বাসস
  ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:৫৩

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ভিটে হারা দুই শতাধিক পরিবার 

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ছবি: বাসস

শফিকুল ইসলাম বেবু 

কুড়িগ্রাম,  ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : অসময়ে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে এরই মধ্যে দুই শতাধিক বসতভিটা, ফসলি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

জেলার রৌমারী উপজেলার চর শৌলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছাইদুর রহমান দুলাল জানান, গত ৫দিনে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে সোনাপুর গ্রামের ১৬৭ পরিবার, সুখের বাতি গ্রামের ৬৮ পরিবার এবং হবিগঞ্জ এলাকার ৫০ পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখনও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

তিনি জানান, ভাঙন কবলিতরা আশ্রয়ের খোঁজে প্রতিদিন তার বাড়িতে ভিড় করছে। কোথায় তাদের আশ্রয় দেবেন এ নিয়ে তিনি ভীষণ চিন্তিত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা শহর থেকে চিলমারী হয়ে ২২ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র তীরে সুখের বাতিগ্রাম। ওই গ্রামের বাদশা, আবুল, জহুর আলী, আয়নাল, কবির, মজিদ, আমজাদ, জয়নাল, শাহের আলী, জুরানসহ ৬৮ জন নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ঠিকানা বদলের অপেক্ষায়। তাদের একটাই আর্তনাদ ‘কাই আছেন বাহে হামাক বাঁচান’।

একই অবস্থা সোনাপুর গ্রামের আয়নাল, তরীফ উল্লাহ, রেজেক ফকির, আজিজ, জায় ভানু, রশিদ, রফিকুল, রাজ্জাক, খোকা সহ ১৬৭ জনের।

কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, কুড়িগ্রামের ১৬টি নদনদীর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ১৯৫৪ সাল থেকে নদীগুলোর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদীগুলোর উৎস স্থল উজানে ভারতে হওয়ায় সবসময় বিশেষ করে বন্যার সময় পানির সঙ্গে পলি এসে নদীর তলদেশ উঁচু হচ্ছে এবং অসংখ্য ডুবো চরের সৃষ্টি হচ্ছে। এই ডুবো চরে উজান থেকে পানি এসে আঘাত পেয়ে নদীর তীরগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। ফলে মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে। 

তিনি বলেন, সরকার ভাঙন প্রতিরোধে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। কিন্তু নদীর ডুবো চরগুলো অপসারণ করে নদীর স্বাভাবিক গতিপথের দিকে নজর না দেয়ায় ভাঙন চলছে। গত ১০ বছরে এক লাখ মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। 

নদী শাসন ও চরের জীবনমান উন্নয়নে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতো চর বিষয়ক মন্ত্রণালয় দ্রুততম সময়ে গঠন করে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, নদের ৩৩টি পয়েন্টে ভাঙন চলছিল। তবে আকস্মিক পানি বাড়ার কারণে ওই পয়েন্টগুলোর ভাঙনের পরিধি বেড়েছে। তবে আড়াইশো কেজি বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করা হচ্ছে।