বাসস
  ২৯ মে ২০২৫, ২০:০৮

দুর্গম চরাঞ্চলে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে কিং আব্দুল্লাহ 

ছবি : বাসস

আল-আমিন শাহরিয়ার

ভোলা, ২৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : জেলার সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের তেতুলিয়া নদীর পাড়ে পাঙ্গাসিয়া গ্রাম। গ্রামের একটি খালে ভাসমান ‘কিং আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ মোবাইল হসপিটাল’। এই হাসপাতালে রোগ নির্ণয়, প্রাথমিক চিকিৎসা এবং অস্ত্র পাচারের মতো জটিল সেবা দেয়া হচ্ছে প্রতিদিন। হাসপাতালটিতে সব কিছুই মিলছে বিনামূল্যে। হাতের নাগালে এমন মোবাইল হাসপাতাল পেয়ে খুশি দুর্গম চরের হতদরিদ্র বাসিন্দারা। 
হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা  নিতে আসা পাঙ্গাসিয়া চরের কিষানী আমেনা বেগম, সুফিয়া, কৃষক সিরাজুল, মোহাব্বত মাঝি ও ওহাব মিয়ার সাথে কথা হয়। তারা সবাই খুশি। তারা বলেন, জীবনের প্রথম আমরা বিনামূল্যে সঠিক চিকিৎসা পেয়েছি। এই হাসপাতালে ডাক্তার স্যাররা খুব ভাল ব্যবহার করেন। ভাল চিকিৎসাও দেন। বিনামূল্যে ঔষধও দেন। 

ভোলার দুর্গম এলাকার মানুষের কাছে চিকিৎসাসেবা যেন সোনার হরিণ। এর আগে স্থানীয়ভাবে সরকারি কিংবা বেসরকারি, কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পেতো না তারা। দ্বীপ জেলা ভোলার দুর্গম চরের প্রান্তিক মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়াই হচ্ছে ‘কিং আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ মোবাইল হসপিটাল -এর প্রধান উদ্দেশ্য। একই ধরনের পাঁচটি জাহাজকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা উপযোগী করে দেশের উপকূলীয় ১২ টি জেলায় বিনামূল্যে ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে এই ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল। সারাবছর দেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘুরে ঘুরে নতুন নতুন চরে নোঙর করে স্বাস্থ্যসেবা দেয় এই হাসপাতাল। আর হাতের নাগালে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে খুশি প্রত্যন্ত এলাকার  মানুষ। 

হাসপাতালের সুপারভাইজার রমিজ রিমন বাসসকে জানান, ২০২৩ সালের ২৩ জুলাই বাংলাদেশে এই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। সেই থেকে উপকূলীয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় তারা নিয়োজিত।  চলতি বছরের ১৬ মে থেকে তারা ভোলার পশ্চিম ইলিশা খালে ভিড়ে সেখানকার ‘ভাষা শহীদ স্মৃতি’ কলেজ মাঠে মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। যা আগামী তিন মাস চলবে। 

তিনি বলেন, এই তিনমাস ভোলা সদরের চরাঞ্চল ও দৌলতখান উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত করে কোনো চরের তালিকা করা হয়নি। এই দুই উপজেলার সব চরের বাসিন্দাদের জন্য চিকিৎসাসেবা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এখানে ৩ জন মেডিকেল অফিসারসহ মোট ৩৫ জন স্টাফ কর্মরত আছেন। এখানকার কাজ শেষ করে অন্য কোনো উপকূলে স্বাস্থ্যসেবা দিতে যাবে এই হাসপাতাল। 

রিমন আরো জানান, এই কার্যক্রমের অধীনে আরো চারটি হাসপাতাল আছে। এই পাঁচটি হাসপাতাল উপকূলীয় ১২ টি জেলার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো; হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, ভোলা, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, খুলনা, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর।  অপর চারটি ভাসমান হাসপাতাল বর্তমানে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলার চরাঞ্চলে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে।

কর্তৃপক্ষের নিয়মানুযায়ী ভাসমান এই হাসপাতালগুলো এসমস্ত জেলার নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে তিনমাস করে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে থাকে। 

হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. সঞ্জীব প্রামাণিক বাসসকে বলেন,  সৌদি আরবের  সাবেক বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ ভাসমান ভ্রাম্যমাণ এই হাসপাতালটির মূল উদ্যোক্তা। তার মহানুভবতায় এটি চলমান রয়েছে। এখানে গরীব,অসহায় ও চরাঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। প্রতিদিন এই ক্যাম্পে গড়ে আড়াইশ নারী-পুরুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি। এখানে নারীদের গর্ভ পরবর্তী সমস্যাগুলোর চিকিৎসাই বেশি দেয়া হয়।  

ভোলার সিভিল সার্জন ডা. মনিরুল ইসলাম বাসসের সাথে আলাপকালে বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসাসেবায় ভাসমান এই হাসপাতাল একটি চমৎকার ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিশেষ করে উপকূলীয় বিচ্ছিন্ন জনপদের জন্য এটি আশীর্বাদ বলে মনে করি।’ 

ভোলার সামাজিক সংগঠন বদ্বীপ ফোরামের আহ্বায়ক মীর মোশাররফ অমি বলেন, ‘উপকূলবাসীর জন্য সার্বক্ষণিক উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হাতের নাগালে এ ধরনের আরো হাসপাতাল চালু করা দরকার।’ 
জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুবাশ্বির উল্যাহ চৌধুরী বলেন, ‘ভাসমান এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নি:সন্দেহে চরের গরীব মানুষের জন্য একটি আশার প্রদীপ।’

জানা যায়, সৌদি আরবের প্রাক্তন বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ ভাসমান একই ধরনের পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল তৈরি করে দিয়েছেন। বর্তমানে এটির আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে সৌদি আরব। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এগুলোকে মনিটরিং করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, আগামী পাঁচ বছর পর ভ্রাম্যমাণ এ জাহাজগুলো পুরোপুরি  সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে চলে যাবে।