শিরোনাম

ঢাকা, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : রাজনীতিতে নারীদের বিরুদ্ধে অনলাইন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতদ্বয়। তারা বলেছেন, গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ সুরক্ষিত রাখতে ডিজিটাল পরিসরে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
আজ রাজধানীর নরওয়ের রাষ্ট্রদূত ভবনে নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে এবং ইউএন উইমেনের সহযোগিতায় আয়োজিত ‘পাওয়ার উইদাউট ফিয়ার: এন্ডিং ডিজিটাল এন্ড জেন্ডার-বেস্ড ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন ইন পলিটিক্স’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের সংলাপে তারা এসব কথা বলেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হোকোন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন বলেন, ডিজিটাল পরিসর এখন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এবং নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এটিকে নিরাপদ করে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র, টেকসই উন্নয়ন ও স্থায়ী শান্তির জন্য নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ অপরিহার্য। ডিজিটাল হয়রানি, চরিত্রহনন, হুমকি বা শারীরিক সহিংসতার মাধ্যমে যখন নারীদের কণ্ঠ রোধ করা হয়, তখন এর ক্ষতিকর প্রভাব পুরো সমাজের ওপর পড়ে।
তিনি ডিজিটাল সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত সুরক্ষা, উন্নত অনলাইন নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অপরাধীদের জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং নারীদের নির্ভয়ে রাজনীতিতে অংশগ্রহণে সক্ষম করতে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেঙ্গলি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, গত বছরের ঐতিহাসিক ঘটনাবলিতে বাংলাদেশের নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাদের অংশগ্রহণ রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বে সমতার আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট করেছে। চলমান গণতান্ত্রিক উত্তরণে সেই প্রত্যাশা প্রতিফলিত হবে এবং সব পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে—এটাই প্রত্যাশা।
‘নারী ও কন্যাশিশুর বিরুদ্ধে সব ধরনের ডিজিটাল সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন’ প্রতিপাদ্যে বৈশ্বিক ‘১৬ দিনের কর্মসূচি’ উপলক্ষে আয়োজিত এ সংলাপে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, তরুণ নারী নেত্রী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন সহযোগী, কূটনীতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
‘ফিশবোল’ পদ্ধতিতে পরিচালিত আলোচনায় রাজনীতিতে নারীরা যেসব বাড়তে থাকা হুমকির মুখে পড়ছেন—যেমন অনলাইন হয়রানি, ভুয়া তথ্য ছড়ানো, ভয়ভীতি প্রদর্শন, সাইবার স্টকিং, ডক্সিং ও সংঘবদ্ধ মানহানিকর প্রচার—এসব বিষয় উঠে আসে, যা অনেক ক্ষেত্রে অফলাইন সহিংসতাতেও রূপ নিচ্ছে।
অংশগ্রহণকারীরা বলেন, এসব আক্রমণ নারীদের মানসিক, রাজনৈতিক ও পেশাগত জীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং ক্রমেই অনেক নারীকে জনজীবন ও রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
তারা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, ডিজিটাল সহিংসতা প্রতিরোধ ও নারী নেত্রীদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিজ নিজ কর্মসূচিতে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সুপারিশের মধ্যে ছিল—আইনি কাঠামো জোরদার, বিশেষায়িত অভিযোগ গ্রহণ ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা গড়ে তোলা, নারী রাজনীতিকদের জন্য সাইবার নিরাপত্তা ও ডিজিটাল সক্ষমতা প্রশিক্ষণ, ভুক্তভোগীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা সম্প্রসারণ এবং শিক্ষাক্রমে ডিজিটাল সাক্ষরতা ও অনলাইন শিষ্টাচার অন্তর্ভুক্ত করা।
এ ছাড়াও রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করে ক্ষতিকর সামাজিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
সমাপনী বক্তব্যে ইউএন উইমেনের প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিং রাজনৈতিক দলগুলোর নারী নেত্রীদের নিয়ে একটি আন্তঃদলীয় নারী ককাস গঠনের প্রস্তাব দেন, যাতে রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে নারী অধিকার ও জেন্ডার সমতার বিষয়ে সমন্বিত ভূমিকা নেওয়া যায়।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতিসংঘ বর্তমানে একটি নির্বাচনী সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে, যেখানে নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড সরকার সহযোগিতা দিচ্ছে।
ইউএনডিপির নেতৃত্বে ইউএন উইমেন ও ইউনেস্কোর অংশগ্রহণে এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার, নাগরিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করার কাজ চলছে।
এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতিসংঘের প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন মিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বলা হয়েছে—অনলাইন ও অফলাইন উভয় পরিসরেই নারীরা যখন নির্ভয়ে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে পারবেন, তখনই প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র বিকশিত হবে।