শিরোনাম

ঢাকা, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশের কৃষি সেচে সৌরশক্তির ব্যবহার উৎসাহিত করতে আজ ইন্টারন্যাশনাল পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট (আইডব্লিউএমআই) ‘সোলার এনার্জি ফর এগ্রিকালচারাল রেজিলিয়েন্স (সোলার) ফেজ-২’ প্রকল্পের উদ্বোধনী কর্মশালা আয়োজন করে।
কর্মশালা শেষে এক বিবৃতিতে আইডব্লিউএমআই জানায়, 'এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো সামাজিকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জলবায়ু-সহনশীল সৌর কৃষি-প্রযুক্তির জন্য সহায়ক পরিবেশ শক্তিশালী এবং বিনিয়োগের সুযোগ উন্মোচন করা।' কর্মশালায় সরকারি ও বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সোলার কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশে আইডব্লিউএমআই-এর গবেষণা ডিজেলচালিত সেচ পাম্প থেকে সৌরচালিত পাম্পে রূপান্তরের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছিল। সেই সফলতার ভিত্তিতেই দক্ষিণ এশিয়ায় সোলার ফেজ-২ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।
'সোলার ফেজ-২ শুধুমাত্র ডিজেল পাম্পের পরিবর্তে সৌর পাম্প স্থাপনের প্রকল্প নয়,' বলেন আইডব্লিউএমআই-এর সিনিয়র গবেষক ও প্রকল্প প্রধান ড. দরশিনি রাভীন্দ্রনাথ।
তিনি আরও বলেন, 'এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো কৃষিতে জ্বালানির ব্যবহারকে নতুনভাবে কল্পনা করা — যাতে তা কৃষকের উপকারে আসে, নির্গমন কমায় এবং জলবায়ু ঝুঁকির প্রতি সহনশীলতা গড়ে তোলে।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কর্মশালার অংশগ্রহণকারীরা সৌর অর্থায়ন দ্রুততর করা, ‘এগ্রিভোলটাইক্স’-এর মতো উদ্ভাবনী মডেল সম্প্রসারণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নীতিগত সহায়তা অন্তর্ভুক্ত করার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।
উন্নয়নশীল দেশে সরকার, নাগরিক সমাজ ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বে পানি সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করা বৈশ্বিক গবেষণা সংস্থা আইডব্লিউএমআই জানিয়েছে, তারা দক্ষিণুদক্ষিণ সহযোগিতার মাধ্যমে এখন পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া ও কেনিয়াতেও কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।
আইডব্লিউএমআই এবং বাংলাদেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (আইডিকল)-এর গবেষণায় দেখা গেছে, সৌরচালিত সেচ পাম্প ব্যবহার করলে শুধু ডিজেলের ব্যবহারই কমে না, কৃষকের সেচ ব্যয়ও ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়।
গবেষণায় আরও জানা যায়, সৌরশক্তি সময় ও শ্রম সাশ্রয়ী সেচ ব্যবস্থার সুযোগ তৈরি করে যা বর্ষা বিলম্বিত হলে অতিরিক্ত সেচ নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশে এখনো অধিকাংশ সেচ নির্ভর করে আমদানি করা ডিজেলের ওপর। তাই জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার ও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে দেশটি সৌরচালিত সেচ পাম্পে (এসআইপি) বিনিয়োগ করছে।
সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশন (এসডিসি)-এর সহায়তায় ঢাকার একটি হোটেলে আইডব্লিউএমআই সোলার ফেজ-২ কর্মসূচির উদ্বোধনী কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ও টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (শ্রেডা)-এর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, উন্নয়ন সহযোগী, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরাও বাংলাদেশে সৌরচালিত সেচের সম্প্রসারণ ও শক্তি, পানি, খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করার পথ নিয়ে আলোচনা করেন।
আইডিকল প্রবর্তিত 'ফি-ফর-সার্ভিস' মডেলটি একটি অগ্রণী সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের পদ্ধতি হিসেবে স্বল্পমূল্যে ক্ষুদ্র কৃষকদের সেচ সুবিধা প্রদান ও বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
রাভীন্দ্রনাথ বলেন, এই কর্মসূচি সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে — নারী, যুবক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সৌর কৃষি প্রযুক্তির সুযোগ ও সুবিধা পেতে সক্ষম করে তুলছে।
তিনি আরও জানান, 'গাইবান্ধার চরাঞ্চল ও ঠাকুরগাঁও জেলায় আমাদের প্রথম পর্যায়ের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে—নারীরা যখন পোর্টেবল মাইক্রো সৌর সেচ পাম্প ব্যবহার করেছেন, তখন তারা গৃহস্থালির কাজের সময় বাঁচিয়ে মাছ চাষের মতো আয়বর্ধক কাজে অংশ নিতে পেরেছেন।'
বাংলাদেশ ও ভারতের আইডব্লিউএমআই কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. অলোক সিক্কা বলেন, অংশীদারিত্বই এই রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করার মূল চাবিকাঠি, আর বাংলাদেশের সৌর সেচ প্রচারণা শক্তি, পানি ও জলবায়ু লক্ষ্যের সমন্বয়ের এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, 'সোলার ফেজ-২ এর মাধ্যমে আইডব্লিউএমআই ও অংশীদাররা যৌথভাবে উদ্ভাবনী অর্থায়ন মডেল ও সৌর উপযোগিতা ম্যাপিং-এর মতো বাস্তবসম্মত সমাধান তৈরি করতে চায়, যাতে এই রূপান্তর টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়।'
সিক্কা আরও উল্লেখ করেন, দক্ষিণ এশিয়ায় আইডব্লিউএমআই-এর গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, সঠিক প্রণোদনা ও শাসন কাঠামো থাকলে সৌর সেচ টেকসই পানি ব্যবস্থার হাতিয়ার হতে পারে এবং তা জলবায়ু সহনশীলতার পথে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
কর্মশালার প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার কারী বলেন, 'কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, আর সেচ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মূল ভিত্তি।'