বাসস
  ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৫৭

জরুরি পশুস্বাস্থ্য সেবায় যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে 'মোবাইল ভেট ক্লিনিক'

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দেশের ৩৬০টি উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ পশুচিকিৎসা ক্লিনিক বা মোবাইল ভেট ক্লিনিক (এমভিসি) নেটওয়ার্ক চালু করেছে যা সরাসরি কৃষকদের দোরগোড়ায় জরুরি পশুস্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিচ্ছে।

সময়মত চিকিৎসার অভাবে গবাদিপশুর মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করছে এই উদ্যোগটি যা গ্রামাঞ্চলে পশুপালনকারীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটি চ্যালেঞ্জ ছিলো।

প্রতিটি এমভিসিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ এবং ডায়াগনস্টিক সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত একটি ডাবল-কেবিন পিকআপ ভ্যান রয়েছে, যার মাধ্যমে পশুচিকিৎসকরা জরুরি আহ্বানে দ্রুত সাড়া দিয়ে সাহায্য করছেন। কৃষকরা হটলাইন নম্বর- ১৬৩৫৮ ডায়াল করে এই পরিষেবাগুলি নিতে পারছেন। হটলাইনে কল করে জানানোর পরপরই পশুচিকিৎসা দল ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।

যেহেতু কৃষকদের অসুস্থ পশুদের উপজেলা পশুপালন অফিসে পরিবহন করতে হচ্ছে না- সেহেতু সময় ও জীবন দুটোই বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এম আবু সুফিয়ান বলেন, "এই উদ্যোগের সুযোগ-সুবিধাগুলি এমনভাবে বিন্যাস করা হয়েছে যাতে জরুরি ফোন কল পাওয়ার সাথে সাথেই পশুচিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবা দিতে পৌঁছাতে পারেন।"

তিনি আরও বলেন, সময়মতো চিকিৎসা সহায়তা না পেয়ে পূর্বে অনেক গবাদিপশু প্রসবকালীন জটিলতা, জরায়ু স্থানচ্যুতি এবং দুধ জ্বরের মতো জটিলতায় মারা যেত। এখন, মোবাইল ক্লিনিকগুলো এই ধরনের সমস্যা রোধ করতে কাজ করছে। ফলে পশুস্বাস্থ্য এবং কৃষকদের আয় -উভয়েরই উন্নতি হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) আওতায় মোবাইল ক্লিনিকগুলো চালু করা হয়েছে।

এলডিডিপির প্রধান কারিগরি সমন্বয়কারী ডা. মো. গোলাম রব্বানীর মতে, সরকার ৬১টি জেলার ৩৬০টি উপজেলায় এই পরিষেবা চালু করার জন্য ১৮৪ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেছে।

তিনি আরও বলেন যে, আগামী বছর বাদবাকি উপজেলা এবং নয়টি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কার্যক্রম চালানোর জন্য আরও ১১৫টি এমভিসি চালু করা হবে।

এলডিডিপি পরিচালক মো. আব্দুর রহিম এই উদ্যোগকে দেশের পশুসম্পদ খাতের জন্য একটি বড় অর্জন হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, "এখন থেকে পশুর অসুস্থতার ক্ষেত্রে চিকিৎসার অভাবে কৃষকদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে না। কল করার সাথে সাথেই মোবাইল ক্লিনিক তাদের কাছে পৌঁছে যাবে।" 

প্রতিটি এমভিসি গাড়িতে বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং যন্ত্রাদি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক গর্ভাবস্থা সনাক্তকরণের জন্য একটি পোর্টেবল আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন, বৈদ্যুতিক ম্যাস্টাইটিস এবং অস্ট্রাস ডিটেক্টর, সার্জিক্যাল কিট, ম্যানিপুলেটিভ ডেলিভারি এবং পোস্টমর্টেমের জন্য সরঞ্জাম, অর্থোপেডিক সরঞ্জাম, ডিহর্নিং ডিভাইস, পাকস্থলীর টিউব, দড়ি ও চেইন, পরিমাপ করার টেপ, ওজন মাপার স্কেল, গাম বুট, অ্যাপ্রোন এবং এমনকি একটি ছোট রেফ্রিজারেটর এবং স্যালাইন স্ট্যান্ড।

এই চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং যন্ত্রাদি চিকিৎসাবিদ দলকে ঘটনাস্থলে গিয়ে সব ধরণের পশুচিকিৎসা দিতে ও জরুরি অবস্থা পরিচালনা করতে সাহায্য করছে।

মোবাইল ক্লিনিক টিমে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, একজন ভেটেরিনারি সার্জন এবং একজন কম্পাউন্ডার বা ড্রেসার থাকেন, যারা একসাথে ভ্রমণ করেন এবং সরাসরি কৃষকের বাড়ি বা খামারে গিয়ে চিকিৎসা প্রদান করেন।

এই মোবাইল ক্লিনিকগুলি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দ্রুত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে উল্লেখ করে মানিকগঞ্জ সদরের ইউএলও ডা. এম আজিজুল হক বলেন, "কৃষকরা এখন তাদের গবাদিপশুদের জীবননাশের হুমকি থেকে বাঁচাতে পেরে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।"

চিকিৎসার পাশাপাশি ক্লিনিকগুলি গবাদিপশুদের পর্যবেক্ষণ এবং টিকাদান কর্মসূচিও পরিচালনা করছে।