বাসস
  ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ২১:৫২

শুঁটকি মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়ছে প্রচুর মাছ, খুশি জেলেরা

ছবি : বাসস

খুলনা, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : শুঁটকি মৌসুমের শুরুতেই বঙ্গোপসাগরের উপকূলে জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। এতে জেলেদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে।

সুন্দরবনের দুবলাচর ও আলোরকোলসহ আশপাশের চরগুলোতে ৫০ হাজারেরও বেশি জেলের সমাগম ঘটেছে। তারা চরগুলোতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে মাছ ধরছেন।

চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে শুঁটকি মৌসুমের  মাছ ধরা শুরু হয়েছে।  মৌসুম চলবে আগামী ৫ মার্চ পর্যন্ত। 
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের আওতাধীন আলোরকোল, মাঝেরকিল্লা, নারিকেলবাড়িয়া ও শেলারচরে বিস্তৃত দুবলা ফিশিং ভিলেজের আয়তন প্রায় ৮১ বর্গমাইল।

দেশের মোট শুঁটকি মাছের অন্তত ৮০ শতাংশই আসে দুবলাচর এলাকা থেকে। দুবলাচরে ইতোমধ্যে ১০ হাজারের বেশি জেলের সমাগম ঘটেছে। তারা বঙ্গোপসাগর থেকে লইট্টা, ছুরি, চিংড়ি, রুপচাঁদা ও পোয়াসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরে শুকাবেন।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ জানিয়েছে, এ মৌসুমে আলোরকোল, অফিসকেল্লা, নারিকেলবাড়িয়া ও শেলারচরে অবস্থানরত ১০ হাজারেরও বেশি জেলের জন্য পাস ও পারমিট ইস্যু করা হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী  বলেন, এই মৌসুমে ১ হাজার ৪০টি অস্থায়ী ঘর, ৮০টি প্রয়োজনীয় দোকান ও ৬১টি মাছ রাখার ঘর নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, জেলেদের নিজস্ব উপকরণ নিয়ে ঘর তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে বনাঞ্চলের গাছপালা ব্যবহার না করা হয়।

চলতি মৌসুমে দুবলাচরের শুঁটকি মাছ কার্যক্রম থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। গত মৌসুমে মোট ৬৩ হাজার ৫৪১ দশমিক ৬২ কুইন্টাল শুঁটকি মাছ উৎপাদিত হয়েছিল।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বন্যপ্রাণী শিকার বা অবৈধভাবে গাছ কাটা ঠেকাতে বনরক্ষীরা কড়া নজরদারি চালাচ্ছে। জেলেরা ইতোমধ্যে গাছ না কেটে অস্থায়ী আশ্রয়, মাছ শুকানোর মাঠ এবং মাছ নামানোর জন্য ছোট জেটি তৈরি করেছেন।

এসব নিয়ম ভঙ্গ করলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বন বিভাগের পক্ষ থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণখালী এলাকার জেলে মহিউদ্দিন মোল্লা বলেন, এই চার মাসের মাছ ধরা দিয়েই আমরা সারা বছরের সংসার চালাই। কিন্তু এখন বন এলাকায় ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে ভয় কাজ করছে।

আলোরকলের দুবলা ফিশারম্যান্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, দুবলারচরে শুঁটকি মৌসুম ভালোভাবেই শুরু হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে প্রথম দুই দিনেই জেলেরা প্রচুর মাছ ধরছেন। এ বছর দুবলারচর এলাকায় ১০ হাজারেরও বেশি জেলে এসেছেন।

তিনি আরও বলেন, জেলেদের মধ্যে জলদস্যু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। জলদস্যু দমন করতে আমরা পুলিশ, কোস্টগার্ড ও রাবের টহলের জন্য আবেদন করেছি।

রামপালের শেলারচর ফিশারম্যান্স কো-অপারেটিভের সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, তারা প্রতি বছরই শুঁটকি ব্যবসা করতে ঋণ নেন।

তিনি বলেন, এ বছরও আমরা টাকা ধার করে শেলারচরের শুঁটকি অঞ্চলে এসেছি। জেলেরা ইতোমধ্যে মাছ ধরা শুরু করেছেন।

আলোরকল ফিশারম্যান্স কো-অপারেটিভের সভাপতি মোতাসিম ফারাজী  বলেন, মৌসুমের প্রথম দিনে কেউ কেউ অস্থায়ী ঘর তুলতে ব্যস্ত ছিলেন, আবার কেউ মাছ ধরতে সমুদ্রে গেছেন। রোববার ও সোমবার ভালো মাছ ধরা পড়ায় তারা অনেক খুশি।

আলোরকল টহল ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত বনকর্মী তানভীর হাসান ইমরান বলেন, জেলেরা পৌঁছেই সময় নষ্ট না করে মাছ ধরতে সমুদ্রে নেমে গেছেন। অনেকে ইতোমধ্যে বাঁশের চাটাই বা প্লাস্টিকের চাদরে মাছ শুকানো শুরু করেছেন।