শিরোনাম
ঢাকা, ১১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের জনগণ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের হাতে জাতির ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব অর্পণ করেনি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ বিশ বা ত্রিশটি রাজনৈতিক দলকে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ম্যান্ডেট দেয়নি। বাংলাদেশের আগামী ২০ বা ৫০ বছরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমাদের নেই।’
রাজধানীর মৌচাকে অবস্থিত কসমস সেন্টারে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা : নির্বাচন ও সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে কসমস ফাউন্ডেশন ও ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)।
জ্যেষ্ঠ বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, গণতন্ত্র কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে, কিংবা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কীভাবে চলবে— এগুলো নির্ধারণের দায়িত্ব কেউ আমাদের দেয়নি। তাই আপনাকে ও আমাকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে প্রবেশ করতে হবে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে কাজ করতে হবে এবং জনগণের সঙ্গে সংস্কার নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’
গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলায় ফিরে আসার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে খসরু বলেন, ‘যদি আমরা গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাই এবং পরবর্তীতে পরিবর্তন আনতে চাই, তাহলে প্রথম দায়িত্ব হলো বর্তমান সংবিধানের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করা এবং গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপন করা।’
যেসব রাজনৈতিক দল বলে থাকে ‘আমাদের দাবি না মানলে এটা বা সেটা হবে না,’ তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যদি আপনারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তবে জনগণের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ও সংলাপের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। এটাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, এবং এটি চলমান... এখানে আলোচনা ও গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমেই সবকিছু সমাধান হবে।’
যারা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থার দাবি তুলছেন তাদের উদ্দেশে খসরু বলেন, ‘জনগণ পিআর সম্পর্কে কিছুই জানে না। তাই যারা এটি দাবি করছেন, তাদের উচিত এটি নিজেদের ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা, জনগণের কাছে তুলে ধরা এবং জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়ার পরই তা বাস্তবায়ন করা।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো গ্রহণ করতে হবে এবং সেগুলোর ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে হবে। যেসব বিষয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি, সেগুলো নিয়ে আলোচনা চলবে; পরবর্তীতে যে দল সরকার গঠন করবে, তারা সবার সঙ্গে মিলে সেগুলোর ওপর কাজ করবে।’
দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হবে। ভিন্নমত সহ্য করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। যদি রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হয়, সহনশীলতা না বাড়ে এবং ভিন্ন মতকে সম্মান না করা হয়, তাহলে সংঘাতপূর্ণ রাজনীতির মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্র কখনোই এগোতে পারবে না।’
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘যদি আমরা আজ কোনো ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ইচ্ছামতো কাজ করি, তবে পরিস্থিতি আগের সরকারের মতোই হবে। সেই ফ্যাসিস্ট সরকার নিজের ইচ্ছেমতো সবকিছু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘কিছু রাজনৈতিক দল সংসদে আরও কিছু আসন পাওয়ার আশায় সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার দাবি তুলছে।’
ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চলুন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই এবং এই দেশ ও জনগণের কল্যাণে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করি।’
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।