বাসস
  ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৪০

মাদকমুক্ত নিরাপদ সামাজিক পরিবেশের নিশ্চয়তা চান শৈলকুপার ভোটাররা

শাহজাহান নবীন

ঝিনাইদহ, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের মাঠে এরই মধ্যে উত্তাপ ছড়িয়েছে। বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জোরেশোরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঝিনাইদহ-১ (সংসদীয় আসন-৮১) আসনেও ভোট প্রার্থনা করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এই আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী দুজন। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও বাবু জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু।

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ও দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। অপরদিকে বাবু জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এই দুজনই ভোটের মাঠে বিএনপির মনোনয়নের দৌড়ে সক্রিয় রয়েছেন।

দলীয় কর্মসূচি ঘিরে নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় রয়েছে বাবু জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু। দীর্ঘদিন রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বাবু জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু  শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জে নিয়মিত গণসংযোগ, নির্বাচনি পথসভা, বিএনপির ৩১ দফার লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। 

শৈলকুপার সাধারণ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন তিনি। পাশাপাশি, শৈলকুপাবাসীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, জীবনমান উন্নয়ন, পেশাভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও তরুণদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাবু জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু। বিশেষ করে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা লিফলেট বিতরণ ও জনমত তৈরিতে তিনি ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এরই মধ্যে বাবু জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু  শৈলকুপা উপজেলায় বিএনপির একটি অংশকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সমর্থক গোষ্ঠী। সরাসরি বিএনপির কর্মসূচিতে বাবু জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু অংশ নেয়ায় দলের ভোটার ও সমর্থকদের বিশেষ দৃষ্টিতে রয়েছেন তিনি।

অপরদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা, সংসদীয় আসন-৮১) আসনে বিএনপির হাইপ্রোফাইল মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এ ছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ার আগে থেকেই তিনি বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান।

২০১৮ সালের নির্বাচনে মো. আসাদুজ্জামানের গাড়িবহর ও নির্বাচনি মিছিলে হামলার ঘটনাও ঘটে। ওই সময় দলীয় কর্মীদের তৎপরতায় তিনি রক্ষা পেলেও তার গাড়ি ভাঙচুর করে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। এমনকি সম্প্রতি নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব ছাড়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন। ভোটের মাঠে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন না অ্যাটর্নি জেনারেল। তবে তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সেচ্ছাসেবী ও শিক্ষামূলক সংগঠনের আয়োজনে বিভিন্ন সভা সেমিনারে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। প্রধান অতিথি হিসেবে এসব সভা সেমিনার ও সমাবেশে তিনি ভোটের জনমত তৈরি করছেন।

সামাজিক বিরোধ প্রশমন, জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষার মান বৃদ্ধি, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত জনপদ গঠনে কঠোর হুঁশিয়ারি ও পদক্ষেপের বার্তা দিচ্ছেন তিনি। জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেলে শৈলকুপা সহ ঝিনাইদহ জেলা ও অবহেলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করবেন বলেও ভোটারদের আশ্বস্ত করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

তবে অ্যাটর্নি জেনারেল সরাসরি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ না নিলেও তার রয়েছে ব্যাপক সমর্থকগোষ্ঠী। বিশেষ করে, শৈলকুপা উপজেলা ও থানা বিএনপির শীর্ষ নেতাকর্মীরা মো. আসাদুজ্জামানের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে ভোটের মাঠে ধানের শিষের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 শৈলকুপার কাঁচেরকোল ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা ও সচেতন ভোটার ওমর ফারুক বাসসকে বলেন, বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দুজন প্রার্থীই যোগ্য, মেধাবী ও জনকল্যাণকর। তারা ভোটের মাঠে নিজ নিজ কৌশলে ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটাররা মনে করে, বিএনপি এই আসনে যাকে যোগ্য মনে করবে, তাকেই মনোনয়ন দেবে। ভোটারদের অনেক চাওয়া পাওয়া থাকে না। তারা সামাজিক বিরোধীতামুক্ত নিরাপদ সামাজিক পরিবেশ চাই। যিনিও আগামীতে এমপি হবেন, তার উচিত হবে শৈলকুপার সামাজিক বিরোধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করা। পাশাপাশি মাদক, অনলাইন জুয়া, সন্ত্রাস রোধে জনপ্রতিনিধিদের সামাজিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে।

শৈলকুপার প্রবীণ ভোটার সুবীর কুমার বাসসকে বলেন, এখানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দুজনই যোগ্য। দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, সে-ই এখানে জিতবে। তবে শৈলকুপায় সামাজিক অস্থিরতা ও মাদক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আগামীতে যিনি এমপি হবেন, তাকে এই সমস্যাগুলো সমাধানে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। ভোটার হিসেবে এই জনপদের সামাজিক বিরোধের স্থায়ী সমাধান চাই। 

ভোটার ফাতেমা বেগম ও বীণা রানি বাসসকে বলেন, ভোটাররা নিরাপদে ভোট দিতে চায়। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি, নারীদের নিরাপত্তা ও প্রান্তিক নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য আগামীর এমপিদের কাজ করতে হবে। দেশে একটা নতুন সুযোগ এসেছে। রাজনৈতিক হানাহানি ও ভয়ভীতির পরিবেশ দূর করতে হবে। এজন্য ভোটের আগে নয়, ভোটের পরেও ভোটারদের প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি প্রার্থীদের মনে রাখতে হবে। ভোট শেষ হয়ে গেলেই যেন, এমপিরা সবকিছু ভুলে না যান, এটাই প্রত্যাশা।