বাসস
  ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪৭

অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণে গাংনীতে ৫০ হাজার গরু-ছাগলকে টিকা দেওয়া হবে 

ছবি : সংগৃহীত

খুলনা, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): অ্যানথ্রাক্স রোগ নিয়ন্ত্রণে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত এলাকায় ৫০ হাজার গরু-ছাগলকে টিকাদানের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এছাড়াও এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ অঞ্চলে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু কীভাবে ছড়িয়েছে তাও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মীরা তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ ও অসুস্থ গবাদি পশুকে চিকিৎসা দিতে পরামর্শ দিচ্ছেন।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মেহেরপুরের গাংনী ও সদর উপজেলায় আগে থেকেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব ছিল। এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে নতুন করে ছড়িয়েছে। খুলনা বিভাগের মেহেরপুর জেলায় প্রতিমাসে গড়ে ২০ জন মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হচ্ছে। বেশি শনাক্ত হয়েছে এ জেলার গাংনী উপজেলায়। অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হওয়া অপর দুটি জেলা হচ্ছে কুষ্টিয়া ও সাতক্ষীরা। 

আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষ জানায়, অ্যানথ্রাক্স রোগ সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায়। আগস্ট মাসে ৪৫ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ৩৩ জন, অক্টোবরের ১২ তারিখ পর্যন্ত ১৮ জন এবং সদর উপজেলায় সেপ্টেম্বর মাসে ৫ জনের শরীরে এর উপসর্গ পাওয়া গেছে।  এ রোগ নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞ দল প্রতি মাসে গাংনী পরিদর্শন করছেন। 

খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. মুজিবুর রহমান বাসসকে বলেন, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। এ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারীরা তাৎক্ষণিকভাবে সিভিল সার্জনকে অবহিত করছেন। এ রোগে এ পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। তবে আক্রান্তরা চর্মরোগে ভুগছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এলাকাবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উপসর্গ দেখা দেওয়া গরু ছাগল জবাই বা বিক্রি করা যাবে না। মৃত পশুকেও স্পর্শ করা যাবে না। মৃত পশুকে যত দ্রুত সম্ভব মাটিতে পুতে ফেলতে হবে। 

তিনি জানান, আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবার যাতে ভয় না পান সেজন্য এলাকায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করা হচ্ছে। 

প্রাণিসম্পদ বিভাগ খুলনার পরিচালক ডা. মো. গোলাম হায়দার বাসসকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার সংক্রমিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি দল মনিটরিং করছে। দুটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। গাংনীতে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে ৫০ হাজার গরু-ছাগলকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্তের পরিমাণ নিম্নমুখী করার চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, এ রোগে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে আক্রান্ত এলাকায় গরু ছাগলকে ভ্যাকসিন দিতে এলাকার সচেতন মহলকে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হয়ে মৃত গরু ছাগলের মাংস বিক্রি না করে মাটিতে পুঁতে ফেলার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু মাটিতে ১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। ঘাস খাওয়ার সময় গরু ছাগলের মুখ থেকে অ্যানথ্রাক্স মানব দেহে প্রবেশ করে। জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও লোম ঝরা এ রোগে আক্রান্ত প্রাণীর প্রধান লক্ষণ। এ ব্যাপারে দীর্ঘ মেয়াদি প্রতিকার প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে জনস্বাস্থ্যের জন্য সংকট তৈরি হবে।