শিরোনাম

ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন
নাটোর, ২ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ২৫০ শয্যার নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে সেবা প্রদানের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতবছরের নয় মাসের চেয়ে চলতি বছরের নয় মাসে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ২৭ হাজার। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে হাসপাতালে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৩ জন। ২০২৫ সালের একই সময়ে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দুই লাখ ৭৫ হাজার ৯৭৯ জন। অর্থাৎ রোগীর সংখ্যা ২৭ হাজার বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে হাসপাতাল থেকে সরকারকে রাজস্ব দেওয়া হয়েছে ৮৪ লাখ ৮৪ হাজার ৪৫১ টাকা। এ বছর একই সময়ে রাজস্ব দেওয়া হয়েছে এক কোটি ছয় লাখ ৫৪ হাজার ৮২৭ টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব আয় বেড়েছে ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
জানা গেছে, হাসপাতালে প্যাথলজি, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি পরীক্ষার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবস্থাপনায় প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার সময়সীমা বৃদ্ধি করে ইভিনিং শিফট চালু করা করায় জনসাধারণ সেবা গ্রহণে উৎসাহী হচ্ছেন। আগে প্যাথলজি পরীক্ষার সময় বেলা সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত থাকলেও বর্তমানে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে এবং রাত আটটা পর্যন্ত বিল কাউন্টার খোলা রাখা হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা ইসিজি চালু করা হয়েছে।
এছাড়া ইলেকট্রোলাইটিস, বায়োকেমিস্ট্রি এনালাইজার একটির সঙ্গে নতুন আরও দুটি এবং সেল কাউন্টার একটির সঙ্গে আরও একটি সংযোজন করা হয়েছে। রি-এজেন্টের সরবরাহ পেলে অতি দ্রুত হরমোন পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানান সহকারী প্যাথলজিস্ট আল আমিন।
তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১৩০টি প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা হচ্ছে। রোগী জাহেরা খাতুন জানান, আরবিসি, সিবিসি, ক্রিয়েটেনিন পরীক্ষা করালাম। ই-রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। এই রিপোর্টের উপর ভরসা আছে শতভাগ।
প্যাথলজি, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল পাঁচ লাখ ৫৮ হাজার। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের এই সংখ্যা বেড়ে হয় ছয় লাখ ৪৯ হাজার। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১২ লাখ ৬৪ হাজার।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, মহিলা ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ড নতুন ভবনে সুপরিসর স্থানে স্থানান্তর করায় সেবার মান উন্নয়ন হয়েছে। কোভিড-১৯সহ অন্যান্য সংক্রামক রোগীর জন্য নতুন আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। নতুন ভবনে চারটি কেবিনসহ মোট ছয়টি কেবিনে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। স্টমাক ওয়াশ রুম তৈরি করা হয়েছে। নারী ও পুরুষের জন্য পৃথকভাবে জরুরি টিকিট কাউন্টার চালুর পাশাপাশি চারটি বেড সংযোজন করে জরুরি পর্যবেক্ষণ কক্ষও স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া সার্বক্ষণিক কাজ করছে হেল্প ডেস্ক থাকছে। জরায়ু ক্যান্সার শনাক্তকরণে কলকসকোপি চালু করা হয়েছে। অচল এ্যাম্বুলেন্স সচল হয়েছে। অভিভাবকবৃন্দের অপেক্ষমান পরিসরসহ ইপিআই টিকাদান কক্ষ চালু করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা, জুলাইযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, প্রবীণ এবং গুরুতর অসুস্থ্য ব্যক্তিদের জন্য এক্সপ্রেস কাউন্টার কাজ করছে। অপারেশন থিয়েটার, ফার্মেসি, এনসিডিসি কর্নারের কার্যক্রম পুরোপুরি অটোমেশনের আওতায় আনা হয়েছে।
অটোমেশন কার্যক্রমের সিস্টেম সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. খালেদ মোশাররফ জানান, হাসপাতালের চিকিৎসক এবং অন্যান্য কর্মরত ব্যক্তিদের অটোমেশন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এই প্রশিক্ষণ চলমান আছে। টিকেট কাউন্টার ও বিল কাউন্টারে ই-টিকেট, এনসিডিসি কর্নার ও ডেন্টাল বিভাগে ই-প্রেসক্রিপশন, প্যাথলজিতে ই-রিপোর্ট এবং ফার্মেসি ও অপারেশন থিয়েটারের ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন চালু করা হয়েছে। হাসপাতালের সকল কার্যক্রমকে শতভাগ অটোমেশনের আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি। মোট ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ১৫০ জন রোগীর অনলাইন নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।
২৫০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রথম শ্রেণীর মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ৬১ থাকলেও ১৯ জন চিকিৎসকসহ ২৯টি পদ শূন্য আছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীসহ সর্বমোট ২৬৫টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১৫৬ জন। মোট শূন্য পদের সংখ্যা ১০৯ টি।
প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সাঈদ বিন আল আসাদ বলেন, নাটোর সদর হাসপাতালে প্রবীণদের চিকিৎসা সেবায় একপ্রেস কাউন্টার চালু প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এছাড়া অন্যান্য সেবার মানও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আমাদের দাবি, শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ প্রদান করে ২৫০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা চালু করা হোক।
নাটোর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সোহরাব আলী সম্রাট জানান, বিপুল সংখ্যক রোগীর সমাগমে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছি আমরা। অটোমেশন ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত সফটওয়্যার পরিবর্তন করে স্থানীয়ভাবে দ্রুতগতির সফটওয়্যার সংযোজন করতে যাচ্ছি। এতে কাজে গতি আসবে, রোগীরা লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাবেন।
নাটোরের সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মুক্তাদির আরেফীন বাসস’কে বলেন, শুধু সেবা গ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধি নয়, সেবার মান বৃদ্ধিতেও আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। হাসপাতালের শূন্য পদ পূরণে চেষ্টা অব্যাহত আছে। আশা করি, শিগগির শূন্য পদ পূরণ করে হৃদরোগ, কিডনিসহ অন্যান্য বিভাগের কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে নাটোরবাসীকে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।