বাসস
  ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ২১:০৮

এয়ারবাস ইস্যুতে জার্মান রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ নাকচ করলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ফাইল ছবি

ঢাকা, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন আজ বুধবার বলেছেন, বিমান কেনার যেকোনো সিদ্ধান্তের ফলে ইউরোপের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রভাবিত হবে না। এয়ারবাসের পরিবর্তে বোয়িং বেছে নেওয়া হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং জিএসপি-সম্পর্কিত আলোচনার ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলে জার্মান রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যও খারিজ করে দিয়েছেন তিনি।

আজ বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি বিশ্বাস করি না যে, কোনো বাণিজ্যিক চুক্তির ফলে আমাদের সামগ্রিক সম্পর্ক প্রভাবিত হবে।

উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্রদূতরা স্বাভাবিকভাবে তাদের দেশের বাণিজ্যিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো প্রচার করেন। তবে, বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন এবং জাতীয় প্রয়োজন বিবেচনায় ক্রয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

তিনি আরো বলেন, যেকোনো রাষ্ট্রদূত স্বাভাবিকভাবেই তার দেশের পণ্যের প্রচারের চেষ্টা করবেন, এটাই স্বাভাবিক এবং এটি তার দায়িত্বেরও অংশ। তিনি তার দায়িত্ব পালন করেছেন।

তৌহিদ হোসেন আরো বলেন, বাংলাদেশ বাইরের চাপ বা মন্তব্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে না।

তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— আমাদের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের প্রয়োজনীয়তা এবং বহরের আকারের ওপর ভিত্তি করে কী নির্ধারণ করবেন, সেটি। আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামতের বাইরে যাব না, অন্যরা কী বলবে তার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেব না।

এর আগে দিনের শুরুতে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত অনুষ্ঠান ‘ডিক্যাব টক’-এ এক প্রশ্নের জবাবে জার্মান রাষ্ট্রদূত রুডিগার লটজ বলেন, এয়ারবাস বিমান কেনার প্রতিশ্রুতি থেকে বাংলাদেশের সরে আসা ইউরোপের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে।

জার্মান রাষ্ট্রদূত বাণিজ্যিক লেনদেনে পূর্বাভাসের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ইউরোপ বাংলাদেশের বড় ধরনের কেনাকাটার সিদ্ধান্তগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকে।

তিনি বলেন, জার্মানি বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে এবং আশা করে যে— এই সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে যে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে অব্যাহত রয়েছে, তা বজায় থাকবে।

ঢাকার এয়ারবাস বিমান না কেনার সিদ্ধান্ত দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, জার্মানি বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদার এবং আমরা মনে করি- আমাদের সঙ্গে সেই অনুযায়ী আচরণ করা হয়েছে। ব্যবসায়িক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্যতা অপরিহার্য।

রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, বাণিজ্যিক পছন্দগুলো প্রায় সময়ই বৃহত্তর সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।

তিনি আরো বলেন, এয়ারবাস কোম্পানি অসাধারণ এয়ারক্রাফট তৈরি করে। যদিও আমি এখানে বিমান শিল্পের প্রতিনিধি হিসেবে আসিনি। জিএসপি সংক্রান্ত আলোচনা প্রভাবিত হতে পারে এবং বিমান কেনার মতো সিদ্ধান্তগুলো অনিবার্যভাবে কিছু প্রভাব ফেলে। তবে এটা নিশ্চিত নয়, বরং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সামগ্রিক মেজাজের ওপরেই প্রভাব পড়ে।

ক্রয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন, এ বিষয়ে জোর দিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ব্যবসায়িক পছন্দ স্বাভাবিকভাবেই কূটনৈতিক ধারণাকে প্রভাবিত করে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। কিন্তু ব্যবসায়িক পছন্দ সবসময় বৃহত্তর পরিবেশ তৈরি করে। তবুও, আমরা উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থে ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখব।

বিশ্বের দুই বড় বিমান নির্মাতা যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং ও ইউরোপের এয়ারবাসের মধ্যে এক ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে, যেহেতু তারা উভয়েই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আসন্ন বিমান কেনার প্রতিযোগিতায় রয়েছে।

বিমান বাংলাদেশের টেকনো-ফিন্যান্সিয়াল কমিটি বর্তমানে দু’টি প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে— এয়ারবাসের ১০টি এ৩৫০ ওয়াইড-বডি ও ৪টি এ৩২০নিও ন্যারো-বডি বিমান এবং বোয়িংয়ের ১০টি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ও ৪টি ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের প্রস্তাব।