শিরোনাম

বিপুল ইসলাম
লালমনিরহাট, ৩ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : শীতের আগমনী বার্তায় সরগরম হয়ে উঠেছে লালমনিরহাটের কৃষিপ্রধান পাঁচ উপজেলা। সদর, আদিতমারী, কালিগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় মাঠে মাঠে শীতকালীন শাকসবজির চাষ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা।
ইতোমধ্যে আগাম জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লালশাক, করলা, শসা, লাউ, সিম, টমেটো ও বেগুনসহ বিভিন্ন দেশি সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে।
কৃষকরা জানান, এ বছর আগাম সবজির ফলন ভালো হওয়ায় পাইকাররা সরাসরি মাঠ থেকে সবজি কিনে নিচ্ছেন। এতে চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাওয়ার পাশাপাশি ভালো লাভও করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শিম, মিষ্টিকুমড়া, করলা, বেগুন, টমেটো, লাউ, মরিচ, আদা ও ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিতে রোপা আমন ধান ও কিছু সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকেরা পানি নিষ্কাশন ও পরিচর্যার মাধ্যমে ক্ষতি কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজির আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। ধীরে ধীরে আবাদ আরও বাড়বে কয়েকগুণ। নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
কৃষকদের মতে, কম সময়ে বেশি লাভ ও নগদ অর্থপ্রাপ্তির কারণে সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে। তবে সার সংকট ও অনুকূল আবহাওয়ার অভাবে ফলন কিছুটা ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কৃষক মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, দুই বিঘা জমিতে বেগুনসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজি চাষ করেছি। বর্তমানে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তবে মাঝে মাঝে সারের সংকটে পড়তে হয়, যা কৃষকদের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা। সরকারের উচিত সময়মতো পর্যাপ্ত সার সরবরাহ নিশ্চিত করা।
আদিতমারী উপজেলার কৃষক আফজাল হোসেন ও আজিম মিয়া বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে আগাম সবজি চাষ করলে ফলন ভালো হয় এবং কীটনাশক ছাড়াই পোকামাকড় দমন করা যায়। ফলে সবজির মান ভালো থাকে, চাহিদাও বেশি।
কালিগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী এলাকার কৃষক মাজারুল হোসেন ও জাহিদুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর ধরে আগাম জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো ও মুলা চাষ করছি। এ বছরও মৌসুমের আগেই ভালো দামে বিক্রির আশা করছি।
সদরের বড়বাড়ী ইউনিয়নের শিম চাষি আব্দুল হাকিম বলেন, ৩০ শতক জমিতে শিম চাষে খরচ হয়েছে ২৬ হাজার টাকা। প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। সব ঠিক থাকলে প্রায় এক লাখ টাকার শিম বিক্রি করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, লালমনিরহাটের মাটি উর্বর ও আবহাওয়া সবজি চাষের জন্য উপযোগী। তাই এখানে সময়ের আগেই শীতকালীন সবজি উৎপাদন সম্ভব হয়। চলতি মৌসুমে আগাম জাতের সবজির ফলন ভালো হয়েছে। অনেক কৃষক ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু করেছেন এবং তারা ভালো দাম পাচ্ছেন।
চলতি মৌসুমে উৎপাদিত আগাম সবজি বাজারে সরবরাহ বাড়লে সাধারণ ক্রেতারাও ন্যায্য দামে তাজা সবজি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা।