বাসস
  ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:২১
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৪১

বিমান ইস্যুতে বাস্তবতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়নের আহ্বান এয়ারবাসের

এয়ারবাসের আন্তর্জাতিক বিভাগের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াউটার ভ্যান ভার্স। ছবি : বাসস

ঢাকা, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচলে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবৃদ্ধির ধাপে প্রবেশ করায়, বিমান যেন তাদের বহরবিষয়ক সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ও কারিগরি যোগ্যতার ভিত্তিতে নেয়— এয়ারবাস এমন আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তারা চায় এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া তথ্যভিত্তিক ও ন্যায্য থাকুক।

ঢাকা সফরকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এয়ারবাসের আন্তর্জাতিক বিভাগের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াউটার ভ্যান ভার্স বলেন, তিনি আশা করেন যে— বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টেকনোলজি, আর্থিক মূল্যায়ন পেশাদার ও বস্তুনিষ্ঠ থাকবে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আশা করি মূল্যায়ন প্রস্তাবগুলো যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে হবে। আমরা চাই সিদ্ধান্তটি বাণিজ্যিক, প্রযুক্তিগত এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির মূল্যের ওপর ভিত্তি করে বাস্তবসম্মত হোক।’

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন এয়ারবাস দক্ষিণ এশিয়ার হেড অব কাস্টমার অ্যাকাউন্টস এডওয়ার্ড ডেলাহায়ে।

বাংলাদেশের বিমান চলাচলের প্রবৃদ্ধিকে ‘বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী’ হিসেবে উল্লেখ করে ভার্স বলেন, বাংলাদেশ একটি ‘শক্তিশালী উন্নয়ন পর্যায়ে’ রয়েছে এবং আকাশপথে সংযোগ অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে আরো গতিশীল করবে।

তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ যাত্রী চলাচল করে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ৮৫ লাখ যাত্রীতে পৌঁছানো। অর্থাৎ বছরে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি— যা বৈশ্বিক গড়ের প্রায় দ্বিগুণ।’

মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভার্স মনে করেন, এ চাহিদা পূরণের উপযুক্ত অবস্থানে রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এ প্রবৃদ্ধি ধরার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং নতুন রুট চালুর মাধ্যমে দেশকে আরো বেশি রাজস্ব এনে দিতে পারে।’

নিজেদের ডেলিভারি স্লট আসার আগেই তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে এয়ারবাস নিশ্চিত করেছে যে, তারা বিমান বাংলাদেশের জন্য লিজের মাধ্যমে বিমান সংগ্রহে সহায়তা প্রস্তাব করেছে।

এডওয়ার্ড বলেন, হ্যাঁ, আমরা সব গ্রাহকের ক্ষেত্রেই এটা করি। নিজেদের ডেলিভারির আগেই সক্ষমতা জোগাতে আমরা সমাধান তৈরি করতে সহায়তা করতে পারি।

ভ্যান ভার্স আরো বলেন, যদি বিমান এয়ারবাসকে বেছে নেয়, তাহলে আমরা কম সময়ের জন্য লিজিং কোম্পানিগুলোকে বোঝানোর চেষ্টা করবো, যাতে তারা বিমান দেয়। আমরা নিজে লিজদাতা নই, তবে কোনো লিজদাতার কাছে যা আছে তার ভিত্তিতে আমরা সহায়তা করবো।

প্রস্তুতকারকের পণ্য পোর্টফোলিও বর্ণনা করে ভ্যান ভার্স বলেন, এয়ারবাস ‘বাণিজ্যিক বিমানের দিক থেকে যদি শীর্ষ অবস্থানে নাও থাকে, তবে খুব শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে’, যার মধ্যে রয়েছে একক-আইল, ওয়াইড বডি, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ এবং হেলিকপ্টার প্ল্যাটফর্ম।

তিনি বিমানের আঞ্চলিক ও মাঝারি দূরত্বের প্রয়োজনের জন্য এ৩২১ঞ-কে স্বাভাবিকভাবে উপযোগী বিমান হিসেবে তুলে ধরে বলেন, সেপ্টেম্বরে আমরা ৭৩৭-এর ডেলিভারির আগের সংখ্যাকে অতিক্রম করেছি। এখন পর্যন্ত বোয়িংয়ের ৭৩৭ সিরিজের তুলনায় এয়ারবাসের এ৩২০ পরিবারভুক্ত বিমানই বেশি সরবরাহ করা হয়েছে।

তিনি এটিকে অত্যন্ত সফল উড়োজাহাজ, যা সিঙ্গেল-আইল প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হিসেবে বর্ণনা করেন।

দূরপাল্লার লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে এ৩৫০-৯০০ বা এ৩৫০-১০০০-কে অতুলনীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদেও দূরপাল্লার শীর্ষস্থানীয় বিমান হলো এ৩৫০, দুটি সংস্করণে—৯০০ এবং ১০০০ এবং অবশ্যই এর ফ্রেইটার সংস্করণও আছে... ঢাকা থেকে আপনি যুক্তরাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ শহরে, লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত, উড্ডয়ন করতে পারবেন এবং এয়ারলাইন যেখানে যেতে চায়— এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতেও পৌঁছানো সম্ভব।

ডেলাহায়ে বলেন, বাংলাদেশের বাজার সম্ভাবনা বুঝতে আলাদা মডেলিংয়ের দরকার নেই। তিনি বলেন, বাজার বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই, এটা চোখের সামনেই স্পষ্ট। যখন এমিরেটস, কাতার, সৌদিয়া— সবাই ৭৭৭ নিয়ে আসে, কুয়েতের ফ্লাইট আগেই আছে, মানে বাজারটা বড়।

এয়ারবাস চালু করলে প্রশিক্ষণ বা রক্ষণাবেক্ষণের জটিলতা বাড়বে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে এডওয়ার্ড ব্যাখ্যা করেন, এয়ারবাসের ককপিট সাধারণত স্থানান্তর খরচ অনেক কমিয়ে দেয়।

ভ্যান ভার্স বলেন, এয়ারবাস সম্পূর্ণ এয়ারবাস অথবা মিশ্র বহর সমর্থন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। 

তিনি বলেন, যদি বিমান মিশ্র বহর বেছে নেয়, আমরা প্রস্তুত। অনেক এয়ারলাইন্স মিশ্র বহর পরিচালনা করে।

ভ্যান ভার্স বলেন, এয়ারবাস কেবল বিমান বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করছে না, বরং বাংলাদেশের বিমান চলাচল ব্যবস্থাকে সমর্থন করার জন্য আরো বিস্তৃত সম্পৃক্ততার পরিকল্পনা করছে।

তিনি সক্ষমতা বৃদ্ধি, এমআরও (রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও পুনর্নির্মাণ) অংশীদারিত্ব, নিয়ন্ত্রক সহযোগিতা এবং দক্ষতা উন্নয়ন বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং উদাহরণস্বরূপ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এভিয়েশন সেফটি এজেন্সির মধ্যে সহযোগিতায়ও সহায়তা দিতে চাই, নিয়ন্ত্রক দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন, তেমনি ফ্লাইট সেফটি, প্রশিক্ষণ এবং সার্টিফিকেশন ক্ষেত্রেও।