মাঝে মাঝে সংগ্রাম করেছিলেন।
এপস্টাইনের পরের জীবন
গিফ্রে ২০০৯ সালে এপস্টাইনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেন। পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি লিখেছেন, তিনি হয়রানির শিকার হন। যার মধ্যে তার কলোরাডোর বাড়ির বাইরে অজানা লোকদের দ্বারা ভয় দেখানোও ছিল এবং ‘প্রতি রাতে গুলিভর্তি রিভলবার রেখে ঘুমাতে যেতেন’।
২০১৫ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করে তার পরিবারের সাথে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, তারা বিপদে আছেন। এপস্টাইন সম্পর্কে জনসমক্ষে প্রকাশ করার অসুবিধা সত্ত্বেও গিফ্রে বলেছিলেন, তিনি তার কথা তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেছিলেন, তিনি ‘অন্যদের নির্যাতনকারীদের শাস্তি দেওয়া সহজ করতে’ চেয়েছিলেন এবং অ্যান্ড্রুর সাথে তার বেশ কয়েক মিলিয়ন ডলারের সমঝোতা থেকে প্রাপ্ত তহবিল যৌন হয়রানির শিকারদের সাহায্য করার জন্য তার সংস্থাকে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
গিফ্রে বলেছেন, ‘আমি ক্রাউনের কিছু অর্থ কিছু ভালো কাজে বিতরণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি’।
তিনি আরও লিখেছেন, স্মৃতিকথায় কিছু অভিযুক্ত নির্যাতনকারীদের নাম না দেওয়ার মূল কারণ ছিল তার তিন সন্তানকে রক্ষা করা।
তিনি লিখেছেন, ‘হয়তো ভবিষ্যতে আমি এই পুরুষদের সম্পর্কে কথা বলতে প্রস্তুত থাকব। কিন্তু এখন নয়’। গিফ্রে গত এপি্েরল ৪১ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেছিলেন।