বাসস
  ২৮ আগস্ট ২০২৫, ২০:১৮
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৫, ২০:৪০

সিলেটের ‘রাংপানি’ একটি অনাবিষ্কৃত পর্যটন এলাকা

সিলেটের রাংপানি। ছবি: বাসস

সিলেট, ২৮ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় সিলেটের রাংপানি এখনো অনেকটাই লোক চক্ষুর অন্তরালেই থেকে গেছে। 

রংপানির চারপাশের সবুজ এলাকায় যতদূর চোখ যায় চারিদিকে বিস্তৃত পাহাড়, বন ও চা বাগান। এখানকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বহু পর্যটক ভ্রমণে আসেন এবং পাহাড়, নদী ও সাদা পাথরের মায়ায় বাঁধা পড়েন। 

সবমিলিয়ে রাংপানি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি।

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার মোকামপুঞ্জি এলাকায় রাংপানি পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান। জেলার বাইরের পর্যটকদের কাছে জায়গাটি খুব একটা পরিচিত না। তবে পর্যটকরা একবার এর মনোমুগ্ধকর রূপ দেখলে আর কখনো ভুলতে পারবে না।

সিলেট শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে রাংপানি। সেখানে যেতে চাইলে জাফলংয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি অথবা বাসে করে পৌঁছাতে হবে। জৈন্তাপুরের শ্রীপুর পর্যটন কেন্দ্র পার হয়ে গাড়ি থেকে মোকামপুঞ্জি এলাকায় নেমে প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে গেলেই অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি অবলোকন করতে পারবেন।

স্থানীয়রা জানান, এখনো অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা রাংপানি নতুন পর্যটনক্ষেত্র হয়ে ওঠার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাংপানি একেবারেই দুর্গম এলাকা। পর্যটকদের রাংপানি পর্যটন এলাকায় পৌঁছাতে এক কিলোমিটার পাহাড়ি পথ ধরে হেঁটে যেতে হয়। এ ছাড়া প্রায় ২০০ মিটার নিচে নামতে হয়, যেখানে বড় বড় পাথর রয়েছে। এরপর নদীর তীর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাবে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে গতকাল রাংপানি ঘুরতে আসেন রাজধানী ঢাকার গাজীপুর থেকে এক নবদম্পতি। ২২ বছর বয়সী নববধু সাবিনা আক্তার বলেন, ‘কাদা ও পাথরের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে রাংপানি পৌঁছানো আসলেই খুব কঠিন।’

তিনি আরো বলেন, ‘তবে এখানে পৌঁছানোর পর রাংপানির সৌন্দর্য দেখে আপনি অবাক হয়ে যাবেন! সাদাপাথরের মাঝে স্ফটিক-স্বচ্ছ পানিতে ভেসে থাকতে পারবেন।’

খাসিয়া সম্প্রদায়ের সদস্য জয়দেব বলেন, ‘ছোটবেলায় এখানে বাংলা চলচ্চিত্রের শুটিং দেখতাম। কিন্তু রাংপানির ব্যাপারে তেমন প্রচার না থাকার কারণে চমৎকার জায়গাটি লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে গেছে।’ 

স্থানীয় প্রশাসনকে এ স্থানটির প্রচারে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জর্জ মিত্র চাকমা বলেন, শ্রীপুর রাংপানিতে প্রচুর পাথর রয়েছে। পাথরের আকর্ষণে এই এলাকায় বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমণ ঘটে।

তিনি আরো বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেলে কীভাবে আরো ভালোভাবে এটি সংরক্ষণ করা যায় এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুবিধা দেওয়া যায় তা আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করব। এটি পর্যটন এলাকা হিসেবে প্রচার ও প্রসার ঘটলে আয়েরও উৎস হবে।’

সিলেটের পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী আশরাফুল কবির বলেন, ‘রাংপানি হলো শ্রীপুরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি নদীর নাম।’

তিনি আরো বলেন, ‘আগে এখানে অনেক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের শুটিং হয়েছে। নিয়মিত পর্যটকও আসতো। কিন্তু পাথর খনি হিসেবে জায়গাটি ইজারা দেওয়ার পর এর সৌন্দর্য হারিয়ে যায়। গত ৭-৮ বছর ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় রাংপানি তার হারানো সৌন্দর্য ফিরে পেতে শুরু করেছে। জায়গাটিকে আমাদের ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।’

তিনি পর্যটকদের নিরাপত্তা ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাংপানিকে আরো আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।

মেঘালয়ের জৈন্তা পাহাড়ের রাংহংকং জলপ্রপাত থেকে রাংপানি নদীর উৎপত্তি। স্থানীয়দের কাছে এটি শ্রীপুর পাথর খনি নামে পরিচিত।