বাসস
  ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৩০

‘ফুডস ইন ডোর’: স্বাবলম্বী করেছে মুক্তাকে

ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫(বাসস) : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আসলেই বদলে দিতে পারে সমাজের চিত্র। কেবল সমাজ বদল নয়, পাল্টে দিতে পারে ব্যক্তি জীবনও। ফেসবুকের কল্যাণে অনেকের জীবনই ইতিবাচকভাবে পাল্টে গেছে। কেউ কেউ হয়েছেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।  

তাদেরই একজন বিলকিস আরা মুক্তা। সময়টা ২০১৯ সাল, ১৯ আগস্ট। সেদিন মায়ের তৈরি খাবারের ছবি ফেসবুকে পোস্ট দেয় ছেলে। সবাই ভাবে হয়ত খাবার বিক্রির জন্য পোস্ট দেওয়া হয়েছে। আস্তে আস্তে আসতে থাকে খাবারের অর্ডার। শুরুতে কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও কাউকে না করতে পারেন না নারী উদ্যোক্তা মুক্তা। শখ থেকেই মূলত শুরু করেন খাবার তৈরি করে ডেলিভারি দেওয়ার কাজ। সে থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

মুক্তা বলেন, আমার বাচ্চাদের আমি ঘরের তৈরি খাবার দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। সেজন্য সবসময় চেষ্টা থাকত নতুন কিছু তৈরি করার। বাচ্চারাও খেয়ে খুব মজা পেত। একদিন আমার ছেলে আমার তৈরি খাবার তার ফেসবুকে পোস্ট দেয়। তখন কয়েকজন মনে করেছিল হয়ত খাবার ডেলিভারি দেওয়া হবে। তারা সেখানে খাবারের অর্ডার দিতে থাকে। আমিও আর না করতে পারিনি। খাবার তৈরি করে ডেলিভারি দিতে থাকি। মূলত শখের বশেই শুরু করেছিলাম। এভাবেই তৈরি হলো অনেক কাস্টমার। তখন ভাবলাম এটাকে ব্যাবসা হিসেবে নিলে মন্দ হয় না।

মুক্তা বলেন, মাত্র তিন হাজার টাকার মূলধন নিয়ে কাজটা শুরু করি। এখন বিনিয়োগ কয়েক লাখ টাকা। আর মাসিক আয় প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার মতো। সহকারী হিসেবে আছে ছয়জন। এছাড়া ডেলিভারি ম্যান আছে চারজন।

তিনি বলেন, আমি অনেক ধরনের খাবার তৈরি করতে পারি। আমার মেনুতে খিচুড়ি, বিরিয়ানি, পোলাওসহ প্রায় শতাধিক আইটেম রয়েছে। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পিঠা। বিশেষ করে নকশি পিঠা, গোলাপ পিঠা, ডিমের পিঠা, ভাঁপা পিঠা, ম্যারা পিঠা ইত্যাদি।

মুক্তা জানান, বাংলাদেশের প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি জেলায় তার হাতে বানানো শুকনো খাবার কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘শীতকালে কাজের চাপ একটু বেশি থাকে। এসময় বিভিন্ন ধরনের পিঠার অর্ডার থাকে। এ সময় তাই লাভটাও একটু বেশি হয়। তবে আমার চেষ্টা থাকে সামান্য লাভ রেখে বিক্রি করতে। না হলে কাষ্টমারের কষ্ট হয়। আমার এখন বেশ কিছু নিয়মিত কাস্টমার রয়েছে।’

তিনি বলেন, এতদূর আসার পথটা কিন্তু কখনোই মসৃণ ছিল না। অনেকের কাছ থেকে অনেক কটু কথাও শুনতে হয়েছে। সবাই বলতো খাবারই যদি বিক্রি করতে হয় তাহলে এত পড়ালেখা করে মাস্টার্স পাশ করার দরকার কী।

তবে পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছেন সবসময়। পরিবারে আছে স্বামী, দু’ছেলে আর এক মেয়ে।


মুক্তা বলেন, আমি থাকি ফেনীতে। সবসময় চেষ্টা করতাম আমার বাচ্চাদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করতে। অন্যদের জন্যও আমি সবসময় ভালো এবং উন্নতমানের খাবার তৈরি করতে চাই। তিনি তার এই ব্যাবসার একটা স্লোগানও রেখেছেন - ‘সেফ ফুড সেফ লাইফ’। আমার চেষ্টা থাকে বাজারের সবচেয়ে ভালো জিনিসটি কিনে তা দিয়ে খাবার তৈরি করা। তাই দামও একটি বেশী পড়ে যায়। এজন্য আমার রিপিট কাষ্টমারের সংখ্যাটা একটু বেশি। ফেসবুকে আমার খাবারের পেজের নাম ‘ফুডস ইন ডোর’।

তিনি বলেন, আমি খাবার ডেলিভারি দেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন মেলায়ও অংশ নিয়ে থাকি। 

মুক্তা ইলা মিত্র ইয়ুথ ফাউন্ডেশন থেকে শ্রেষ্ঠ নারী উদ্যোক্তা সম্মাননা, ফেনীর নারীদের আড্ডা গ্রুপ থেকে ট্রাষ্টেড সেলার পুরস্কার, ফেনী ওমেন্স ওয়েলফেয়ার থেকে নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার এবং ওমেন্স এন্ড ই-কমার্স থেকে লাখপতি সম্মাননা পেয়েছেন।

তিনি বলেন, আগে আমি স্বামীর ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। এখন আমি নিজেই স্বাবলম্বী। পরিবারকেও সহযোগিতা করি। এরমধ্যে এক ধরনের তৃপ্তি আছে। আমাদের সমাজে অনেক মেয়ে তথা নারী অলস বসে থাকে। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেক ধরনের প্রতিভা রয়েছে। তারা যদি সেসব প্রতিভা কাজে লাগায় তবে সমাজে বেকারের সংখ্যা অনেকাংশেই কমে যাবে।

তিনি বলেন, প্রতিটি কাজের জন্য অধ্যবসায় আর পরিকল্পনা দরকার। প্রত্যেককে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করে এগিয়ে যেতে হবে। দেশের নারী সমাজ পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে এলে কেবল নারীর ক্ষমতায়নই হবে না-দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখতে পারবে তারা।