বাসস
  ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:০৮
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৫৫

জুলাই সনদে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে ভোলাবাসী 

\ আল-আমিন শাহরিয়ার \

ভোলা, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে গতকাল (শুক্রবার) স্বাক্ষর হলো ঐতিহাসিক জুলাই সনদে। 

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা এ সনদে স্বাক্ষর করেন।

প্রতীক্ষিত এ সনদের স্বাক্ষরকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ভোলাবাসী। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ জুলাই সনদ তৈরিতে সব মহলকে এক জায়গায় আনতে পারায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে সাধুবাদ জানান।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলহাজ্ব মো. রাইসূল আলম বাসস'কে বলেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত জুলাই সনদটির ওপর জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। 

তিনি মনে করেন, এ সনদের পথ ধরেই আগামীর নতুন সূর্য উদিত হবে। পাশাপাশি আগামী প্রজম্ম নতুন একটি বাংলাদেশ উপহার পাবেন বলেও মনে করেন এই নেতা। 

জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, জুলাই সনদের স্বাক্ষরকে আমরা ভোলাবাসী ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি। তবে এ স্বাক্ষর তখনই ফলপ্রসূ হবে যখন এটার আইনি ভিত্তি দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার ও দেশপ্রেমিক দলগুলোর সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা প্রত্যাশা করি।

ভোলার সিনিয়র সাংবাদিক অ্যাডভোকেট নজরুল হক অনু বলেন, আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে জুলাই সনদ হবে এক যুগান্তকারী দলিল। প্রকৃত স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ বিনির্মাণে এ সনদকে পাহাড়া দিয়ে রাখতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) জেলা সভাপতি আমিরুল ইসলাম রতন বলেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে বলে মনে করি। 

দৈনিক ভোলার বাণী'র সম্পাদক মো.মাকসুদুর রহমান বলেন, জুলাই সনদে অধিকাংশ দল স্বাক্ষর করেছেন, এ খবর খুবই আনন্দের। তবে বাস্তবে এই আনন্দ যাতে বিষাদে রুপ না নেয়, সেদিকে দেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সজাগ ও সোচ্চার থাকতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ভোলা জেলার অন্যতম সমন্বয়ক রাহিম ইসলাম বাসস'কে বলেন, জুলাই বিপ্লবে ঢাকার রাজপথে ভোলার বিভিন্ন উপজেলার ৪৭টি তাজা প্রাণ শহীদ হয়েছেন। জেলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছেন ছাতা মেরামতকারী জসিমউদ্দিন ভাই। সব মিলিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমরা হারিয়েছি আমাদের অর্ধশত ভাই-বোনকে। এ সনদ তখনই স্বার্থক হবে, যখন এটির প্রতিফলন স্বজনহারা পরিবারগুলোতে দেখতে পাব।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বাসস'কে বলেন, জুলাই সনদ আগামীর জন্য যুগান্তকারী মাইলফলক হয়ে থাকবে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কালের অকাট্য দলিল হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিবে। 

উল্লেখ্য, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ হলো ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের একটি দলিল। যার মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ হলো রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে ঐকমত্যের রাজনৈতিক দলিল।

গত বছরের জুলাইরয় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শুরু হওয়া আন্দোলন এক পর্যায়ে রূপ নেয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ও দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সেই থেকেই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্র ও তরুণেরা অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়ার দাবী জানিয়ে আসছেন। তারা একাধিকবার নিজেরা ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগও নিয়েছিলেন। একপর্যায়ে সরকার বিষয়টি নিয়ে সব দলের সঙ্গে বৈঠক করে এবং জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ি, শুক্রবার (১৭অক্টোবর) দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দলের নেতারা।