বাসস
  ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৫০
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৫৬

আজ থেকে ৮ মাস সমুদ্রে জাটকা ধরা নিষিদ্ধ, জেলেদের পাশে থাকবে সরকার

ছবি: বাসস

\ আজাদ রুহুল আমিন \ 

বাগেরহাট, ০১ নভেম্বর, ২০২৫(বাসস) : আজ থেকে ৮ মাসের জন্য সমুদ্রে জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।এতে বিপাকে সমুদ্রগামী জেলেরা। তবে এসময় ভিজিএফ-এর চালসহ অন্যান্য প্রণোদনা দিয়ে জেলেদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। 

সুন্দরবন, মোংলা ও সাগর তীরবর্তী উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের জন্য দেওয়া এক বার্তায় আজ ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন ২০২৬ পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ মাসের জন্য সাগরে জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ রক্ষায় সাগর এবং সব অভয়ারণ্যে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে না হতেই, মাত্র ৭ দিনের মাথায় পুনরায় ৮ মাসের কঠোর বার্তা দিল সরকার। 

বার্তায় বলা হয়, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ১০ ইঞ্চির কম দৈর্ঘ্যের জাটকা ইলিশ ধরা, কেনা-বেচা, পরিবহণ, বিনিময় বা মজুত সম্পূর্ণভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আইন ভঙ্গ করলে একজন জেলে ১ থেকে ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

তবে এমন বার্তা এ অঞ্চলের ২০ হাজার জেলেকে চিন্তায় ফেলেছে। নতুন করে জাল, সুতা, সরঞ্জাম কিনে সাগর অভিমুখে যাবে এমন সাধ্য তাদের নেই। তাই অর্থনৈতিকভাবে অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। পরিবার পরিজন, স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়ে, আসন্ন রমজানের সিয়াম সাধনা এবং ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপন নিয়ে তারা আগাম দুশ্চিন্তায়শ্চিন্তায় রয়েছেন। 

কচুয়ার বগা জেলে পল্লীর রিয়াজুল বাওয়ালি বাসসকে বলেন, ছোট দুটো ট্রলার নির্মাণ ৭ থেকে ৮ লাখ টাকায় হয় না। ডিজেলের দাম বেশি। ২২ দিনের পর সামান্য যে কদিন হাতে সময় পাওয়া গেছে তারমধ্যে সাগরে নিম্নচাপের কারণে সাগরে জাল ফেলতে পারিনি। এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞা আসায় বিপদে পড়েছি। অন্য মাছ ধরতে হলেও নতুন করে জাল বানাতে হবে। তার জন্য ও টাকা প্রয়োজন।  

মোংলার জেলে আফজাল হোসেন বলেন, ২২ দিনে ২৫ কেজি চাল বরাদ্দ খুবই সামান্য। পরিবার নিয়ে বর্তমান সময়ে চলা দায়। তার মধ্যে এখনও অনেক নিবন্ধিত জেলে চাল পায়নি। সামনের ৮ মাস কীভাবে চলবে তাই নিয়ে চিন্তায় আছি। 

স্থানীয় জেলেরা অলস সময়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা ও নগদ অর্থ বরাদ্দের দাবি জানান।

বাগেরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কেবি আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি অনুপ কুমার বিশ্বাস বলেন, সাগর তীরবর্তী মহিপুর, আলিপুর, পাথরঘাটা, পাড়ের হাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সাগরের কাছাকাছি হওয়ায় অনেক জেলে মাছ বিক্রি করে আবার সাগরে চলে যায়। আমাদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা দাদন নিলেও আড়তে মাছ জমা না দেওয়ায় আমরাও চরম লোকসানের মুখে পড়েছি।
ট্রলার মাঝি মোতালেব বাপ দাদার পেশাকে বেছে নিয়ে গত ৫০ বছর ধরে সাগরে মাছ ধরার কাজ করেন। কিন্তু গত বর্ষা মৌসুমে স্থানীয় আড়তদারকে দাদনের টাকা ফেরত দিতে পারেননি বলে ট্রলারটি রেখে দিয়েছে দাদনদার। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে সাগরে ইলিশ আহরণ করতে না পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এই জেলে আরও জানান, ঘুর্নীঝড়, সাইক্লোন, টর্নেডো, সিডর, জলোচ্ছ্বাস ছাড়াও কোনো আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছাড়াই প্রতিবছর অনেক জেলেকে মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়। লাশ পায়নি এমন পরিবারের সংখ্যা খোদ কচুয়ার বগা পল্লিতেই ৫০ জনের বেশি।

বাগেরহাট সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদৌস আনসারী বাসসকে বলেন, পৌরসভায় বসবাসকারী জেলেদের মধ্যে ইতোমধ্যেই ২২ দিনের চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া চিতলমারী ও মোল্লাহাট উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রাজীব রায়, শরনখোলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অঞ্জন বিশ্বাস, কচুয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল এবং মোরেলগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার বাসসকে জানান, ২২ দিনের চাল ইতোমধ্যে জেলেদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

মোংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো: জাহিদুল ইসলাম বলেন, যারা চাল পাননি তাদের খুব শীঘ্রই চাল দেওয়া হবে। এ ছাড়াও জাটকা ধরায় সরকারের নিষেধাজ্ঞার সময়ে সুন্দরবনের পাদদেশে মোংলা, সমুদ্র তীরবর্তী উপকূলীয় অঞ্চলের ২০ হাজার নিবন্ধিত জেলেকে ভিজিএফের চাল দেওয়া হবে। 

অতিরিক্ত নিবন্ধিত জেলেদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ এবং আগামী বছর নতুন করে জেলেদের নিবন্ধন করা হলে, তাদের অলস সময়ে কিছুটা আর্থিক দুর্ভোগ কমবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।