শিরোনাম
ঢাকা, ৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ)-তে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস, ২০২৫ উদযাপিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বিএমইউ’র বি ব্লক ফোয়ারার সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি এরপর টিএসসি, ডি ব্লক ও সি ব্লক হয়ে কেবিন ব্লকের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে বেলুন উড়িয়ে র্যালিটির শুভ উদ্বোধন করেন প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন- কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার ও শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান।
এতে সভাপতিত্ব করেন শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল করিম।
র্যালিতে শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ ও ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্ট ও নার্সরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও হেমাটোলজি সোসাইটি অফ বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দও এতে অংশ নেন।
এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- ‘সকলের সম্মলিত প্রচেষ্টা, থ্যালাসেমিয়া রোগীর সু-চিকিৎস’া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে গণমানুষকে সচেতন করাসহ প্রতিরোধের পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য স্কুল পর্যায়ে সচেতনেতা ছড়িয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তরোগ সংক্রান্ত গবেষণাকে তরান্বিত করা হয়েছে। বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট (বিএমটি) সেন্টার চালুর কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। ইতোমধ্যে এই বিষয়টি একনেকে পাশ হয়ে গেছে। পূর্ণাঙ্গভাবে বিএমটি চালু হলে, রক্তরোগ সংক্রান্ত অনেক রোগীকে চিকিৎসার জন্য আর বিদেশে যেতে হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি জেনেটিক ডিজিজ। এই রোগ প্রতিরোধে থ্যালাসেমিয়ার দুই বাহকের মধ্যে বিবাহ বন্ধ করা প্রয়োজন। স্ক্রীনিংয়ের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক চিহ্নিত করা সম্ভব। আবার গর্ভাবস্থায়ও অনাগত শিশুটি থ্যালাসেমিয়ার রোগী কি না, তা চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সর্বোপরি সকল থ্যালাসেমিয়া রোগীর সঠিক, উন্নত ও সহজ চিকিৎসা-সেবাকে নিশ্চিত করতে হবে।
শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল করিম বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগীর চিকিৎসার নতুন আশার আলো হলো, রক্তের পাশাপাশি ওষুধ দিয়েও রোগীদের চিকিৎসা-সেবা শুরু হয়েছে এবং ওষুধ দিয়ে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি জন্মগত রোগ। এতে রোগীরা রক্তশূন্যতায় ভোগে। অনেক সময় রক্তের অভাবে রোগী মারা যায়। এই ধরণের রোগীদেরকে সুস্থ করার জন্য, বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন করা প্রয়োজন- যা বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে সঠিক দাতার অভাব, চিকিৎসা-সেবার অপ্রতুলতা ও চিকিৎসা-সেবা ব্যয় বহুল হওয়ায় (বিএমটি) করা সম্ভব হয় না। তাই রোগীদেরকে সমগ্র জীবন রক্তের ওপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকতে হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন। কিন্তু নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন জটিলতায় রোগী পুরোপুরি সুস্থ জীবন পায় না।
ডা. আনোয়ারুল বলেন, বাংলাদেশে ৬০ থেকে ৮০ হাজার থ্যালাসেমিয়ার রোগী রয়েছে। ৬ থেকে ১০ রোগী প্রতি বছর জন্ম নিচ্ছে। দেশে থ্যালাসেমিয়া বাহকের সংখ্যা দেড় থেকে দুই কোটি। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে দুই বাহকের মধ্যে বিবাহ বন্ধ করতে প্রয়োজনে সরকারকে আইন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যায়ের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের বহির্বিভাগে প্রতি মাসে প্রায় ৫ শত শিশু রোগীকে চিকিৎসা-সেবা দেওয়া হচ্ছে।
ডা. আনোয়ারুল বলেন, আজকের দিবসের বিশেষত্ব হলো, বিএমইউতে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ ঐক্যবদ্ধভাবে চিকিৎসা-সেবা দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।