বাসস
  ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:৪৪

যশোর মুক্ত দিবস আগামিকাল 

ফাইল ছবি

-মো. সাইফুল ইসলাম-

যশোর, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস): আগামিকাল ৬ ডিসেম্বর, যশোর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর দেশের প্রথম জেলা হিসেবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দখলমুক্ত হয়েছিল যশোর। বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনী ও মিত্রবাহিনীর তীব্র প্রতিরোধে যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় পাকিস্তানী সেনারা। যশোরের আকাশে ওড়ে বিজয়ী বাংলাদেশের রক্ত-সূর্যখচিত গাঢ় সবুজ পতাকা।

যশোর মুক্ত দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে আগামিকাল শনিবার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন।

এ উপলক্ষে শনিবার সকাল ১০টায় যশোর টাউন হল মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হবে। সকাল সোয়া ১০টায় বেলুন, ফেস্টুন ও শান্তির প্রতিক পায়রা ওড়ানো হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় একই স্থান থেকে বের করা হবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে আবার একই স্থানে গিয়ে শেষ হবে।

যশোর মুক্ত দিবসের পটভূমি: ১৯৭১ সালের ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। একই সময়ে মিত্র বাহিনী সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালাতে থাকে। ক্রমাগত তীব্র আক্রমনে পর্যুদস্ত পাক সেনারা ৫ ডিসেম্বর থেকে যশোর সেনানিবাস ছেড়ে খুলনার দিকে পালাতে শুরু করে। ৬ ডিসেম্বর যশোর সেনানিবাস পুরোপুরি পাকিস্তান বাহিনীর দখল মুক্ত হয়। 

এর আগে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ যশোর শহরে বের হওয়া মুক্তিকামী জনতার মিছিলে পাকিস্তান বাহিনী গুলি চালালে শহীদ হন চারুবালা কর। ২৬ মার্চ পাক বাহিনী তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য মশিয়ুর রহমানকে তার বাসভবন থেকে ধরে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ২৯ মার্চ যশোর শহর ছেড়ে সেনানিবাসে ঢুকে যায় পাকবাহিনী। ৩০ মার্চ যশোর সেনানিবাসের বাঙালি সৈনিকরা বিদ্রোহ করেন। ৩০ ও ৩১ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা-জনতা মিছিলসহকারে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলা চালিয়ে সকল রাজন্দীদের মুক্ত করে।

মূলত জুলাই মাস থেকে মুক্তিযুদ্ধের গতিধারা পাল্টে যায়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধারা যশোর শহরসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়ে পাক বাহিনীর অবস্থানগুলোতে প্রচণ্ড আক্রমণ চালাতে শুরু করে। প্রথম দিকে যশোরস্থ ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী। পরে মেজর আবুল মঞ্জুর কমান্ডার নিযুক্ত হন। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশীপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে পাকিস্তান বাহিনীর সাথে যুদ্ধে ৫ সেপ্টেম্বর শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ।

১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে যশোর সেনানিবাস দখলের জন্য চুড়ান্ত অভিযান শুরু করে। চৌগাছায় পাক বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি ঘিরে ফেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। জগন্নাথপুর ও সিংহঝুলিতে সর্বাত্মক যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে বিমান ও ট্যাংক-এর ব্যবহার হয়। যুদ্ধেও একপর্যায়ে গুলি শেষ হয়ে গেলে হাতাহাতি যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে পরাজয়ের পর থেকে মূলত পাকিস্তানী হানাদারদের মনোবল ভেঙে পড়ে। চৌগাছা শত্রুমুক্ত যশোর সেনানিবাস দখলের জন্য অগ্রসর হয় মুক্তিবাহিনী  ও মিত্র বাহিনী। 

যশোর সেনানিবাস তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনী। ৫ ডিসেম্বর সেনানিবাসের কাছে মনোহরপুর গ্রামে উভয়পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই হয়। একপর্যায়ে অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পাকিস্তানী বাহিনী যশোর সেনানিবাসের ভেতরে আশ্রয় নেয়। সেখানেও টিকতে না পেরে তারা যশোর সেনানিবাস খালি করে খুলনার দিকে পালিয়ে যায়। ৬ ডিসেম্বর যশোর সেনানিবাস পুরোপুরি পাকিস্তান বাহিনীর দখল মুক্ত হয়। যশোর শহরে প্রবেশ করে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনী। মুক্তির আনন্দে শহরে বীর মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে। পাড়া মহল্লায় খন্ড খন্ড আনন্দ মিছিল বের হয়।