বাসস
  ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫৮

তিন মাস পর ফের সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। ছবি : বাসস

‎‎বাগেরহাট, ৩১আগস্ট ২০২৫(বাসস): তিন মাস বন্ধ থাকার পর আগামীকাল সোমবার  থেকে আবারও সুগম হচ্ছে সুন্দরবনে প্রবেশের পথ। বনের অভয়ারণ্যসহ পুরো সুন্দরবনজুড়ে নতুন উদ্যমে শুরু হবে জেলেদের মাছ ধরা ও পর্যটকদের আনাগোনা। এরই মধ্যে ১১টি পর্যটনকেন্দ্র ও অভয়ারণ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বন বিভাগ।
‎বন বিভাগ সূত্র জানায়, বন্যপ্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের নদ-নদী, খাল ও বনে মাছ ধরা ও পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এই সময়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে জেলে ও বনজীবীদের নৌযান চলাচলও বন্ধ ছিল।

‎কচুয়া উপজেলার জেলে পল্লি হিসেবে খ্যাত বগা, মাদারতলা, চারাখালি,আন্ধারমানিক, বিষখালি, বাধাল,চিতলমারী উপজেলার উমাজুরি, খাসেরহাট চরবানিয়ারি, মোরেলগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর  গ্রামের জেলেরা দীর্ঘ ৩ মাস সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টের দিন পার করেছে। 

কচুয়া উপজেলার বাসিন্দা মৎস্যজীবী জেলে মওলা বাওয়ালি, রিয়াজুল বাওয়ালি এবং মাদারতলা গ্রামের আব্দুর রশিদের সাথে কথা বলে জানা যায়,  আগামীকাল ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় তাদের মধ্যে আনন্দ ও উদ্দীপনা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে তারা নৌকা, জাল ও মাঝিমাল্লাদের নিয়ে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। 

তারা জানান, গত ৩ মাস সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ থাকায় দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়েছে। বর্তমানে তারা ট্রলার, জাল ও খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত করে সুন্দরবনে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। আগামীকাল থেকে বনজীবী ও জেলের মাছ ধরার কর্মযজ্ঞ সুন্দরবনকে করবে প্রাণবন্ত।

বর্ষাকাল ‎পর্যটনের জন্য অফ সিজন। অক্টোবর-নভেম্বর থেকে এ এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে। এখনও সাগর উত্তাল হওয়ায় পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণ নিরাপদ নয়! আবার কেউ কেউ এসময়ের ভ্রমণের আলাদা রোমাঞ্চ অনুভব ও ভিন্ন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে  সুন্দরবনে যাওয়ার জন্য লঞ্চ প্রস্তুত রাখতে বলেছেন। 

সানি ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী সোহরাব হোসেন বাসসকে জানান, সোমবার ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বহরে ২৫, ৩৫, ৪৫, ৫৫ এবং সর্বোচ্চ ৬০ জন করে ঢাকা, কুষ্টিয়া, মোংলা ইপিজেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সমূহের পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে যাবেন বলে তার লঞ্চ বুকিং দিয়েছেন। তাদের গন্তব্য স্থান আন্ধারমানিক, হার বাড়িয়া, করমজল। খুব সকালে রওনা দিয়ে  সারাদিন ৩টি স্পষ্ট ভ্রমণ শেষে রাতেই গন্তব্যে ফিরবেন।

এদিকে দীর্ঘদিন ঘরে বসে থেকে পরিবার চালাতে জেলেদের অনেক কষ্ট হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কচুয়ার নুর ইসলাম মাতবর বাসসকে বলেন, কয়েক যুগ ধরে বাপ দাদার পেশা মাছ ধরা। তাই এই পেশাতেই আছি। আগামীকাল ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি মিললে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

‎পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটনকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বাসসকে বলেন,  ‘পর্যটকদের স্বাগত জানাতে কটকা, কচিখালী, করমজল, হারবাড়িয়া ও আন্ধারমানিকসহ ১১টি পর্যটনকেন্দ্র সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। লোক সমাগম না থাকায় হরিণ, বানরসহ বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি বেড়েছে।

এখন সকাল-বিকাল হরিণের দৌড়ঝাঁপ দেখা যায়। এ ছাড়া সোমবার থেকে মাছ ধরা ও পর্যটকদের জন্য অনুমতিপত্র (পাস) ইতোমধ্যে  ইস্যু করা শুরু হয়েছে।  সংশ্লিষ্ট সব টহল ফাঁড়িকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

‎বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পর্যটকদের বরণ ও জেলেদের মাছ ধরার জন্য বন বিভাগ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। মৎস্য ও বনজীবীদের সহায়তা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছিল, যা এখন যাচাই করেছে মৎস্য দফতর। আগামী বছর থেকে জেলেরা খাদ্য সহায়তা পাবেন। এ ছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য সুন্দরবনে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

‎রেজাউল করিম বলেন, ‘বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কয়েক বছরের মতো এবারও পহেলা  জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটক ও বনজীবীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ সময়ে সুন্দরবনের ভেতরে সব নদী ও খালে মাছ আহরণে যেতে পারেননি কেউ। এতে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে  নদী ও খালে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি পায়।

সুন্দরবনে মৎস্যসম্পদ রক্ষায় ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানিংয়ের সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর তিন মাসের জন্য বন্ধ থাকে সুন্দরবন।’